মসলিন শাড়ি আসছে ফিরে

০৩ জানুয়ারি ২০১৮, ০৯:১৮ এএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫২ পিএম


মসলিন শাড়ি আসছে ফিরে
অনলাইন ডেস্ক অতি সূক্ষ্মতা ও স্বচ্ছতার জন্য মসলিন কাপড়ের কদর ছিল ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে তৎকালীন রাজা, বাদশাহ বা ধনীদের কাছে মসলিন ছিল অতি প্রিয় কাপড়। আর এ মসলিন বুনতেন বাংলাদেশের তাঁতিরা। এছাড়া এ মসলিন তৈরির সুতা যে তুলা থেকে সংগ্রহ করা হতো, সেই ফুটি কার্পাস তুলার চাষও শুধু বাংলাদেশেই হতো। কিন্তু নানা কারণে আঠারো শতকের শেষার্ধে বাংলায় মসলিন বুনন বন্ধ হয়ে যায়। সেইসঙ্গে বিলীন হয়ে যায় বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যের মসলিন। সেজন্য হারানো গৌরব মসলিন ফিরিয়ে আনতে গবেষণা করছেন দৃক পিকচার লাইব্রেরি (বেঙ্গল মসলিন) লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম। এ গবেষণার অংশহিসেবে বেঙ্গল মসলিন গবেষক দল ভারতসহ সারা বিশ্ব থেকে মসলিনের তথ্য সংগ্রহ করেন। সেইসঙ্গে সংগ্রহ করেন ফুটি কার্পাস তুলার গাছ। সেই গাছের ডিএনএ টেস্টও করা হয়। টেস্টে আগের ফুটি কার্পাস তুলা গাছের সঙ্গে গবেষক দলের সংগ্রহ করা ফুটি কার্পাস তুলার ৭০ শতাংশ মিল পাওয়া গেছে। ফলে সেই গাছ চাষ করে সেখান থেকে ৪০০ কাউন্টের সুতাও সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেয় তাঁতিদের। তারপর সেই সুতা দিয়ে বুনন করা হয় নতুন মসলিন। সেই মসলিন ও মসলিনের নানা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জাতীয় জাদুঘরে মসলিনের বিশেষ প্রদর্শনী, একাধিক সেমিনার, মসলিনবিষয়ক বই প্রকাশ ও আহসান মঞ্জিলে মসলিন নাইটের আয়োজন করা হয়। মসলিন নিয়ে এ আয়োজন বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও আলোচিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আয়োজন করা হয় মসলিন পুনরুজ্জীবন : সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনার। ২৬ ডিসেম্বর সকালে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৃক পিকচার লাইব্রেরি (বেঙ্গল মসলিন) লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার। আলোচনা করেন লোকশিল্প গবেষক চন্দ্রশেখর সাহা, হস্তশিল্প গবেষক এবং লেখক রুবী গজনবী ও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সদস্য (এসঅ্যান্ডএম) মো. মিজানুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. লুৎফুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। সাইফুল ইসলাম বলেন, হারানো ঐতিহ্যের ব্যাপারে মসলিনের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য আমরা নানা দেশে ঘুরেছি। খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি প্রকৃত ফুটি কার্পাস তুলার গাছ। এ গাছ সব স্থানে পাওয়া যায় না এবং এ গাছের চাষ করা হয় না প্রায় ১৮০ বছরের উপরে। আমরা এ গাছ আবারও উৎপাদনের চেষ্টা করেছি এবং আগের গাছের সঙ্গে আমাদের সংগহ করা বর্তমান গাছের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মিলও পাওয়া গেছে। এ চেষ্টায় ৪০০ কাউন্টের সুতার মসলিন শাড়ি বুনেছি। পশ্চিমবঙ্গের মসলিন পুনরুজ্জীবনের জন্য যে অনেক প্রচেষ্টা চলছে। তাই আমাদের আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি, গবেষক-তাঁতি-কর্মী সবাই মিলে চেষ্টা করলে মসলিন আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব। চন্দ্রশেখর সাহা অনুষ্ঠানে খাদি ও বিভিন্ন কাউন্টের সুতা দেখিয়ে বলেন, সঠিক নির্দেশনায় সবাই মিলে চেষ্টা চালালে পাঁচ বছর পর আবার মসলিন বোনা সম্ভব হবে। রুবী গজনবী বলেন, দৃকের গবেষণা দলের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মসলিন আবারও ফিরে আসতে পারে। রুবী গজনবীর সঙ্গে একই মত দেন ড. মো. ফরিদ উদ্দিনও। মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার বলেন, মসলিন পুনরুজ্জীবন করতে শিল্প মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহায়তা করবে। মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিজেরও এ শিল্প পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারে আগ্রহ আছে। প্রয়োজন সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করা।