আস্থা ও নির্ভরতার প্রতিক ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতাল

০১ মার্চ ২০১৮, ০৪:৪৬ এএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৩:২১ পিএম


আস্থা ও নির্ভরতার প্রতিক ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতাল
স্টাফ রিপোর্টার,নরসিংদী ॥ [caption id="attachment_1725" align="alignnone" width="1522"] নরসিংদী জেলা হাসপাতাল[/caption] নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলাসহ গাজীপুরের কালিগঞ্জ, কাপাসিয়া, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ার চর, কটিয়াদি, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার অঞ্চলের মানুষের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতিক হয়ে উঠেছে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামের সাথে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা প্রদান করে হাসপাতালটি সব শ্রেণিপেশার মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। দেশব্যাপী সুনাম ছড়িয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা কবলিত মানুষকে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের দেয়া সেবাও। সরকারি এই হাসপাতালের সুন্দর পরিবেশ, চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক মনোভাব, মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দিনের পর দিন রোগীদের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হাসপাতালটির আন্ত:বিভাগ ও বর্হিবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১০০০ জন রোগী সেবা গ্রহণ করছেন। ১শ শয্যার বিপরীতে গড়ে ১৪০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। চিকিৎসার মতোই হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনায়ও রয়েছে আধুনিকতা ও স্বচ্ছতার ছাপ। টিকিট, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ রোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের বিবরণ লিখে রাখা হয় সিভিল সার্জনের কক্ষে। এর একটি কপি থাকে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের (আরএমও) কাছে। সাতদিন অন্তর অনলাইনের মাধ্যমে এ অর্থ জমা দেয়া হয় সরকারি কোষাগারে। হাসপাতালের সেবার রূপ বদলে দেয়ার পেছনে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে গণসম্পৃক্ততা। সিসিটিভি, ফ্যান, বিছানার চাদর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই তাদের দেয়া। [caption id="attachment_1726" align="alignnone" width="5792"] নরসিংদী জেলা হাসপাতাল[/caption] এসবের স্বীকৃতিও মিলেছে। ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেরা হাসপাতালের যে তালিকা করেছে, তাতে জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল শ্রেণীতে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালের অবস্থান সবার ওপরে। ছয়টি মানদ-ে ৩০০ নম্বরের মধ্যে নরসিংদীর সরকারি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালটি পেয়েছে ২৩৬ দশমিক ৩৯। যদিও পুরস্কার নয়, রোগীর সন্তুষ্টিই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মুখ্য বলে জানান, হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার হৃদরোগ বিশেষষ্ণ ডা. এ.এন.এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা পুরস্কারের জন্য কাজ করি না, আমাদের লক্ষ্য মানুষকে সেবা দেয়া। সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি ও গণসম্পৃক্ততার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আরো ভালো সেবা দিতে চাই আমরা। বর্তমান সিভিল সার্জন সুলতানা রাজিয়াসহ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে জেলায় আসা সকল সিভিল সার্জনের অনুপ্রেরণা, হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারী, বিএমএ ও স্বাচিপ নেতৃবৃন্দের আন্তরিক সহযোগিতায় জেলা হাসপাতালের এগিয়ে যাওয়া। তবে হাসপাতালটিতে নিজস্ব এ্যাম্বুলেন্স না থাকায় রোগীদের সমস্যা পোহাতে হয় বলে জানান ডা. মিজানুর রহমান। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সিসিটিভির আওতায়। বিভিন্ন বিভাগের ওয়ার্ডের বিছানার চাদর ও ফাইলের রঙ ভিন্ন। এটিও করা হয়েছে কাজের সুবিধার্থে। পরিচ্ছন্ন ও রঙিন বিছানার চাদরে সন্তুষ্ট রোগীরাও। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী রাখা হয়েছে পৃথক কালার কোটেড পিট। পরীক্ষামূলকভাবে একটি ফুড কর্নারও চালু করা হয়েছে মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের পাশেই। খাওয়ার কাজটা সেখানেই নির্বিঘেœ সারতে পারছেন রোগীর স্বজনরা। এতে রোগীর শয্যার পরিচ্ছন্নতাও বজায় থাকছে। [caption id="attachment_1727" align="alignnone" width="1800"] নরসিংদী জেলা হাসপাতাল[/caption] অপরিণত শিশুদের জন্য অত্যাধুনিক স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিটের পাশাপাশি হাসপাতালটিতে রয়েছে জরায়ু মুখ ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য ভায়া সেন্টার। অস্ত্রোপচারের বাইরে হূদরোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রাইমারি কার্ডিয়াক কেয়ার সেন্টার কর্নারও রয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, মেডিসিন, সার্জারি, শিশু, হূদরোগসহ বিভিন্ন বিভাগে সব ধরনের সেবা দেয়া হয় হাসপাতালে। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা না থাকায় একেবারে ঠেকে গেলে রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এছাড়া কোন রোগীকে অন্যত্র পাঠাতে নারাজ এখানকার চিকিৎসকরা। সাধারণত সরকারি হাসপাতালগুলোতে দালালদের প্রকাশ্য তৎপরতা থাকে বেশি। কিন্তু এখানে দালালদের খপ্পড়ে পড়ে রোগীরা যাতে না ঠকেন সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে হাসপাতালের আরএমও মিজানুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ বিভাগ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতার কারণে দালালমুক্ত পরিবেশে সেবা নিতে পারছেন রোগীরা। জেলা পর্যায়ের সেরা হাসপাতাল হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে সার্বক্ষণিক তদারকি। হাসপাতালের সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকির জন্য রয়েছে দুটি কমিটি। একটি কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট কমিটি, অন্যটি ওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট কমিটি। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত সবকিছু তদারক করে এ কমিটি। নিয়মিত সভায় জবাবদিহি করতে হয় এ কমিটিকেও। এ সবকিছুরই কেন্দ্রে রোগী সন্তুষ্টি। সর্বোচ্চ সেবা পাওয়ার আশায় রোগীও আসছে বিপুল সংখ্যায়। গত বছরই আড়াই লাখের বেশি রোগী সেবা নিয়েছেন এ হাসপাতালটিতে। নরসিংদীর চিনিশপুর থেকে এসেছেন ঝর্ণা বেগম। আগামী সপ্তাহেই তার অস্ত্রোপচারের তারিখ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এতদিন অপেক্ষা কেন করছেন? জিজ্ঞাসা করতেই ঝর্ণা বেগমের উত্তর এখানে খরচ কম, সেবার মানও ভালো। তাই অন্য কোথাও চিকিৎসা নেয়ার কথা ভাবি না। ঝর্ণা বেগমদের এ আস্থার মূলমন্ত্র হিসেবে হাসপাতালের ওনারশিপ, লিডারশিপ, অ্যাপ্রিসিয়েশন ও মোটিভেশনের কথা জানান হূদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, এ চারটি বিষয় একটি টিমের মধ্যে থাকলে সফলতা আসবেই। আরেকটি জায়গায় অন্যদের চেয়ে আলাদা ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতাল। গণসম্পৃক্ততার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় এখানে। হাসপাতালের সিসিটিভি, ফ্যান, বিছানার চাদর, বসার বেঞ্চ, আইপিএস, আইপিএসের ব্যাটারিসহ অনেক কিছু কমিউনিটির সরবরাহ করা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আইপিএস সরবরাহ করেছেন নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, হাসপাতালটিকে আমরা আমাদের এলাকার জনগণের সুচিকিৎসার একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনে করি। এটা সরকারি নাকি বেসরকারি সেটি বিবেচ্য নয়। সরকারি সহায়তার জন্য আমরা অপেক্ষা করি না। হাসপাতালের কোনো সমস্যার কথা জানালে আমরা সবাই মিলে তা সমাধানের চেষ্টা করি। প্রয়োজনে ওষুধেরও ব্যবস্থা করা হয়। এর বাইরে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের অর্থায়নে গঠন করা হয়েছে লোকাল রিসোর্স (এলআর) ফান্ড। জরুরি প্রয়োজনে ওই ফান্ডের অর্থ ব্যবহার করা হয়। সরকারের বরাদ্দের জন্য অপেক্ষার যেন সময় নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ স্বাচিপ নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হক কমল বলেন, ------------------------------------ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. সুলতানা রাজিয়া বলেন, আমরা আগে সমস্যা চিহ্নিত করি। তারপর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা পূরণ করি। যদি সরকারি বরাদ্দ থাকে, সেখান থেকে ব্যয়ের চেষ্টা করি। আর বরাদ্দ না থাকলে কবে বরাদ্দ পাওয়া যাবে, সে আশায় আমরা বসে থাকি না। সোস্যাল ওনারশিপ গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসক ও নার্সরা নিজেরা টাকা দিয়ে কাজ করেন। কোনো কারণে যদি সরকারকে অন্য কোথাও বেশি গুরুত্ব দিতে হয়, তবুও চলমান কোনো কাজ আমরা থামিয়ে দিই না। ২০০৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা হাসপাতালটিতে মেডিকেল অফিসার-কনসালট্যান্ট মিলিয়ে নিজস্ব ও শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ৩৩ জন চিকিৎসক রয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে এখন কোনো চিকিৎসক নেই। তবে রোগীরা যাতে সেবাবঞ্চিত না হয়, সেজন্য চক্ষুর ওপর ডিগ্রি নেয়া উপজেলা সদর সেন্টারে দায়িত্বরত একজন মেডিকেল অফিসারকে হাসপাতালে নিয়োগ দেয়া হবে। যিনি সপ্তাহে তিনদিন ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল ও নরসিংদী সদর হাসপাতালে সেবা দেবেন।


এই বিভাগের আরও