নিরসন হচ্ছে আরশীনগরের যানজট : শীঘ্রই খুলে দেয়া হবে আন্ডারপাস

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৭:১৮ পিএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৮ পিএম


নিরসন হচ্ছে আরশীনগরের যানজট : শীঘ্রই খুলে দেয়া হবে আন্ডারপাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
কেউ সহজে এই সড়ক দিয়ে যেতে চায় না। তবু উপায় নেই। অনেকটা বাধ্য হয়েই এই পথেই সবার যাতায়াত। সড়কটিতে যানজটে আটকা পড়লেই ২০-৩০ মিনিট সময় নষ্ট হয়। কখনো ৩০-৪০ মিনিট। বলা হচ্ছে, নরসিংদী শহরের প্রধান সড়ক আরশীনগর লেভেল ক্রসিংয়ের কথা। এখানে নিত্য যানজটে নাকাল শহরবাসী। তবে খুব দ্রুতই এই যানজট থেকে মুক্তি মিলবে বলে জানিয়েছেন নরসিংদী পৌর মেয়র মো. কামরুজ্জামান কামরুল। রেললাইনের নিচ দিয়ে যান চলাচলের জন্য নির্মাণ করছেন আন্ডারপাস। চলতি মাসেই খোলে দেওয়া হবে এটি।


রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের নরসিংদীর ওপর দিয়ে প্রতিদিন ২৭ জোড়া ট্রেন যাওয়া-আসা করে। ডবল লাইন চালু হওয়ার পর শহরের এই লেভেল ক্রসিংটি স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থার আওতায় চলে আসে। এ কারণে গড়ে প্রতিটি ট্রেনের কারণে ১০ মিনিট গেট বন্ধ থাকে। আর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনের যাত্রাবিরতি আছে এমন ট্রেনের বেলায় গড়ে ১৫ মিনিটের বেশি সময় গেট বন্ধ থাকে। আবার বিশেষ কারণে কখনো একটি ট্রেনকে স্টেশনে অতিরিক্ত সময় থামিয়ে রাখতে হয়। তখন আটকা পড়া ট্রেন না যাওয়া পর্যন্ত গেট খোলে না। তখন দীর্ঘণ যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়।


পৌরসভা কার্যালয় ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংদী শহরের ওপর দিয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। এ কারণে উত্তর ও দেিণ বিভক্ত শহর। এক পাশে রয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নরসিংদী সরকারি কলেজসহ সরকারি অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ। আর অন্য পাশে আছে বাজার, নদীবন্দর, বাসস্ট্যান্ডসহ আবাসিক এলাকা। শহরে যাতায়াতের জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং পৌরসভা মিলে পাঁচটি সড়ক নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে সওজের নির্মিত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাসাইল ও শহরের প্রধান সড়ক আরশীনগরে লেভেল ক্রসিং রয়েছে। বাসাইল ক্রসিং দিয়ে সাহেপ্রতাপ, সাটিরপাড়া পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে শহরে ঢুকতে হয়। বিকল্প সড়ক না থাকায় বেশির ভাগ যানবাহন চলাচল করে আরশীনগর লেভেল ক্রসিং দিয়ে। অথচ নতুন শিল্পকলা, বিলাসদী ও বীরপুর মসজিদের পাশে পৌরসভার সড়ক থাকলেও রেললাইনে লেভেল ক্রসিং নেই। ওই সড়কগুলো দিয়ে বৈধভাবে কোনো যানবাহন পারাপার হতে পারছে না। তবু সময় বাঁচাতে বিভিন্ন যানবাহনকে ঝুঁকি নিয়ে এসব পথেই রেললাইন পার হতে হয়। স্থানীয় লোকজন বলছেন, এই সড়কগুলোতে লেভেল ক্রসিং নির্মিত হলে শহরের প্রধান সড়কে যানবাহনের চাপ কমবে। সেই সঙ্গে সময় সাশ্রয় হবে। যানজটও কমবে। এব্যাপারে একাধিকবার নরসিংদী পৌর কর্তৃপক্ষ নিজ খরচে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ এবং পরিচালনার অনুমতির জন্য আবেদন করলেও সাড়া দেয়নি রেল মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ ব্যর্থ হয়ে শহরবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বিকল্প উপায় হিসেবে আন্ডারপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেন পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল।


আরশিনগর লেভেল ক্রসিংয়ের গেইটম্যান আমিনুল হক বলেন, ‘দৈনিক পূর্বাঞ্চলীয় জোনের মেইল, আন্তঃনগর ও কনটেইনারবাহী ৫৩টি ট্রেন যাওয়া আসা করে। নিয়ম অনুযায়ী যে ট্রেনটি স্টেশনে থামবে তার ২০০ মিটার পর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থে রেলপথ খালি রাখতে হয়। আর নরসিংদী স্টেশনের ২০০ মিটারের মধ্যেই আরশীনগর লেভেল ক্রসিং। তাই নরসিংদী স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে সিগন্যাল ফেলা সম্ভব নয়। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।’


বীরপুর এলাকার মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আন্ডারপাসের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে তা উদ্বোধন কবে হবে সে প্রহর গুণছি। কারণ যানজটে আমরা অতিষ্ট।’


নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজের সহকারি অধ্যাপক মো. সোহরাওয়ার্দী বলেন, ‘আরশিনগর শব্দটির অর্থ আধ্যাত্মিক হলেও প্রশান্তিমূলক। কিন্তু লেভেল ক্রসিংয়ের যানজটের কারণে নরসিংদীবাসীর নিকট আরশিনগর শব্দটি পীড়াদায়ক শব্দে পরিণত হয়েছে। তবে সম্প্রতি মেয়রের উদ্যোগে নির্মিত আন্ডারপাসে যানজট থেকে মুক্তি মিলবে বলে আশা করছি।’


নরসিংদী পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগামি মাসের শুরুর দিকে আন্ডারপাসটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। আন্ডারপাস দিয়ে ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করতে পারবে। শিক্ষা চত্বর থেকে আরশিনগর ব্রিজ পর্যন্ত এই আন্ডারপাস প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪ লাখ ৪১ হাজার ৪৯৫ টাকা।’


সম্প্রতি আন্ডারপাস নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে এসে নরসিংদী পৌর মেয়র মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘নরসিংদী শহরের যানজটের এই সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। শহরের যানজট নিরসনে রেলপথের আরও তিনটি স্থানে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ জরুরি। আমরা পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে তা বাস্তবায়নের অনুমতি চাইলেও আইনি জটিলতার দোহাই দিয়ে কর্তৃপ এখনো দেয়নি। তাই আমরা বিকল্প হিসেবে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে আরশিনগর লেভেল ক্রসিংয়ের ১০০ মিটার দূরে আন্ডারপাস নির্মাণ করছি। আন্ডারপাসটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর শহরের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ যানজট কমে যাবে বলে আমরা ধারণা করছি। আন্ডারপাসটি নির্মাণের পাশাপাশি সৌন্দর্য্য বর্ধণ করা হবে।’