ভৈরবে বিদ্যুতের আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৭:৫৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৭ এএম


ভৈরবে বিদ্যুতের আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ভৈরব
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি আবাসিক সহকারি প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় গ্রাহকরা ােভ প্রকাশ করে জানান, মফিজ উদ্দিন খান ২০০৯ সালে শিমুলকান্দি বিদ্যুৎ অফিসে যোগদান করে এলাকায় একটি সিন্ডিকেট দালালচক্র গড়ে তোলেন। তাদের মাধ্যমে নতুন লাইন সংযোগ এবং মেরামতের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ সার্ভিস লাইন ও বৈদ্যুতিক খুটিঁ মেরামত, বৈদ্যুতিক সার্ভিস লাইনের উপর ঝুলে থাকা সড়কের গাছ ও ডালপালা পরিস্কার না করে প্রতিমাসে ভূয়াঁ বিল ভাউচার তৈরী করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয় মেরামত বাবদ সরকারি বরাদ্ধকৃত সরজ্ঞামাদি তিনি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার আওতাধীন এলাকায় ফ্যাক্টরী বা কোন মিল কারখানায় নতুন বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ নিতে চাইলে দালালদের মাধ্যমে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে লাইন সংযোগ দিয়ে থাকেন। দাবিকৃত টাকা না দিলে নানা টালবাহানা করে মাসের পর মাস হয়রানি করে থাকেন। এছাড়াও প্রায়ই তিনি নিয়মিত অফিসে আসেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গ্রাহকদের অভিযোগে আরো জানা যায়, এলাকাবাসীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে এসটি ও এলটি আইন কর্তৃপরে অনুমোদনবিহীন ট্রান্সফরমারসহ শ্রী-নগর পূর্ব-পাড়া মুকুল মাষ্টারের বাড়ী থেকে রেহান মাষ্টারের বাড়ী পর্যন্ত ২০টি খুটিঁ বসিয়ে লাইনটি চালু করে দিয়েছেন। শিমুলকান্দি আবাসিক বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় ৭/৮ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। তাছাড়া কমপে দুইশ সেচ পাম্প প্রকল্প রয়েছে। অভিযোগ আছে বছরের পর বছর ধরে গ্রাহকরা মিটার সংযোগের জন্য তাগাদা দিলেও কোনো প্রকার মিটার না দিয়েই গড় বিল করে মোটা অংকের টাকা কামাচ্ছেন এই অসাধু কর্মকর্তা।
ভবানিপুর গ্রামের ইব্রাহিম মিয়া জানান, গত কয়েক মাস আগে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে তার ভাই ইদু মিয়া এলাকায় একটি আইস ফ্যাক্টরী করে নতুন বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগের আবেদন করলে তার কাছে অর্ধ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় নানা টালবাহানা করে তাকে কয়েক মাস যাবৎ হয়রানি করা হচ্ছে ।
শ্রী-নগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহের মিয়া জানান, বধূনগর গ্রামের তারা মেম্বারের বাড়ি হইতে ইসলামপুর পর্যন্ত বৈদ্যুতিক লাইনের ৩০ টি খুটিঁ বসানের জন্য আবাসিক সহকারি প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খান ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। অথচ স্থানীয় মাননীয় সাংসদ নাজমুল হাসান পাপন ওই এলাকায় এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার জন্য এলাকাবাসির স্বারিত আবেদনে স্বার করে প্রকৌশলীকে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিলেও টাকা না দেয়ায় তিনি অদ্যাবধি কাজটি সম্পন্ন করেননি ।
শ্রী-নগর ইউপি চেয়ারম্যান সার্জেন্ট (অবঃ ) তাহের মিয়া জানান, ওই প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বলে শেষ করা যাবে না। তিনি বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগে একাধিকবার এখান থেকে বদলী হয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপকে ম্যানেজ করে ৯ বছর যাবৎ শিমুলকান্দি বিদ্যুৎ অফিসে চাকুরী করছেন। তিনি ২০০৯ সালে শিমুল কান্দি বিদ্যুৎ অফিসে যোগদান করে এলাকায় একটি সিন্ডিকেট দালালচক্র গড়ে তোলেন। তাদের মাধ্যমে নতুন লাইন সংযোগ এবং মেরামতের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ সার্ভিস লাইন ও বৈদ্যুতিক খুটিঁ মেরামত, বৈদ্যুতিক সার্ভিস লাইনের উপর ঝুলে থাকা সড়কের গাছ ও ডালপালা পরিস্কার না করে প্রতিমাসে ভূয়াঁ বিল ভাউচার তৈরী করে সরকারী মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। শুধু তাই নয় মেরামত বাবদ সরকারি বরাদ্ধকৃত সরঞ্জামাদি তিনি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
ভবানিপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক আবদুল হান্নান জানান, বিদ্যালয়ের নামে ব্যবহৃত ৩০ ইউনিটের পরিমাণ দেখালেও বিল আসে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। একটি বিদ্যালয়ের বিল যদি অবহেলার চোখে দেখা হয় তাহলে অন্যান্য গ্রাহকদের অবস্থা কি হবে? এর প্রতিকারের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেন নি।

উল্লেখ্য, গেল বছরের নভেম্বরে তদন্ত ও শৃঙ্খল পরিদপ্তর বরাবরে স্থানীয় ২৭ জন ভুক্তভোগী গ্রাহক একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে ১৪ জানুয়ারী সোমবার দুপুরে শিমুলকান্দি বিদ্যুৎ অফিসের আবাসিক সহকারি প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন ও বিােভ মিছিল করেন এলাকাবাসী। অনতিবিলম্বে এই অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে লাগাতার কর্মসূচীর ডাক দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

গ্রাহকদের এতসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার অফিসে গিয়েও সাাৎ মেলেনি অভিযুক্ত মফিজ উদ্দিন খানের। কয়েকদফায় তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ভৈরব বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের আবাসিক নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, আশুগঞ্জ থেকে ভৈরবে বিদ্যুৎ পৌছতে সিস্টেম লসের কারণে গ্রাহকদের কাছ থেকে ২% হারে অতিরিক্ত বিল আদায়ের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

আবাসিক সহকারি প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে তদন্ত ও শৃঙ্খলা পরিদপ্তরসহ বিদ্যুৎ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপরে কাছে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের লিখিত অভিযোগের প্রেেিত জানতে চেয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য, প্রশাসন মোঃ জহিরুল হক এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, অভিযোগের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।



এই বিভাগের আরও