নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন আনতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:১৯ পিএম | আপডেট: ০২ মে ২০২৪, ০২:৫৭ এএম


নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন আনতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক অচলায়তন ভেঙে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের ইসলাম ধর্মে তো মেয়েদের অধিকার দেওয়াই আছে। এখানেই তো সমঅধিকারের কথা বলা আছে। কিন্তু তারপরও আমাদের দেশে কিছু বাধা আসে, আসবে। সেই বাধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে ‘বেগম রোকেয়া দিবস-২০২১’ ও ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ‘বেগম রোকেয়া পদক’ বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন। এ সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রবল বাধার মুখেও দেশে নারীদের ফুটবল চালুর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলায় মেয়েদের তো অংশগ্রহণই করতে দিতো না। যাই হোক, দ্বিতীয়বার যখন সরকারে এলাম, অন্যভাবে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। আমরা প্রাথমিক থেকে স্কুলে স্কুলে প্রতিযোগিতা শুরু করলাম, বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফুটবল টিম এবং মাধ্যমিক থেকে উচ্চ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফুটবল টিম। এভাবে যখন খেলা শুরু করলো, এখন আর সেই বাধাটা আসে না। অর্থাৎ অচলায়তন ভেঙে একবার এগিয়ে যেতে পারলে আর কোনও বাধা আসবে না।

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে চিন্তা-চেতনা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন যে জিনিসটা সবচেয়ে আমাদের জন্য পীড়াদায়ক, সেটা হচ্ছে মেয়েদের ওপর সহিংসতা। যদিও আমরা আইন করে দিয়েছি। আমরা ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন করেছি। শুধু আইন করলে হবে না, এখানে মানসিকতাও বদলাতে হবে। চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন আনতে হবে।

সরকার প্রধান বলেন, বিশ্বাসটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। বিশ্বাসটা করতে হবে। নারীরা শুধু ভোগের বস্তু না, সহযোদ্ধা, সহযোগী। সহযাত্রায় চলতে হবে। সমান অধিকার দিতে হবে। এটাই হলো বাস্তবতা। সেভাবেই কাজ করতে হবে। সব জায়গায় নারী-পুরুষ সমানভাবে কাজ করছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, পুরুষশাসিত সমাজ আমরা বলি। কিন্তু মেয়েদের ছাড়া পুরুষরা কি পথ চলতে পারে? পারে না। মায়ের পেটে জন্ম নিতে হয়, বোনের হাত ধরে হাঁটা শিখে, বড় হয়ে স্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল থাকে, বৃদ্ধ হয়ে গেলে তো কন্যাসন্তানই বেশি দেখে, সে-ই যত্ন নেয় বেশি, এটাও তাদের মনে রাখতে হবে।

সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে নারীদের দায়িত্ব পালনের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বেগম রোকেয়া যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমি মনে করি এর অনেকটাই আমরা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় গিয়ে আমাদের মেয়েরা কাজ করে। আমাদের যুদ্ধবিমানও তারা চালাচ্ছে। কাজেই কোনও দিক থেকে মেয়েরা কিন্তু পিছিয়ে নেই। এটা সবচেয়ে বড় কথা, পুরুষরা যেটা পারে, নারীরা তার চেয়ে আরও ভালো পারে, বেশি পারে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। এটাই প্রমাণ হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বেগম রোকেয়া আমাদের আদর্শ। তিনি নারীদের পথ দেখিয়েছেন। তার সময়ে সমাজে নারীদের লেখাপড়া যেন অপরাধ ছিল। সেই অবস্থা থেকে তিনি নারী জাগরণে কাজ করেছেন।

নারী শিক্ষার প্রসার এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ করে দিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রথমবার যখন সরকার গঠন করি নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছি। পাশাপাশি প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক বাধ্যতামূলক করি। এই সিদ্ধান্তের পর অনেক বাবা-মা মেয়েদের বাধা দেয়নি। অন্তত মেয়ে যে একটা চাকরি পাবে, সেটা তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে মেয়েদের কর্মের ব্যবস্থা হয়। সর্বক্ষেত্রে একটা উদ্যোগ নিতে চেষ্টা করেছি।

নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর পাঁচ জন বিশিষ্ট নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২১’ প্রদান করা হয়। পদকপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ৪ লাখ টাকার চেক, রেপ্লিকাসহ একটি ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণপদক ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।

নারী শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য কুমিল্লা জেলার অধ্যাপিকা হাসিনা জাকারিয়া বেলা; নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় যশোরের অর্চনা বিশ্বাস; নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখায় কুমিল্লার শামসুন্নাহার রহমান পরাণ (মরণোত্তর); সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ড. জিনাত হুদা এবং পল্লি উন্নয়নে অবদান রাখায় কুষ্টিয়ার গবেষক ড. সারিয়া সুলতানাকে এ বছর রোকেয়া পদক দেওয়া হয়।

১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। ১৯৩২ সালের একই তারিখে কলকাতার সোদপুরে তার মৃত্যু হয়। লেখনীর মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, যৌতুক, পণ প্রথা, ধর্মের অপব্যাখ্যা, কুসংস্কারসহ নারীর প্রতি অন্যায় আচরণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতিবছর এ পুরস্কার দেয় বাংলাদেশ সরকার।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও