নরসিংদীতে ছাত্রীর গায়ে আগুন: তিনদিনেও রহস্য উদঘাটন হয়নি

১৬ জুন ২০১৯, ১২:২৪ পিএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৯ এএম


নরসিংদীতে ছাত্রীর গায়ে আগুন: তিনদিনেও রহস্য উদঘাটন হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নরসিংদীতে ফুলন রানী বর্মণ (২২) নামে কলেজ ছাত্রীর গায়ে দুর্বৃত্তদের আগুন দেয়ার ঘটনার তিনদিন অতিবাহিত হলেও প্রকৃত কারণ উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এ ঘটনায় থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নরসিংদীর পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ।
এদিকে এ ঘটনায় সন্দেভাজন হিসেবে আটক দগ্ধ ফুলন বর্মণ এর ভাইয়ের শ্যালক সঞ্জিব রায় (২৪) ফুলনকে দীর্ঘদিন ধরেই উত্যক্ত করে আসছিলো বলে জানিয়েছেন ফুলনের স্বজন ও স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী, দগ্ধ ছাত্রী ফুলনের স্বজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাতে নরসিংদী শহরের বীরপুর মহল্লায় পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে দগ্ধ হওয়ার ঘটনার পর থেকে ঘটনার তদন্তে মাঠে নামে থানা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল। ঘটনাস্থল থেকে কেরোসিনের বোতল, দিয়াশলাইয়ের বক্স, ওড়না, পোড়া চুলসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে পুলিশ। জমি সংক্রান্ত বিরোধ, ফুলনকে উত্যক্ত করা, প্রেমঘটিত কারণসহ অন্যান্য কারণ ও বিরোধকে আমলে নিয়ে চালানো হচ্ছে তদন্ত কাজ। তদন্তকারী কর্মকর্তারা দগ্ধ ফুলনের পরিবার, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব ও এলাকাবাসীসহ প্রয়োজনীয় সকলের সাথে কথা বলেছেন।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মোবাইল ফোনের কললিস্ট ধরে সংশ্লিষ্ট একাধিকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করাসহ তথ্য সংগ্রহ করা অব্যাহত থাকলেও এখনও পর্যন্ত এ ঘটনার প্রকৃত কারণ ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে দগ্ধ ফুলনের আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, ফুলনের আত্মীয় আটক সঞ্জিব রায় দীর্ঘদিন ধরেই ফুলনকে উত্যক্ত করে আসছিলো। ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে ধারনা করছেন তারা।

দগ্ধ ফুলন বর্মণের চাচাতো ভাই ভূবন বর্মণ বলেন, দুই তিন বছর যাবৎ আমার ভাইয়ের শ্যালক রায়পুরার সঞ্জিব রায় ফুলকে ডির্স্টাব করে আসছিল। পরে তাকে সাবধানও করে দেয়া হয়। তারপরও সে ডির্স্টাব করতো। হঠাৎ যে এমন ঘটনা ঘটবে সেটা ভাবিনি।

বীরপুর মহল্লর বাসিন্দা স্বপ্না রানী দাস বলেন, ফুলন প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। একটি ছেলে তাকে ডির্স্টাব করতো বলে আমরা আগেও শুনেছি।

একই এলাকার কানন মিয়া বলেন, ফুলনেরই সম্পর্কে আত্মীয় একটি ছেলে তার পেছনে আগে থেকেই ঘুরঘুর করতো এমনটা আমরা শুনেছিলাম। এখন কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সেটা স্পষ্ট নয়।

মামলার তদন্ত কমকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফার বলেন, ফুলন রানীকে আগুন দেয়ায় ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে প্রথমে তার আত্ময়ি রায়পুরার সঞ্জিব রায়কে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে নেমে ভিকিটিম ফুলনের সাথে বেশ কয়েকজনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। সে মোতাবেক তার অপর এক ঘনিষ্ঠজন নারায়ণগঞ্জের সোহাগ নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া মামলার তদন্তে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভিকটিম ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায় এখন পর্যন্ত তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। ঢাকা মেডিকেল এর বার্ণ ইউনিটে গিয়ে ভিকটিমের জবানবন্দি নেয়া হবে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ২ জন আটক রয়েছেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাতে নরসিংদী শহরের বীরপুর মহল্লায় নিজ বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি দোকান থেকে সদাই কেনা শেষে বাসায় ফেরার পথে ফুলনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে তাঁর শরীরের ২০ ভাগ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।