বেগুন চাষ করে বঞ্চিত হচ্ছে নরসিংদীর কৃষকরা

০৪ মার্চ ২০১৮, ০৮:২৯ এএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৪:২১ এএম


বেগুন চাষ করে বঞ্চিত হচ্ছে নরসিংদীর কৃষকরা
নিজেস্ব প্রতিবেদক [caption id="attachment_1796" align="alignnone" width="640"] ছবিঃ সংগৃহীত[/caption] সবজির প্রাণকেন্দ্র নরসিংদীর রায়পুরার শিবপুর বাজার। কৃষকেরা সবজি নিয়ে আসছেন। পাইকার ও ব্যবসায়ীরা কিনছেন। রিকশা-ভ্যানভর্তি লম্বা বেগুন নিয়ে এলেন এক কৃষক। মুহূর্তে তাঁকে ঘিরে ধরলেন পাঁচ-ছয়জন পাইকারি ব্যবসায়ী। শুরু হলো দরদাম। কৃষক বললেন, সাত মণ লম্বা বেগুন আছে। প্রতি মণের দাম হাঁকলেন ২ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দাম বলছেন। শেষে ১ হাজার ২০০ টাকায় রফা হলো। সাত মণ বেগুন বিক্রি হলো ৮ হাজার ৪০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজি ৩০ টাকা। অথচ সেখান থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী শহরে খুচরা বাজারেই এই বেগুন প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। শিবপুর বাজার থেকে সবজি সরাসরি রাজধানী ঢাকায়ও যায়। ঢাকায়ও লম্বা বেগুনের একই দাম। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ধুকুন্দি, বারৈচা, হোসেননগর, আমতলী, আমলাবসহ রায়পুরা ও বেলাব উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে লম্বা বেগুন চাষ হয়। রাজধানীসহ এর আশপাশের শহরাঞ্চলগুলোতে যে লম্বা বেগুন বিক্রি হয়, তার ৪০ শতাংশই নরসিংদীতে উৎপাদিত। রমজান মাসে বেগুনির জন্য এই বেগুন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। শিবপুর বাজারে দেখা গেল, নরসিংদীর বিভিন্ন স্থান থেকে এই বাজারে বেগুনসহ নানা সবজি আসছে। কৃষকেরা বললেন, যখন প্রচুর উৎপাদন হয়, তখন পাইকারেরা এই বেগুন দুই থেকে পাঁচ টাকা কেজিতেও কেনেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকেরা। বেগুন বেচতে চর ধুকুন্দি গ্রাম থেকে আসা কৃষক আবদুর রহিম হতাশ কণ্ঠে বললেন, অগ্রহায়ণ মাসে এই বেগুন লাগিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে থেকে বাজারে আনছেন। যত দিন যাচ্ছে দাম কমছে। এবার তিনি ২৫-৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এ পর্যন্ত বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন। রোজার সময় চাহিদা বেশি থাকে বলে আরও ভালো দাম পাওয়ার আশা করেছিলেন। হঠাৎ করে দাম কমার কারণ জানতে চাইলে পাইকারি ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন বলেন, কয়েক দিন আগেও প্রতি মণ লম্বা বেগুনের জন্য ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা দিয়েছেন কৃষককে। কিন্তু এখন দাম কমে যাচ্ছে। শুধু লম্বা বেগুন নয়, কৃষকের কাছ থেকে বিভিন্ন সবজি যে দামে কেনা হচ্ছে, তা খুচরা বাজারের চেয়ে অনেক কম। গতকাল বৃহস্পতিবার এই বাজারে প্রতি মণ কাঁকরোল ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, শসা ২০০ থেকে ৩০০ ও চিচিঙ্গা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। অর্থাৎ প্রতি কেজি কাঁকরোল ১২ থেকে ১৩ টাকা, শসা ৫ থেকে ৭ টাকা, চিচিঙ্গা ৭ থেকে ৯ টাকা পড়ে। চালকুমড়া বা জালি প্রতিটি ৫ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি হয়। মুসাপুর গ্রাম থেকে আসা কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, চার মাস আগে প্রতি মণ শসা ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এখন প্রতি কেজি বিক্রি করলেন ৫ টাকা করে। অথচ ঢাকায় প্রতি কেজি শসা ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ঢাকায় দাম বেশি হলে তাতে তো কৃষকের লাভ হচ্ছে না। আরও আট-দশজন কৃষক এমন হতাশা জানালেন। শিবপুর বাজারের এমন দাম উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাকার দর সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকায় বাজার করা সরকারি একটি কলেজের শিক্ষক ইয়াসির আলামিন বললেন, আজিমপুর থেকে তিনি প্রতি কেজি লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৬০, করলা ৫০ ও শসা ৫০ টাকায় কিনেছেন। প্রায় একই রকম তথ্য দিলেন মোহাম্মদপুর টাউন হল থেকে বাজার করা শাহ আলম। ঢাকার খুচরা বাজারের সঙ্গে শিবপুর বাজারের দামের এই বিশাল পার্থক্য কেন—জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা ট্রাক ভাড়া আর পরিবহন চাঁদাবাজিকে দায়ী করলেন। নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক লতাফত হোসেন বলেন, ‘বেগুনসহ সব ধরনের সবজির উৎপাদন ভালো হলেও কৃষকেরা অনেক সময়েই কাঙ্ক্ষিত দাম পান না। কারণ, বাজারব্যবস্থায় তাঁরা নেই। আমরাও সমস্যাটা বুঝি। এ কারণে আমরা একটি প্রকল্প নিয়েছি, যেখানে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, তাঁরা যেন সরাসরি বাজার ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কৃষকদেরও সংঘবদ্ধ হতে হবে।’


এই বিভাগের আরও