পলাশে তিনফসলি জমিতে জোরপূর্বক বালু ভরাটের চেষ্টা

০৪ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৮ পিএম


পলাশে তিনফসলি জমিতে জোরপূর্বক বালু ভরাটের চেষ্টা

পলাশ প্রতিনিধি:
নরসিংদীর পলাশে এক কৃষকের ১০৭ শতাংশ তিন ফসলি কৃষিজমি জোরপূর্বক জবরদখল করে বালুর চরে পরিণত করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে জসিম রানা নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের কৃষিজমিতে বালু ফেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করার এ ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় ওই আওয়ামীলীগ নেতাসহ তার তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মিলন মিয়া নামের ভুক্তভোগী এক কৃষক। মিলন মিয়া পাশর্^বর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার টাওড়া গ্রামের বাসিন্দা।

অভিযুক্ত জসিম রানা ডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। লিখিত অভিযোগের পর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও এখনও পর্যন্ত প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষক মিলন মিয়ার।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ওই কৃষকের জমির চার দিকে ভ্যাকুমেশিনে মাটি তুলে পাড় বেধে বালু ফেলার (বালুর আড়ত) জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বালু এনে এই আড়তে রাখার জন্য পাইপও ফিট করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী কৃষক মিলন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা জসিম রানা। জসিমের মাথায় আর্শিবাদের হাত রয়েছে ডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবের উল হাই’র। তাই জসিম ও তার ভাইয়েরা তার ১০৭ শতাংশ তিন ফসলি কৃষিজমি জোরপূর্বক জবরদখল করে বালু ফেলার আড়ত গড়ে তুলছে। একাধিক বার বাধা দিতে গেলে তারা দলবল নিয়ে মারতে আসে।

কৃষক মিলন মিয়া বলেন, বালু ফেলার পর এই কৃষিজমিসহ আশেপাশের উর্বর জমিগুলো বালুর চরে পরিণত হবে। জমিতে আর কোনো ফসল ফলানো যাবে না, পুরো এলাকা বালুর চরে পরিণত হবে। প্রয়োজনে জীবন দেব, কিন্তু তিন ফসলি কৃষি জমিতে বালু ভরাট করতে দেব না’। কারণ এই জমিটুকু ছাড়া কৃষিকর্ম করার জন্য আর কোনো জমি আমার নেই।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসে পরিদর্শনও করেছেন। কিন্তু এখনো কোনো প্রতিকার পাইনি।

কৃষক মিলন মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্ভিক্ষের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছেন। কৃষিজমির ক্ষতি করে কোনো ধরনের উন্নয়ন করা যাবে না এবং এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা রাখা যাবে না বলে বারবার সর্তকবার্তাও উচ্চারণ করেছেন। অথচ আমাদের এখানে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা জসিম ও তার তিন ভাই ওয়াসিম, মহাসিন এবং জাহাঙ্গীর মিলে স্থানীয় সন্ত্রাসী দলবল নিয়ে আমাদের কৃষিজমি জোর পূর্বক জবরদখল করে বালু ফেলার আড়ত তৈরি করছে। আমরা এর বিচার চাই।

অভিযুক্ত আ.লীগ নেতা জসিম রানা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পাচঁদোনা-ডাঙ্গা চার লেন প্রকল্পের সড়ক নির্মাণে এখান থেকে বালু নেওয়া হবে। এটি সরকারের একটি উন্নয়নমূলক কাজ। কাজটি ঢাকার একটি কোম্পানি পেয়েছে। আমি তাদের প্রতিনিধি হয়ে এখানে থেকে কৃষকদের জমি ভাড়া নিয়ে বালুর আড়ত গড়ে তুলেছি। মিলন মিয়ার কাছ থেকেও তার জমি ভাড়া নিতে গিয়েছি। কিন্তু মিলন মিয়া জমি ভাড়া দিচ্ছেন না। সম্ভবত মিলন মিয়ার ৫৭ শতাংশ জমিও আমাদের বালুর আড়তের ভিতরে পড়েছে। এছাড়া সব জমিই কৃষকদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন এই নেতা।

জানতেই চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবের উল হাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, আমি কয়েকদিন হয়েছে যোগদান করেছি। ইতিপূর্বে এ বিষয়ে যদি কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দিয়ে থাকেন, খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



এই বিভাগের আরও