আওয়ামীলীগের শক্ত ভীত গড়তে পারেনি বর্তমান এমপি এডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন সংস্কারপন্থী নেতা বকুল কে নিয়ে বিপাকে বিএনপি

২৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:১৬ এএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৪ এএম


আওয়ামীলীগের শক্ত ভীত গড়তে পারেনি বর্তমান এমপি এডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন সংস্কারপন্থী নেতা বকুল কে নিয়ে বিপাকে বিএনপি
স্টাফ রিপোর্টার,নরসিংদী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) নরসিংদী জেলার দুটি উপজেলা বেলাব ও মনোহরদী নিয়ে নরসিংদী -৪ আসন (জাতীয় সংসদের ২০২ নং)। মনোহরদী উপজেলার ১২ টি ও বেলাব উপজেলার ০৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের এডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সর্ম্পকীয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। এই আসন থেকে ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তার বিরূদ্ধে রাস্তাঘাট সহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড কম ও দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, যোগাযোগহীনতা সহ নানা অনিয়ম দুর্র্নীতির অভিযোগ থাকার কারণে মনোহরদী ও বেলাব উপজেলায় আওয়ামীলীগের শক্ত ভীত গড়তে পারেননি তিনি । সম্প্রতি মনোহরদী পৌরসভার বর্তমান মেয়র আমিনুর রশিদ সুজন কে নিয়ে দলীয় সকল কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন করায় ক্ষুদ্ধ তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে খ্যাত সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিএনপি । আওয়ামী লীগ : আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বৃহৎ এই আসনটিতে প্রায় সব রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড কম করার অভিযোগ এলাকাবাসীর। বর্তমান সংসদ সদস্য’র বিরুদ্ধে রয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, যোগাযোগহীনতা সহ নানা অনিয়ম দুর্র্নীতির অভিযোগ। আর এই কারণে মনোহরদী ও বেলাব উপজেলায় আওয়ামীলীগ সাংগঠনিকভাবে দিনদিন গতি হারাচ্ছে এই প্রবীণ সংসদ সদস্যের জন্য। ১৯৭৫ ইং পরবর্তী সময় থেকে নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) আসনে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থানের পেছনে এমপি হুমায়ুনের ত্যাগ তীতিক্ষার কথা অস্বীকার করেন না দলীয় নেতাকর্মীরাও। যার ফলশ্রুতিতে তিনি এখান থেকে ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মন্ত্রীসভার সদস্য হওয়ার মতো শতভাগ যোগ্য নেতা বলেও মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এমপি হুমায়ুনের যোগাযোগ কমে গেছে। সক্রিয় ভাবে এলাকার রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ করেনি তিনি। স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট সংস্কার, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে তাকে তেমন পায়না বলেও অভিযোগ স্থানীদের। সম্প্রতি মনোহরদী পৌরসভার বর্তমান মেয়র আমিনুর রশিদ সুজন কে নিয়ে দলীয় সকল কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন করায় ক্ষুদ্ধ তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীরা ।এর কারন হিসেবে তারা বলছেন ভিন্ন কথা,মেয়র আমিনুর রশিদ এর বাবা তার জীবদ্ধশায় সাবেক সেনা প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী নূরউদ্দীন খান এর রাজনৈতিক অনুসারী ছিলেন । তিনি সর্বদাই ছিলেন হুমায়ুন বিরোধী । তাছাড়া অভিযোগ রয়েছে কিছুদিন পূর্বে উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনে মেয়র সুজন এর পছন্দের প্রার্থী না হওয়ায় সাধারন সম্পাদক প্রার্থী তৌহিদুল আলমকে প্রকাশ্যে মারধর করে সম্মেলন থেকে বের করে দেন । এ ঘটনায় এখনও মেয়র সুজন এর মনগড়া কমিটিকে অনুমোদন দেয়নি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি । কমিটি অনুমোদন না দিলেও তার পছন্দের সভাপতি প্রার্থী লায়ন এইচ এম ইকবাল ও সাধারন সম্পাদক প্রার্থী রাশেদুল আলম বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নিজদেরকে সভাপতি ও সেক্রেটারী পরিচয় দেন এতেও হতাশ নেতা-কর্মীরা । অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিবাহিত কেউ পদে না থাকার বিধান থাকলেও মেয়র আমিনুর রশিদ ক্ষমতাবলে ধরে রেখেছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ । এতে ক্ষুদ্ধ ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী । দীর্ঘদিন ধরে এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। সংস্কারপন্থী হিসেবে খ্যাত বিএনপির সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে নিয়ে বিপাকে বিএনপি। আওয়ামীলীগের এমপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও আভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট হওয়ায় আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির থেকে সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল মনোনয়ন পেলে এর সুফল ভোগ করতে পারে বিএনপি। তৃণমূলের দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নরসিংদী ৪ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম শুনা গেলেও একজন ছাড়া নতুন মুখদের কেউ মাঠে নেই তাদের কে শুধু ফেসবুক আর রাস্তার বিলবোর্ডে ই দেখা যায় । মাঠে না থাকলেও অনেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে লবিং গ্রুপিং করছেন মনোনয়নের পাওয়ার জন্য। তবে দলের তৃণমূলে সম্পর্ক নেই এমন ব্যক্তি মনোনয়ন পেলে মাঠ পর্যায়ে সুবিধা করা যায় না। দুধের মাছির মত মাঠে আসা রাজনীতিবীদদের দলীয় কর্মীরা পছন্দ করেন না। সংসদ সদস্য এডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে অবকাঠামোগতসহ এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। দুটি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই বৃহৎ আসনে শতভাগ উন্নয়ন সম্পন্ন করা অনেকটা কঠিন। এরপরও সরকার থেকে যতটুকু সম্ভব বরাদ্দ এনে কাজ করেছি। আর দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার প্রশ্নই আসে না, কেননা যারা দলের ত্যাগী নেতাকর্মী তারা সকলেই আমার সঙ্গে আছেন। সুজনকে আমি মেয়র বানিয়েছি তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কিছু নাই সুজন এর বাবা কার রাজনীতি করতেন সেটা জনগনই ভাল জানে। আমি তৃণমূলের রাজনীতি থেকেই নেতা হয়েছি। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাই আমার আপনজন । সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আওয়ামীলীগে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হলেন, বর্তমান সাংসদ এডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. আব্দুর রউফ সরদার, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা শিল্পপতি অহিদুল হক আসলাম সানী, মনোহরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক কাজী মাজহারুল ইসলাম । বিএনপি : নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) আসনে বিএনপির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে দীর্ঘদিন ধরে চলমান দলীয় কোন্দল নিরসনের উপর। দলটির সাবেক জনপ্রিয় এমপি ও সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে খ্যাত সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে ঘিরে নির্ভর করছে এখাকার বিএনপির রাজনীতি। দীর্ঘদিন দলের বাইরে কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও দলের তৃণমূলে রয়েছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা পেয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন তিনি। সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে মাঠে নেমে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হলেও স্থানীয় বিএনপি তাকে নিয়ে রয়েছে অনেকটা বেকায়দায়। দলের সাথে সম্পর্ক না থাকায় দলীয় কোন কর্মকান্ডে ডাকা হচ্ছে না বকুলকে। যদিও দলের একজন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নরসিংদী-৪ আসনে গণসংযোগ শুরু করেছেন এই সংস্কারপন্থী নেতা। অপরদিকে সম্প্রতি নরসিংদী প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদদের সাথে মতবিনিময় করে নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) আসনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনের কথা জানালেন কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ছাএ দলের কেদ্রীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল । দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, এই আসনের রাজনীতিতে সরদার বকুল বড় ফ্যাক্টর। বকুলকে বাদ দিয়ে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি কল্পনা করা যায় না। বিএনপির কিছু দলীয় কোন্দল নিরসন না করে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করা হলে এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরোধীতা করতে পারেন। এমন কী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন দলের কেউ। আর এই কারণে লে: কর্ণেল (অব:) জয়নাল আবেদীন আর বকুলকে এক কাতারে আনা গেলে এই আসনটি বিএনপির দখলে আসবে বলে মনে করেন তৃণমূল নেতা কর্মীরা। নরসিংদী ৪(বেলাব-মনোহরদী) আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ছাএ দলের কেদ্রীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল বলেন, আসলে নির্বাচন নিয়ে যত কথাই হোক না কেন তার আগে স্পষ্ট হওয়া দরকার নির্বাচন কালীন সহায়ক সরকার কারা থাকবে ? আর নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ থাকবে এটা এখন গুরূত্বপূর্ন বিষয়, সবকিছু ঠিক থাকলেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে ,দেশনেএী যাকে মনোনয়ন দিবেন তিনি ই এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন , তখন আর কোন গ্রুুপিং থাকবেনা । এই আসনে যারাই বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন তারা সবাই যোগ্য প্রার্থী । আমারও এই আসন থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে যদি দেশনেএী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আমাকে যোগ্য মনে করেন । নরসিংদী-৪ আসনে দলীয় সর্ম্পকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এখানে আমাদের দলে তেমন কোন্দল নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। বড় দল হিসেবে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকতেই পারে। সংস্কারবাদী নেতা সরদার বকুলকে দলের চেয়ারপারসন ডেকেছেন বলে শুনেছি কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিতে সে বিষয়ে আমরা কী করবো, এমন কোন নির্দেশনা পাইনি। এই আসনে বিএনপি দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হলেন, লে: কর্নেল (অব:) মো: জয়নাল আবেদীন ও সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ছাএদলের কেদ্রীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল। তিন জনই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মাঠে কাজ করছেন।


এই বিভাগের আরও