বজ্রাঘাতে প্রাণহানি থেকে রক্ষায় করণীয়...
১৭ জুন ২০২০, ০৫:০৬ পিএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৫ পিএম
জীবনযাপন ডেস্ক:
বর্তমান সময়ে করোনার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের কাছে এক আতঙ্কের নাম বজ্রপাত। চলমান সময়ে ক্রমাগতভাবে বজ্রপাতে সারাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর শিকার হচ্ছে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও। বজ্রপাতের এমন তাণ্ডবে পরিস্থিতি দিনদিন খারাপ হচ্ছে। দ্রুত গতিতে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে বজ্রপাতের আতঙ্ক।
দেখা গেছে, চলতি বছরের ২২ থেকে ২৪ এপ্রিল তিন দিনে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৬ জন। ২২ এপ্রিল ৬ জেলায় ১৪ জন, ২৩ এপ্রিল ৭ জেলায় ৭ জন এবং ২৪ এপ্রিল ১২ জেলায় ১৫ জন মারা যান। ৪ এপ্রিল শুরু হয় মৌসুমের প্রথম বজ্রপাত। প্রথম দিনেই মারা যায় ৩ জন।
অন্যদিকে চলতি বোরো মৌসুমে পাহাড়ি ঢল এবং বৈরি আবহাওয়ায় গোলায় ধান তুলতে বজ্রপাতের হুমকি নিয়েই মাঠে রয়েছেন কয়েক লাখ কৃষি শ্রমিক। এপ্রিলে অন্তত ২৫ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ঘটনার সময় মাঠে বা ক্ষেতে অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণায় দেখা গেছে, এপ্রিলে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে কিশোরগঞ্জ, পটুয়াখালী এবং লক্ষ্মীপুরে। তিন জেলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন করে। বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। ওই বছর বজ্রপাতে নিহত হয়েছিলেন ১৮৬ জন। অবস্থার এখনো উন্নতি হয়নি। চলতি মাসেও প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে নিহত হয়েছেন ৫০ জন।
বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৮০ থেকে ১২০ দিন বজ্রপাত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব জিওগ্রাফির অধ্যাপক ড. টমাস ডাব্লিউ স্মিডলিনের ‘রিস্কফ্যাক্টরস অ্যান্ড সোশ্যাল ভালনারেবিলিটি’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিবছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৪০টি বজ্রপাত হয়। বছরে দেড়শ'র মতো লোকের মৃত্যুর খবর সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ করলেও প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা পাঁচশ থেকে এক হাজার।
দুর্যোগ ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ২০৫, ২০১৬ সালে ২৪৫, ২০১৫ সালে ১৮৬, ২০১৪ সালে ২১০, ২০১৩ সালে ২৮৫, ২০১২ সালে ৩০১ এবং ২০১১ সালে ১৭৯ জন মারা যান।
গবেষণায় এসেছে, আমাদের দেশে বজ্রপাতের মূল কারণ দেশটির ভৌগলিক অবস্থান। বাংলাদেশের এক দিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস আসছে। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ী এলাকা, কিছু দূরেই হিমালয় পর্বত রয়েছে, যেখান থেকে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকছে। এই দুইটা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। শীতের পর বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ বাতাস আসতে শুরু করে, অন্য দিকে হিমালয় থেকে আসে ঠাণ্ডা বাতাস। দক্ষিণের গরম আর উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয়, আর এর থেকে তৈরি হয় বজ্র মেঘের। এমন একটি মেঘের সাথে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্রের তৈরি হয়। এমন উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায়, তাতেই আঘাত করে।
দেশের আয়তন হিসাবে বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এর কারণ সচেতনতার অভাব। ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা বা নেপালে বজ্রপাত হলেও সেখানে মৃত্যুর হার এত বেশি নয়। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চল বজ্রপাত-প্রবণ এলাকাগুলোর অন্যতম। গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকায় এ পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে। তাদের মতে, যেসব এলাকায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, সেসব এলাকায় যে মেঘের সৃষ্টি হয়, সেখান থেকেই বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকে।
কোনো কোনো গবেষক বলেন, তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। পৃথিবীর যে কয়েকটি অঞ্চল বজ্রপাত প্রবণ তার মধ্যে দক্ষিণ-এশিয়া অন্যতম। এর মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের হার যেমন বেশি, তেমনি প্রাণহানিও হচ্ছে বেশি।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন শিক্ষক তার গবেষণায় জানিয়েছেন, প্রধানত দু'টি কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন ও সময় পরিবর্তন হয়েছে। কালবৈশাখি বেশি হচ্ছে। আর বজ্রপাতের সংখ্যা বা পরিমাণ বেড়ে গেছে। অন্য দিকে আগে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর উঁচু গাছ ছিল। তাল গাছ, বটগাছ প্রভৃতি। স্বাভাবিক নিয়মে বজ্রপাত হলে এসব উঁচু গাছ তা গ্রহণ করে নিতো। কিন্তু এখন তা না থাকায় যখন খোলা মাঠে বজ্রপাত হয় তা মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শহরে গাছ না থাকলেও উঁচু উঁচু ভবন আছে। ফলে শহরের মানুষ এই মত্যু থেকে রেহাই পাচ্ছে। আর বজ্রপাতে গ্রাম অঞ্চলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে আনুপাতিক হারে অনেক বেশি।
গত কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতের হার এবং বজ্রপাতের সময়সীমা বেড়েছে। এতে বেড়েছে বজ্রাঘাতে মৃতের সংখ্যাও। প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে।
সম্প্রতি বজ্রাপাতের শিকার হয়েছে সারাদেশ। দেখা যায় গত তিনমাসে ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের মৃত্যু ঠেকাতে বজ্রপাত বেশি হয় এমন এলাকা সুনির্দিষ্ট করে সেখানে নিরাপদ বলয় তৈরি করতে হবে। বজ্রপাত সংকুল এলাকায় লাইটেনিং এরেসটার লাগিয়ে সেটি করা সম্ভব বলে মত দেন তারা।
চলতি বছরের মে পর্যন্ত, বজ্রাঘাতে মারা গেছেন ১৩৬ জন। এর মধ্যে কেবল এপ্রিলেই মারা গেছেন ৭০ জন। মে মাসে ৬০ জন। ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য মতে, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত বজ্রাঘাতে মোট ৭৩ জন মারা গেছেন এবং ২৮ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৪ শিশু, পাঁচ নারী ও ৫৪ জন পুরুষ। এর মধ্যে ২১ এপ্রিল থেকে ১৮ মে’র মধ্যে নিহত হয়েছেন ১৮ জন। ২০১৮ সালে বজ্রাঘাতে নিহতের ঘটনা ঘটে ২৭৭টি।
যেহেতু বজ্রপাতকে আমরা চাইলে বন্ধ করতে পারি না, কিন্তু বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা অবলম্বনের মাধ্যমে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে পারি।
এগুলো হলো (১). বেশি বেশি গাছপালা লাগাতে হবে, তালগাছের সংখ্যা অত্যাধিক পরিমাণে হলে ভালো হয়। (২). যখনই আকাশ মেঘলা দেখা যাবে, তখনই ঘরে বা নিরাপদে অবস্থান করতে হবে। (৩). বড় গাছ টিনের খুঁটি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। (৪). মোবাইল ফোন টিভি ফ্রিজ বন্ধ করে দিতে হবে। (৫). ধাতব বস্তু থেকে দূরে থাকতে হবে। (৬). অধিক পানি থেকে দূরে থাকতে হবে। (৭). খোলা বা উঁচু জায়গা থেকে সাবধানে থাকতে হবে। (৮). বজ্রপাতের লক্ষণগুলো জানতে হবে। (৯). তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।
বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে জনসচেতনতা সব থেকে জরুরি। আর তাই বজ্রপাত থেকে রক্ষার উপায়গুলো জনগণকে অবগত থাকতে হবে। প্রকৃতির উপর অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। বেশি বেশি গাছপালা লাগাতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমে আসবে। লেখক: ইমরান হুসাইন, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
বিভাগ : জীবনযাপন
- নরসিংদীর দুই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মাঝে প্রতিক বরাদ্দ
- পথচারিদের পাশে পানি ও স্যালাইন নিয়ে একদল যুবক
- পলাশে কিশোরী ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার
- সাংবাদিকতার জন্য চমৎকার পরিবেশ তৈরি করতে চাই: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী
- পলাশ প্রেসক্লাবের সভাপতি-মনা, সম্পাদক-রনি
- শিবপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর নিহত
- উপজেলা নির্বাচনে যে কেউ প্রভাব বিস্তার করবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে: নরসিংদীতে ইসি মোঃ আলমগীর
- নিলক্ষায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ১০
- রায়পুরায় বজ্রপাতে একজন নিহত
- উপজেলা নির্বাচন: নরসিংদী ও পলাশ উপজেলায় মনোনয়নপত্র দাখিল করলেন যারা
- নরসিংদীর দুই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মাঝে প্রতিক বরাদ্দ
- পথচারিদের পাশে পানি ও স্যালাইন নিয়ে একদল যুবক
- পলাশে কিশোরী ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার
- সাংবাদিকতার জন্য চমৎকার পরিবেশ তৈরি করতে চাই: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী
- পলাশ প্রেসক্লাবের সভাপতি-মনা, সম্পাদক-রনি
- শিবপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর নিহত
- উপজেলা নির্বাচনে যে কেউ প্রভাব বিস্তার করবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে: নরসিংদীতে ইসি মোঃ আলমগীর
- নিলক্ষায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ১০
- রায়পুরায় বজ্রপাতে একজন নিহত
- উপজেলা নির্বাচন: নরসিংদী ও পলাশ উপজেলায় মনোনয়নপত্র দাখিল করলেন যারা