মনোহরদীতে ভিক্ষুকের বসত-বাড়ী স্ত্রীর নামে লিখে নিলো ভূমি কর্মকর্তা

২৮ আগস্ট ২০১৯, ০৫:১২ পিএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪১ এএম


মনোহরদীতে ভিক্ষুকের বসত-বাড়ী স্ত্রীর নামে লিখে নিলো ভূমি কর্মকর্তা

মনোহরদী প্রতিনিধি ॥
নরসিংদীর মনোহরদীতে এক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার (তহসীলদার) বিরুদ্ধে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে জোরপূর্বক ষাটোর্ধ্ব এক বিধবা ভিক্ষুকের বসত-বাড়ী স্ত্রীর নামে লিখে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের গোখলা কলিকান্দা গ্রামে। প্রতারণার শিকার ভিক্ষুক মিনারা বেগম দুখী গোখলা কলিকান্দা গ্রামের আব্দুল আউয়ালের স্ত্রী।


অভিযুক্ত তহসীলদার একই গ্রামের টুকুব আলী মুনশীর ছেলে তাজুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে একই জেলার রায়পুরা উপজেলার রায়পুরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সহকারী ভূমি কর্মকতা হিসেবে কর্মরত। ভূমি কর্মকর্তার এ প্রতারণার বিচার দাবী করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে (২৭ আগস্ট মঙ্গলবার) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভূক্তভোগী মিনারা বেগম দুখী।

ভূক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানায়, মিনারা বেগমের পিতা গয়েছ আলী প্রায় ২৫ বছর আগে তার নামে ছয় শতাংশ জমি লিখে দেন। ১৫ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর মিনারা বেগম এক ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে পৈত্রিক বাড়ীতে বসবাস করতে থাকেন। পিতার লিখে দেয়া জমির দলিলটি নিরাপদে রাখার জন্য প্রতিবেশী আকলিমার কাছে রেখেছিলেন তিনি। চার বছর আগে মিনারা বেগম জানতে পারেন তার দলিলটি হারিয়ে গেছে। পরবর্তীতে তিনি দলিলের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকলে প্রতিবেশী তহসীলদার তাজুল ইসলাম তাকে দলিলের নকল তুলে দেয়ার আশ্বাস দেন। দলিলের নকল আনার পর তাজুল ইসলাম মিনারার কাছে পঁচিশ হাজার টাকা দাবী করেন। তার পক্ষে এতো টাকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় তহসীলদার তাকে জমি লিখে দেয়ার প্রস্তাব দেন। জমি লিখে দিতে রাজি না হওয়ায় পুলিশের ভয় দেখিয়ে বাড়ী-ভিটে থেকে সাড়ে তিন শতাংশ জমি জোরপূর্বক স্ত্রী নাছিমা বেগমের নামে লিখে নেন তহসীলদার তাজুল।
তিনমাস আগে ভিটের বাকী আড়াই শতাংশ জমি স্ত্রীর নামে লিখে দিতে ওই নারীকে পুণরায় ভয়-ভীতি দেখান তাজুল। পরবর্তীতে ভিক্ষুক মিনারা বেগম স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে ঘটনাটি অবহিত করেন। এরপরই তহসীলদার তাজুল ইসলামের প্রতারনার ঘটনা ফাঁস হয়। এতে পুরো গ্রামের লোকজন প্রতারক তাজুলের বিচার দাবী করেন।

মিনারা বেগম দুখী বলেন, ‘আমার পৈত্রিক ভিটাছাড়া সহায় সম্বল বলতে আর কিছুই নাই। আমি ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার শেষ সম্বল বলতে এক খন্ড ভিটে মাটি। কিন্তু সেই শেষ সম্বলটুকুও স্থানীয় প্রভাবশালী তহশীলদার মো. তাজুল ইসলাম আমাকে ফাঁদে ফেলে দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার স্ত্রী নাসিমা বেগমের নামে লিখে নিয়েছে। এখন আমাকে নিঃস্ব করে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে।’

তহসীলদার তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মিনারা বেগমের অনুরোধেই আমার স্ত্রী তার জমি কিনেছেন। আমরা তাকে কোন প্রকার ভয়-ভীতি দেখাইনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন জানায়, ‘তহসীলদার তাজুল ইসলাম একজন প্রতারক এবং দুশ্চরিত্রের লোক। জমিজমা নিয়ে আশপাশের লোকজনদের মাঝে সব সময় বিশৃঙ্খলা লাগিয়ে রাখেন।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য শরীফ ভূঁইয়া জানান, ‘ভিক্ষুকের সাথে তহসীলদার তাজুল ইসলামের প্রতারণার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গত শনিবার চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সালিশ আহবান করা হয়। সালিশে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত হলেও তাজুল ইসলাম আসেননি। এতেই প্রামাণিত হয় তাজুল ইসলাম ভিক্ষুক মহিলার সাথে প্রতারণা করেছেন।’

একদুয়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুজ্জামান মিটুল বলেন, ‘মিনারা বেগম দুখী ইউনিয়নের তালিকাভূক্ত একজন ভিক্ষুক। ইউনিয়ন পরিষদের সকল সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও তাকে আমরা সব সময় সহযোগীতা করে থাকি। আর ঐ মহিলার সাথে তহসীলদারের প্রতারণা করাটা খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের প্রতারকদের কঠিন বিচার হওয়া উচিত।’

মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিয়া আক্তার শিমু বলেন, একজন ভিক্ষুকের লিখিত অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। ব্যস্ততার কারণ এখনো তা দেখতে পারিনি। অভিযোগের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



এই বিভাগের আরও