ইদানিং তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ার কারণ কী?

২২ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:৪২ পিএম | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৩ এএম


ইদানিং তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ার কারণ কী?
তরুণ শিল্পী আফ্রিদা তানজীম মাহির আত্মহত্যার ঠিক ছয় দিনের মাথায় খবর এলো আরেকটি আত্মহত্যার। রোববার আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে সাতক্ষীরার সাংসদ মুস্তফা লুৎফুল্লাহর ছেলে অনীক আজিজের। ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউয়ের ন্যাম ভবন থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে তার আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে পরিবার বা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানা যায়নি। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন আত্মহত্যা করেন; যাদের মধ্যে তরুণ এবং নারীদের সংখ্যা বেশি। সেই হিসাবে প্রতিবছর দেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। [caption id="attachment_1460" align="alignnone" width="1280"] ছবিঃ সংগৃহীত[/caption] বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যার দু’টি ধরন আছে– পরিকল্পিতভাবে এবং আবেগ তাড়িত হয়ে আত্মহত্যা৷ বাংলাদেশে অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনা আবেগ তাড়িত হয়ে ঘটে৷ এ কারণে তরুণ-তরুণীরাই বেশি আত্মহত্যা করেন৷ তাছাড়া নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার কারণ আমাদের আর্থ সামাজিক অবস্থা৷ নির্যাতন, ইভটিজিং, যৌতুক, অবমাননা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা না থাকা ইত্যাদি৷ কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি কেন? এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং চেয়ারপার্সন ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন: কৈশোর থেকে শুরু করে ৩০ বছর পর্যন্ত একজন মানুষ নানা ধরনের সংকট অতিক্রম করে। বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয় কিন্তু তা মোকাবেলা করার বা মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বা দক্ষতা অনেকেরই থাকে না। তাছাড়া তারা পরিবার বা আশেপাশের পরিবেশ থেকেও প্রয়োজনীয় মানসিক সাহায্য পান না। এ কারণে প্রচণ্ড মানসিক চাপ এবং হতাশা থেকে এক সময় তার কাছে মনে হয় জীবনটা অর্থহীন। তাই সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে বলে মনে করেন তিনি। [caption id="attachment_1459" align="alignnone" width="1280"] ছবিঃ সংগৃহীত[/caption] যেভাবে কমানো যেতে পারে এ প্রবণতা পরিবার বন্ধুবান্ধব এবং সামাজিক পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়া গেলে আত্মহত্যার হার অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব উল্লেখ করে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন: আমাদের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে মানুষ আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে নানা ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায় তার মধ্যে। যেমন দীর্ঘক্ষণ একা একা থাকতে পছন্দ করে, তার প্রিয় জিনিসগুলো অন্যকে দিয়ে দিতে শুরু করে ইত্যাদি। অনেকে বিভিন্ন সময় আত্মহত্যার চেষ্টাও করে। এসব লক্ষণ প্রকাশ পেলে পরিবারের উচিত তার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া। তাকে সময় দিয়ে তার সমস্যাগুলো উপলব্ধির চেষ্টা করে তা সমাধানে সহায়তা করা। প্রয়োজনে মনোবিদের সাহায্য নেওয়া। ‘‘আমাদের কাছে অনেকেই এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আসেন। তাদের বেশিরভাগই কোন নির্দিষ্ট ধরনের সমস্যা সমাধান না করতে পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে জানান। তখন যদি তাদের প্রশ্ন করি যে আপনার এ সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে আপনি আত্মহত্যা করতেন কিনা? প্রায় সব ক্ষেত্রেই উত্তর আসে ‘না’।’’ ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন: সব সমস্যার সমাধান করা যায় না। তবে এড়িয়ে যাওয়া যায়। ধরেন আপনার চলার রাস্তায় একটা গর্ত আছে। এখন আপনার যদি সামর্থ থাকে তবে আপনি সেটি ভরাট করে ফেলতে পারেন। যদি না থাকে তবে আপনি সে গর্ত এড়িয়ে একটু ঘুরে বা অন্যপথ দিয়ে যেতে পারেন। তাই সমস্যা সমাধান না করা গেলেও বিকল্পভাবে সে সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। এ চিন্তাটাই আসে না অনেকের মধ্যে। যে কারণে নিজেকে ব্যর্থ ভেবে এবং নিজের প্রতি প্রচণ্ড হতাশা থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ‘‘তাই তার আশেপাশের মানুষগুলোর উচিত তার সমস্যাটা বুঝতে পারা। সমাধান করতে না পারলেও যেন তা থেকে বিকল্পভাবে উত্তরণ ঘটানো যায় সে পথটি দেখিয়ে দেওয়া।’’ তবে সার্বিকভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রেরও কিছু দায় আছে বলে মনে করেন এ শিক্ষক। তিনি বলেন: আগে মুক্ত পরিবেশ বেশি ছিল। ছেলে-মেয়েরা ইচ্ছামত খেলাধুলা, ঘোরাফেরা করতে পারতো, আড্ডা দিতে পারতো। ফলে তাদের মনও ভালো থাকতো। কিন্তু এখন সে পরিবেশ অনেকটাই সঙ্কুচিত। বেশিরভাগ সময়ই তরুণেরা একা একা কাটায়। এতে তাদের মানসিক চাপ ও হতাশা বেড়ে যায় অনেকটা। সুতরাং রাষ্ট্রের উচিত তরুণদের জন্য সে ধরনের পরিবেশ নিশ্চিত করা; যাতে তারা আনন্দে বাঁচতে পারে।


এই বিভাগের আরও