শিবপুরে অবাধে বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ফসলি জমি ও বাড়িঘর

০২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৬:৪১ এএম | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৯ এএম


শিবপুরে অবাধে বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ফসলি জমি ও বাড়িঘর
নিজস্ব প্রতিবেদক নরসিংদীর শিবপুরে ফসলি জমি খনন করে অবাধে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে এসব বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি। উপজেলার দুলালপুর, শিমুলতলা, দত্তেরগাঁওসহ গ্রামের অধিকাংশ কৃষি জমিতে শ্যালু মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে একাধিক প্রভাবশালী মহল। এসব বালু উত্তোলনে বাধাঁ দিতে গেলে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে হামলার শিকার হয়েছেন অনেকেই। এছাড়া গ্রামবাসীর পক্ষে থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর। সরেজমিনে শিবপুর উপজেলার দত্তেরগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাইফুল ফকির নামে এক বালু ব্যবসায়ী বাড়ির পাশের ফসলি জমি খনন করে শ্যালু মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন। দিনে ও রাতে তিনি ওই জমি থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ট্রাকভর্তি বালু বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হয়। তার এই বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশেপাশের বাড়িঘর ও ফসলি জমি। একই কায়দায় দীর্ঘ ১০/১৫ বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন একাধিক চক্র। স্থানীয় প্রশাসনসহ রাজনৈতিক মহলের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী চক্রটি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলনের অবৈধ ব্যবসা করছেন। [caption id="attachment_3168" align="alignnone" width="1024"] OLYMPUS DIGITAL CAMERA[/caption] বালু উত্তোলনের ফলে পার্শ্ববর্তী ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি ধসে পড়ে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই জমি মালিকরা বালু ব্যবসায়ীদের নিকট জমি ও ঘরবাড়ি কমদামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কমদামে ক্রয় করা এসব ফসলী জমিতে শ্যালো মেশিন ও ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোনের মহোৎসব চালায় বালু ব্যবসায়ীরা। প্রতিনিয়ত প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে বালুভর্তি ট্রাক, লরি যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। এখানকার বালু মাটির কদর থাকায় অনেকটা বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলনের ব্যবসা চালাচ্ছেন একাধিক প্রভাবশালী চক্র। দিনের পর দিন বালু উত্তোলনের ফলে আশংকাজনক হারে কমে গেছে দুলালপুর ইউনিয়নের কৃষি জমি ও বাড়ীঘর তৈরির উপযোগী জমি। একজনের জমি ভেঙ্গে পড়ছে অন্যজনের জমিতে, পড়ে যাচ্ছে বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ গাছপালা। এতে ইচ্ছা না থাকা স্বত্তেও বাধ্য হয়ে পৈতৃক ভিটা ও কৃষি জমি বিক্রি করে দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয়দের অনেকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ড্রেজার মেশিনপ্রতি নিয়মিত মাসোহারা পৌছে যাচ্ছে প্রশাসনসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে। ফলে অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের দাপটে এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। দত্তেরগাঁও গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নুরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বালু ব্যবসায়ী সাইফুল ফকির দীর্ঘদিন ধরে তার ফসলি জমির পাশ থেকে বালু উত্তোলন করছেন। এতে করে তার জমিতে ভাঙ্গন দেখা দিয়ে জমির অনেক অংশ মাটির নিচে দেবে গেছে। সাইফুল ফকিরের বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য মৌখিকভাবে অনুরোধের পর একাধিকবার স্থানীয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু প্রশাসন এর কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে গত ২০ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত অভিযোগ দেই। জেলা প্রশাসক ইউএনও মহোদয়কে ব্যবস্থা নিতে বললেও তিনি এখনো কোন ব্যবস্থা নেননি। একই গ্রামের অপর কৃষক কামাল হোসেন বলেন, সাইফুল ফকির এলাকায় কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। বালু উত্তোলনের কারণে অনেক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়ে অনেকেই অল্প দামে তার কাছে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আমরা তার বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বাধাঁ দিতে গিয়ে অনেকবার হামলার শিকার হয়েছি। মাস ছয়েক আগে বালু উত্তোলনের কারণে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ছাড়া পেয়ে সে আবারো বালু উত্তোলন করছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, এ বিষয়ে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।


এই বিভাগের আরও