রায়পুরায় একই পরিবারের চারজন দগ্ধ: মারধোর করতে না পেরে ঘরে আগুন দেয়া হয়

১১ এপ্রিল ২০১৯, ১১:০০ এএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৭ এএম


রায়পুরায় একই পরিবারের চারজন দগ্ধ: মারধোর করতে না পেরে ঘরে আগুন দেয়া হয়
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নরসিংদীর রায়পুরায় হত্যা ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই প্রতিপক্ষের পরিবারের সদস্যদের পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মারধোর করতে না পেরে পেট্রোল ঢেলে ঘরে আগুন ধরিয়ে দগ্ধ করা হয় একই পরিবারের তিন শিশুসহ চারজনকে। জমি সংক্রান্ত ও প্রতিবেশী দুলাল গাজী হত্যার জের ধরেই প্রতিপক্ষের লোকজন এ আগুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মাহমুদুল হাসান রবিন ও মামুন মিয়া বুধবার ( ১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নরসিংদীর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম শামীমা আক্তারের আদালতে ১৬৪ ধারায় লিখিত জবানবন্দিতে এসব তথ্য দেন। 
 
এর আগে বুধবার দুপুরে অগ্নিদগ্ধ তিন শিশুর বড় বোন রত্না আক্তার বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে রায়পুরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। 
এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, লোচনপুর গ্রামের মৃত দুলাল গাজীর ছেলে মাহমুদুল হাসান রবিন (২৫), একই এলাকার শিপন মিয়া (৩৫), মামুন মিয়া (১৯), কাজল মিয়া (৪৫), শোভন মিয়া (২২), আলামিন মিয়া (২৮), লোকমান হোসেন (২০)।  
 
নরসিংদীর পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি অগ্নিদগ্ধ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে প্রতিবেশি কয়েকজনের জয়গা জমি নিয়ে বিরোধ আছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলতি বছরে ৬ ফেব্রুয়ারি দুলাল গাজী নামের একজন হত্যা হয়। এ ঘটনায় পরদিন অগ্নিদগ্ধের শিকার পরিবারের দুই ভাই বিপ্লব ও সোহাগকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পাশাপাশি ৭ ফেব্রুয়ারি দুলাল গাজীর ছেলেরাসহ স্থানীয়রা মিলে বিপ্লবদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনার পর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। 
 
গত সোমবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিপ্লবের তিন বোন ও এক ফুফু বাড়িতে ফিরে আসেন। এ খবর পেয়েই  মূলত প্রতিপক্ষের লোকজন তাদেরকে মারধোর কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার ভোরে সেখানে কয়েকজন বাড়ির ভাঙ্গা দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন দেয়। এরপর এই আগুনে বাড়ির ভেতর ধোয়ায় আছন্ন হয়ে হয়ে পড়ে। তখন ক্ষতিগ্রস্থরা এলোমেলোভাবে আগুনের মধ্য দিয়েই দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে এ অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
আদালতে লিখিত স্বীকারোক্তিতে রবিন ও মামুন জানায়, গত মঙ্গলবার বিকেলে তাঁরা রায়পুরার মরজাল এলাকায় একটি পার্কে ঘুরতে যান। এসময় তাঁর চাচাতো ভাই শিপন মিয়া মুঠোফোনে রবিনকে জানায় তাঁর বাবা দুলাল গাজী হত্যার প্রধান আসামী বিপ্লবের বোনেরা বাড়িতে এসেছে। খবর পেয়ে দ্রুত মামুনকে নিয়ে রবিন বাড়ি ফিরে আসে। এসেই শিপনকে নিয়ে রবিন ও মামুনসহ আরো ৪/৫ জন বাড়ি গিয়ে বিপ্লবের বোন মুক্তামনি, সুইটি ও প্রীতিকে পায়। পরে তারা কেন বাড়ি ফিরে এসেছে কারণ জানতে চেয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত তাঁদের ঝগড়া চলমান থাকে। পরে তাঁরা বিপ্লবের বাড়ি থেকে ফিরে গিয়ে রাতে তাদের মারধোরের পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক ভোর ৫ টার দিকে শিপনের নেতৃত্বে রবিন ও মামুনসহ মোট পাঁচজন লাঠিসোটা ও প্লাস্টিকের একটি বোতলে পেট্রোল নিয়ে বিপ্লবের বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। বাড়ির ভেতরে যে কক্ষে মুক্তা, সুইটি ও প্রীতিরা ছিল সে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে দরজার মধ্যে বিভিন্ন পুরোনো কাপড়চোপড় জমিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে পুরো ঘর আগুন ও ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে মুক্তাসহ তাঁর বোনেরা ফুফু আত্মরক্ষার্থে বের হতে গিয়ে দগ্ধ হয়।
 
গত মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ভোর আনুমানিক ৫ টার দিকে রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের লোচনপুর গ্রামে বসত ঘরে প্রতিপক্ষের দেওয়া আগুনে একই পরিবারের তিন শিশুসহ চারজন দগ্ধ হয়েছেন। অগ্নিদগ্ধরা বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন। 
অগ্নিদগ্ধরা হলেন, উপজেলার লোচনপুর গ্রামের মৃত সামসুল মিয়ার মেয়ে প্রীতি (১১), সুইটি (১৩), মুক্তামণি (১৬) এবং তাদের ফুফু খাতুন নেছা (৬৫)। দগ্ধ তিন বোনের মধ্যে মুক্তা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সুইটি অষ্টম শ্রেণিতে এবং প্রীতি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। এদের মধ্যে মুক্তামণির শরীরের ১০ শতাংশ, সুইটির ১৫ শতাংশ, প্রীতির ১৫ শতাংশ ও খাতুন নেছার শরীরের ১২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই কমবেশি শ্বাসনালি পুড়েছে।এ কারণে কেউই আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল।
 
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির বলেন, অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় রত্না আক্তার বাদি হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় লিখিত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। 


এই বিভাগের আরও