নরসিংদীতে বাসা বাড়ির নলকূপে উঠছে না পানি, দুর্ভোগ চরমে

২৭ এপ্রিল ২০২১, ১২:৪৮ পিএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৪, ০৩:০৬ পিএম


নরসিংদীতে বাসা বাড়ির নলকূপে উঠছে না পানি, দুর্ভোগ চরমে

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় গ্রীষ্মকালের শুরুতেই শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ বাসা বাড়ির সেচপাম্প ও নলকূপে পানি উঠানো যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও গভীর নলকূপেও তোলা যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পানি। তাপদাহে এ অবস্থা আরো প্রকট হওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। এতে চরম দূর্ভোগ পড়েছেন শহরের বাসা বাড়ির বাসিন্দারা। পরিবেশগত নানা কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে বৃষ্টিপাত শুরু হলে এ সমস্যা কেটে যাবে।

 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংদী জেলায় সাধারণত পানির স্তর গড়ে ২২ থেকে ২৮ ফুট গভীরে। গ্রীষ্মকালে এই স্তর থাকে ২৮ থেকে ৩৫ ফুট। বেশিরভাগ এলাকায় পানির সাধারণ এ স্তরের গভীরে পৌঁছালেই পানির স্তর পাওয়া যেতো। প্রায় এক যুগ ধরে পরিবেশগত নানা কারণে জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিশেষ করে জেলা শহর ও শিল্পাঞ্চলে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নীচে নেমে গেছে। প্রতিবছর তাপদাহ তীব্র হওয়ার সময়টাতে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এ অবস্থা আরো প্রকট আকার ধারণ করে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও জেলার বেশিরভাগ এলাকার অগভীর (৬১ মিটার পর্যন্ত) নলকূপে পানি উঠা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে নরসিংদী পৌর শহর, শিল্প শহর মাধবদী, পাঁচদোনা, পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল ও আশেপাশের এলাকায় পানি সংকট চরমে পৌঁছেছে। খাবার সুপেয় পানির সংকট হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।

 

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, শুধু অগভীর নলকূপে (৬১ মিটার পর্যন্ত) নয়, শহর এলাকায় গভীর নলকূপেও (৬১ মিটারের অধিক) পানি উঠছে না। দেড়শ থেকে ২ শত ফুট গভীরেও পানির সন্ধান মিলছে না। এতে তাপদাহ বাড়ার সাথে সাথে পানি সংকটও বাড়ছে। আশেপাশের এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করে জীবনযাপন করছেন অনেক পরিবার। বাধ্য হয়ে অনেকে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করছেন পুকুর কিংবা ডোবা নালার পানি। নিরাপদ পানির সুব্যবস্থা করা না গেলে, অদূর ভবিষ্যতে পানি সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশংকা তাদের।

নরসিংদী শহরের পূর্ব ভেলানগর (পুরাতন জজকোর্ট) মহল্লার বাসিন্দা পারভেজ মিয়া বলেন, অন্যান্য বছর সমস্যার সম্মুখীন না হলেও এ বছর গরম শুরু হওয়ার পর থেকে বাসার অগভীর সেচপাম্পে পানি উঠানো যাচ্ছে না। এতে বাড়ির ভাড়াটিয়াসহ নিজেরা বিপাকে পড়েছি। বাধ্য হয়ে আরও ব্যয়বহুল গভীর নলকূপ (সাব-মার্সেবল) স্থাপন করতে হচ্ছে।

 

সদর উপজেলার চিনিশপুর এলাকার ভাড়াটিয়া হানিফ মাহমুদ বলেন, ৫তলা বিশিষ্ট একটি ভবনে কয়েক বছর ধরে ভাড়া থাকি। এমন পানি সংকটের মুখে আর পড়িনি। টানা প্রায় দুই সপ্তাহ পানি সংকটের কষ্টের পর বাসা মালিক এখন নতুন করে আরও গভীর নলকূপ স্থাপন করছেন।

 

সদর উপজেলার দগরিয়া ঝাড়তলা এলাকার সজিব সরকার, বাছেদ মিয়া, আমিনুল হক বলেন, প্রতি বছরই এই সময়ে এ অঞ্চলের টিউবওয়েল দিয়ে পানি ওঠে না। প্রয়োজন মেটাতে দূরবর্তী বিভিন্ন লোকজনের সাব-মার্সেবল (গভীর নলকূপ) থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়া অন্যান্য কাজের জন্য পুকুরের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। প্রতি বছরই এই পানি সংকট বাড়ছে। ব্যয়বহুল হওয়ায় সবার পক্ষে গভীর নলকূপ স্থাপন সম্ভব হয়ে ওঠে না। পানি সংকট সমাধানে সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

 

যোগাযোগ করা হলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার সামসুল ইসলাম নরসিংদী টাইমসকে বলেন, নরসিংদী শিল্পাঞ্চল হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলন হয়। এছাড়া পরিবেশগত নানা কারণে গ্রীষ্মকালে পানির স্তর নীচে নেমে যায়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য হস্তচালিত টিউবওয়েল এর পরিবর্তে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকামতে গভীর নলকূপ সাব-মার্সেবল পাম্প স্থাপন করছি। কয়েক মাস এ সমস্যা চলমান থাকলেও বৃষ্টিপাত হলে এ সমস্যা কেটে যাবে।


এছাড়া প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি ব্যবহার করে পানির সমস্যা দূরীকরণের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

 



এই বিভাগের আরও