নরসিংদীর পলাশে শীতলক্ষ্যার তীর কেটে মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়

০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৬:৪৮ এএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৫ এএম


নরসিংদীর পলাশে শীতলক্ষ্যার তীর কেটে মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়
নিজস্ব প্রতিবেদক নরসিংদীর পলাশ উপজেলা ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পাড়ের মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শতাধিক ট্রলার ভরে নদীর তীরের মাটি সংগ্রহ করছেন স্থানীয় কতিপয় মাটি ব্যবসায়ী। আর এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ইটভাটাগুলোতে। মাটি ব্যবসায়ীদের দেখাদেখি নদীর মাটি বিক্রির সাথে যুক্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরাও। তারা এখন চাষাবাদ না করে টাকার লোভে নদীর তীরের মাটি বিক্রি করছেন। এতে করে পরিবেশ বিপর্যয় ও নদী ভাঙ্গনের আশংকা করছেন এলাকাবাসী। সরেজমিনে দেখা যায়, পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা থেকে চরসিন্দুর ইউনিয়ন ও কালীগঞ্জের জামালপুর থেকে দক্ষিণ নারগানা গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদীর দুই তীরের ১৫টি স্থানে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। প্রতিটি স্পটে ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক মাটি কেটে ট্রলারে তুলছেন। পরে ট্রলার ভরে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ইটভাটাগুলোতে। পলাশ উপজেলার চরসিংন্দুর ইউনিয়নের কাউয়াদী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, অর্ধশতাধিক শ্রমিক নদীর তীর ঘেষে ফসলি জমির মাটি কাটছেন। ১০-১২টি ট্রলার বোঝাই করে মাটি অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে। এভাবে গত এক মাস ধরে এখান থেকে মাটি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মাটি কাটার কাজে নিয়েজিত শ্রমিকরা জানান, তারা মজুরির বিনিময়ে এখান থেকে মাটি কাটছেন। সারাদিনে ২০ থেকে ২৫ টি ট্রলার ভরতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই এলাকার নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া নামে এক মাটি ব্যবসায়ী এখান থেকে মাটি বিক্রি করছেন। এ ব্যাপারে নুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এটি তার পৈতৃক সম্পত্তি। এখানে ফলস হয় না বলে তিনি মাটি বিক্রি করছেন। অপরদিকে কালীগঞ্জের দক্ষিণ নারগানা গ্রামে নদীর তীরের মাটি কাটার বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, এখানে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আসাদ মিয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক মোড়ল মাটি বিক্রি করছেন। তাদের ভয়ে মাটি কাটার কাজে কেউ বাধা দিতে সাহস পাচ্ছে না। তবে মাটি কাটার বিষয়টি অস্বীকার করে আসাদ ও মানিক জানান, তারা কোন মাটি বিক্রি করছেন না। এলাকার কৃষকরাই এসব মাটি বিক্রি করছেন। এছাড়া দক্ষিন নারগানার আরেকটি স্থানে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীর জুড়ে একাধিক স্থানে বড় বড় গর্ত। জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, নদীর এসব জায়গায় কৃষকরা ফলস করতেন। কিন্তু তারা ফসল না করে মাটি বিক্রি করছেন। আশেপাশের বিভিন্ন ইটভাটার লোকেরা তাদের কাছ থেকে মাটি কিনে নিচ্ছেন। মধ্য আকাঁরের একটি ট্রলার ভরে মাটি বিক্রি করলে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তাই টাকা পেয়ে তারা মাটি বিক্রি করছেন। নদীর তীরের মাটি কাটায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, অনেকেই তো মাটি বিক্রি করছেন। প্রশাসন তো কাউকেই বাধা দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহাবুব খান ফারুক জানান, মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসন কোন কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থায়ীভাবে এটি বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমরা অনেকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়কে অবগত করেছি। কিন্তু পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। নদীর তীরের মাটি কাটারা বিষয়ে পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুসফিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে জানান, এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


এই বিভাগের আরও