রায়পুরায় পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত

১৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৫:৩৯ পিএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৫ এএম


রায়পুরায় পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত

রাকিবুল ইসলাম:

শীতকাল মানেই আমেজ আর উৎসবের সময়। গ্রামীণ আমেজ আর অনুভূতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে নরসিংদীর রায়পুরায় হয়ে গেলো পৌষমেলা। উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর থেকে এই মেলা শুরু হয়। অন্যান্য বছর তিনদিন ব্যাপী হলেও এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে এই মেলা হয়েছে একদিন ব্যাপী।

সাধক মাহমুদ শাহ ফকিরের তিরোধান দিবসকে উপলক্ষ্য করে প্রতিবছর পৌষ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এই মেলা বসে। এবছর ৬১১তম তিরোধান দিবস। ৬১০ বছর ধরে এই মেলা আয়োজন করে আসছে এলাকাবাসী।  এখানকার মানুষের বিশ্বাস, সাধক মাহমুদ শাহ পায়ে হেটে পানির ওপর দিয়ে নদী পার হতেন।

এই মেলাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের গ্রামের মানুষদের মধ্যে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। এমনকি মেয়েরা নাইওর আসে তাদের পরিজন নিয়ে। মেলায় আশেপাশের প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ একসাথে জড়ো হয়, ভাগাভাগি করে নেয় আনন্দ। 

মেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ও মাঠ জুড়ে  হরেক রকম দোকান বসেছে। বাচ্চাদের খেলনা, মাটির তৈজসপত্র, পুতুল, চরকি, কসমেটিকস আর নানান খাবারের সমারোহ। সকল শ্রেণির মানুষ এসব দোকান ঘুরে ঘুরে তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করছেন।

মেলার দোকান সাজিয়ে বসা আনাস মিয়া বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে এই মেলায় দোকান নিয়ে বসি। এখানে প্রতিবছর প্রচুর জনসমাগম হয়। বিক্রিও ভালো হয়।

বেতের জিনিসপত্র বিক্রি করছেন কবির মিয়া। তিনি বলেন, বাঁশ ও বেতের কদর আগের মতো না থাকলেও এখানে বেচাকেনা ভালো হয়। যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মেলার ব্যাপ্তি কম। তবুও বেচাকেনা যথেষ্ট ভালো।

সন্তানদের নিয়ে মেলায় আসা রাশিদা বেগম বলেন,  আমরা ছোটকালে এই মেলা উপভোগ করতাম, এখনও করি। তখন বাবার হাত ধরে আমি মেলায় আসতাম, এখন আমার হাত ধরে আমার ছেলেমেয়েরা আসে।

শাহাপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, এই মেলাকে কেন্দ্র করে ছোটকালে যেমন আনন্দ বিরাজ করতো। এখনও আমাদের মনে ঠিক একই আনন্দ বিরাজ করে। 

সাইফুল কবির নামে একজন বলেন,  আমি ব্যাবসার কাজে ঢাকায় থাকি। দুইটা ইদ আর এই মেলা, এই তিন উৎসবে পরিবার নিয়ে বাড়ি আসা হয়। ইদের মতো করে এই মেলাটাকেও আমরা উপভোগ করি। গ্রামীণ এই সংস্কৃতি এত বছর পরেও ধরে রাখাটা একটা চ্যালেঞ্জ।

মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য মাইনউদ্দিন প্রধান (৫৫) বলেন, এবার করোনা সংক্রমণের কারণে আয়োজন সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। মেলায় মাস্ক বিতরণ করার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পুলিশও মোতায়েন রয়েছে।

আয়োজক কমিটির আরেক সদস্য ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের কয়েক প্রজন্ম এই আয়োজনের সাথে জড়িত। আমার বাবা এবং দাদা দুজনেই এটার আয়োজক কমিটিতে ছিলেন। এখন আমিও এই দায়িত্ব পালন করছি। প্রায় ছয়শত বছর ধরে এই আয়োজন চলে আসছে।

সবমিলিয়ে গ্রামীণ এই সংস্কৃতি ধরে রাখাটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন এলাকাবাসী।


বিভাগ : বিনোদন


এই বিভাগের আরও