নরসিংদী এখন যানজটের শহর.....!!!

০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ০৫:০৫ এএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫১ পিএম


নরসিংদী এখন যানজটের শহর.....!!!
নিজেস্ব প্রতিবেদক সমস্যার ভারে জর্জরিত নরসিংদী  শহরের একটি সহনীয় এবং বহনীয় ভবিষ্যৎ চিন্তা করা কি সম্ভব? এ রকম একটি ভবিষ্যৎ চিন্তা করতে হলে সবচেয়ে আগে যেটা নিয়ে ভাবতে হবে তা হলো নরসিংদীর  যানজট। শহর জীবন নিয়ে যে কোন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বর্তমানে  নরসিংদী বাসীর হাহাকার যানজট নিয়ে। নরসিংদীর যানজট শুধু রাস্তার সমস্যা নয়, বরং এটি অনেকগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত সমস্যার সামগ্রিক ফল ! নরসিংদীর যানজটের প্রধান কারণ - ১) অনিয়ন্ত্রিত হারে রিকশা ও অটো রিকশা বৃদ্ধি ২) বেপোরোয়া রিকশা ও  অটো রিকশা চলাচল ৩) শহর বাসীর জনসচেতনতার অভাব ৪) যথাযথ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের অবহেলা ৫) বিকল্প রাস্তার অভাব ৬) পৌর পরিকল্পনার অভাব নরসিংদীর শহরের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক হলো আরশীনগর লেভেল ক্রসিং।প্রতিদিন এই লেভেল ক্রসিং দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার এর বেশি রিকশা ,অটোরিকশা , বিভিন্ন ধরণের মালবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ি এবং রেলগাড়ি চলাচল করে এই পথ দিয়ে। কেউ সহজে এই সড়ক দিয়ে যেতে চায় না। তবু উপায় নেই। এই পথেই সবার যাতায়াত। সড়কটিতে যানজটে আটকা পড়লেই ২০-৩০ মিনিট সময় নষ্ট হয়। কখনো ৩০-৪০ মিনিট। এখানে নিত্য যানজটে নাকাল শহরবাসী। নরসিংদী শহরের ওপর দিয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। এ কারণে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত শহর। এক পাশে রয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নরসিংদী সরকারি কলেজসহ সরকারি অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ। অন্য পাশে আছে বাজার, নদীবন্দর, বাসস্ট্যান্ডসহ আবাসিক এলাকা। শহরে যাতায়াতের জন্য সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ এবং পৌরসভা মিলে পাঁচটি সড়ক নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে সওজের নির্মিত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাসাইল ও শহরের প্রধান সড়ক আরশীনগরে লেভেল ক্রসিং রয়েছে। বাসাইল ক্রসিং দিয়ে সাহেপ্রতাপ, সাটিরপাড়া পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে শহরে ঢুকতে হয়। বিকল্প সড়ক না থাকায় বেশির ভাগ যানবাহন চলাচল করে আরশীনগর লেভেল ক্রসিং দিয়ে। অথচ নতুন শিল্পকলা, বিলাসদী ও বীরপুর মসজিদের পাশে পৌরসভার সড়ক থাকলেও রেললাইনে লেভেল ক্রসিং নেই। ওই সড়কগুলো দিয়ে বৈধভাবে কোনো যানবাহন পারাপার হতে পারছে না। তবু সময় বাঁচাতে বিভিন্ন যানবাহনকে ঝুঁকি নিয়ে এসব পথেই রেললাইন পার হতে হয়। স্থানীয় লোকজন বলছেন, এই সড়কগুলোতে লেভেল ক্রসিং নির্মিত হলে শহরের প্রধান সড়কে যানবাহনের চাপ কমবে। সেই সঙ্গে সময় সাশ্রয় হবে। যানজটও কমবে। রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের নরসিংদীর ওপর দিয়ে প্রতিদিন ২৭ জোড়া ট্রেন যাওয়া-আসা করে। ডবল লাইন চালু হওয়ার পর শহরের এই লেভেল ক্রসিংটি স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থার আওতায় চলে আসে। এ কারণে গড়ে প্রতিটি ট্রেনের কারণে ১০ মিনিট গেট বন্ধ থাকে। আর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনের যাত্রাবিরতি আছে—এমন ট্রেনের বেলায় গড়ে ১৫ মিনিটের বেশি সময় গেট বন্ধ থাকে। আবার বিশেষ কারণে কখনো একটি ট্রেনকে স্টেশনে অতিরিক্ত সময় থামিয়ে রাখতে হয়। তখন আটকা পড়া ট্রেন না যাওয়া পর্যন্ত গেট খোলে না। তখন দীর্ঘক্ষণ যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের কর্তব্যরত মাস্টার এ টি এম মুছা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যে ট্রেনটি স্টেশনে থামবে তার ২০০ মিটার পর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থে রেলপথ খালি রাখতে হয়। আর নরসিংদী স্টেশনের ২০০ মিটারের মধ্যেই আরশীনগর লেভেল ক্রসিং। তাই নরসিংদী স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে সিগন্যাল ফেলা সম্ভব নয়। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। যানজটের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা গেলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ ছাড়া বর্তমানে একজন ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে চলছে এই লেভেল ক্রসিং নিয়ন্ত্রণের কাজ। অন্তত চারজন ট্রাফিক পুলিশ নিয়োজিত করতে পারলে এই জায়গায় যানজট কমতে পারে। আরশীনগর লেভেল ক্রসিংয়ের গেটে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা যায়, মর্তুজা আলী নামের একজন ট্রাফিক পুলিশ একা দুই প্রান্তে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময় চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস এবং নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি লেভেল ক্রসিং পার হয়ে যায়। ট্রেন আসার পাঁচ মিনিট আগে থেকে প্রায় ২০ মিনিট পর্যন্ত গেট বন্ধ রাখা হয়। দুটো ট্রেনেরই নরসিংদী স্টেশনে যাত্রাবিরতি নেই। এই সময় ক্রসিংয়ের দুই প্রান্তে প্রায় অর্ধকিলোমিটার রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। গেটকিপার সাইফুর মিয়া বলেন, সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত ট্রেনের চাপ বেশি থাকে। ট্রেনভেদে পাঁচ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা পর্যন্ত গেট বন্ধ রাখতে হয়। ওই সময়টায় অফিস ও স্কুল-কলেজে যাতায়াত বেশি থাকে। গাড়ির চাপও বেশি থাকে। যানজটও দীর্ঘ হয়। নরসিংদী সরকারি কলেজের ছাত্র হৃদয় গোপাল সাহা বলেন, ‘আরশীনগর রেলক্রসিং শহরের একটি বড় দুর্ভোগের নাম। জেলা শহরে এমন যানজট খুবই দুঃখজনক। দীর্ঘদিন ধরে আমরা নিয়মিত দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।’ অটোরিকশার চালক জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘এইখানে জ্যামের কারণে দিনে প্রতিদিন অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। দুপুরের দিকে জ্যামে পইড়া এক ঘণ্টাও নাই হয়ে যায়। সবাই বিরক্ত।’ নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, রাজধানীর পাশে অবস্থানের সুবাদে নরসিংদীর ব্যবসা-বাণিজ্য দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু এই একটি মাত্র সড়কের ওপর পুরো শহরের যোগাযোগব্যবস্থা নির্ভর করছে। তাই যানজট বাড়ছে। নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান বলেন, ‘নরসিংদী শহরের যানজট নিরসনে রেলপথের আরও তিনটি স্থানে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ জরুরি। আমরা পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে তা বাস্তবায়নের অনুমতি চাইলেও কর্তৃপক্ষ এখনো দেয়নি।’


এই বিভাগের আরও