সাত কলেজ বাতিলের আন্দোলনে ঢাবিতে ছাত্রলীগের হামলা

১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১১:৪৭ এএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৮ এএম


সাত কলেজ বাতিলের আন্দোলনে ঢাবিতে ছাত্রলীগের হামলা
নিজেস্ব প্রতিবেদক [caption id="attachment_1346" align="alignnone" width="720"] ছবিঃ সংগৃহীত[/caption] সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবি নিয়ে উপাচার্য অফিসের সামনে বৃত্তাকারে বসে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে অভিনব কৌশলে তাদের উপর হামলা করে আন্দোলন পণ্ড করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উপাচার্য অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিন ধরে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছিলেন উপাচার্য অফিসের সামনে। সেখানে ছেলেরা দাড়িয়ে ও মেয়েরা বৃত্তাকারে বসে আন্দোলনের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে সেখানে আসেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সসহ কেন্দ্রীয় ও হল শাখার নেতাকর্মীরা। পরে সোহাগ ও জাকির উপাচার্য অফিসে প্রবেশ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় বিভিন্ন হলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা শিক্ষার্থীদের দাবির ব্যাপারে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার জন্য শিক্ষার্থীদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চাইলে শিক্ষার্থীরা তাতে অসম্মতি জানিয়ে উপাচার্যকে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের আন্দোলন দেখে নেয়ার হুমকি দেয় এবং হল নেতাদের আরো কর্মী আনার নির্দেশ দিয়ে উপাচার্য অফিসে ঢুকে যান। হলের নেতাকর্মীরা আসার পর আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে অভিনব কৌশল নেয় হলের নেতারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা মেয়েদেরকে উদ্দেশ্য করে নোংরা কথার বলে এবং শারীরিকভাবেও হেনস্তা করতে থাকে। তাদের এই আচরণে মেয়েরা টিকতে না পেরে একে একে চলে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা কমতে থাকলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আরো কাছে এসে তাদের ঘিরে ধরে। এসময় তারা ছেলেদেরকেও মারধরের হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বেনজীর হোসেন নিশি, রোকেয়া হল শাখার সভাপতি বি এম লিপি আক্তার, কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি ফরিদা পারভীন ও সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, সুফিয়া কামাল হলের সাধারণ সম্পাদক সারজিয়া শম্পার নেতৃত্বে একদল কর্মীরা মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। এসময় সাংবাদিকরা এই দৃশ্যের ছবি নিতে গেলে ছাত্রলীগের কর্মীরা সাংবাদিকদের উপর হামলা করে। এসময় তাদের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর করে। এর আগে এই আন্দোলনের সমন্বয়ক মশিউর রহমান সাদিককে মুখ চেপে ধরে মারতে মারতে উপাচার্যের অফিসে ঢোকান বঙ্গবন্ধু হলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান। পরে অফিসের ভিতরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাকে মারধরের হুমকি দেয় ও তার সঙ্গে থাকা মোবাইল, মানিব্যাগ কেড়ে নেয়। এরপর থেকে সাদিককে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সূত্র জানায়, উপাচার্য অফিসে বসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আন্দোলনকারীদের সরানোর পরিকল্পনা করেন। এর পরেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করা হয়। এ বিষয়ে জানতে প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীর কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। আমরা এই বিষয়ের সমাধানের জন্য এসেছিলাম। শিক্ষার্থীদের উপর হামলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে কারও উপর হামলা করা হয়নি। বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীদের আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন তারা রেজিস্টার ভবনের কাজে এসেছেন। এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে। এরপর থেকে অধিভুক্তদের কোনো কাজ এখানে করা হবে না। তাদের যেকোনো একটা কলেজে এই কাজ সম্পন্ন করা হবে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কি কথা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ছাত্রলীগের নেতারা এই আন্দোলনের পরিস্থিতি জানতে এসেছিলো। প্রসঙ্গত, “অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দেওয়ার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা নষ্ট হচ্ছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়ে যানবাহন ব্যবহার করছে। এছাড়া তাদের কাজের চাপের কারণে প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তাদের ব্যস্ত থাকায় নিয়মিত শিক্ষার্থীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার ও সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।” এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ কর্মসূচী করে আন্দোলন করে আসছিলো। এ অবস্থায় তাদের উপর হামলা করা হলো।


এই বিভাগের আরও