নরসিংদীতে আবারও কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, দুইজন গ্রেপ্তার

২০ অক্টোবর ২০২০, ০৫:৪৯ পিএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৫ এএম


নরসিংদীতে আবারও কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, দুইজন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীতে আবারও এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সদর উপজেলার শীলমান্দিতে ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই ঘটনায় সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাতে ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে দুইজনের নাম উল্লেখসহ তিনজনকে আসামী করে নরসিংদী সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন। ওই কিশোরী স্থানীয় একটি টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ করেন।

এর আগে শনিবার (১৭ অক্টোবর) রাত পৌণে ১০টার দিকে কাজের উদ্যেশ্যে টেক্সটাইল মিলে যাওয়ার সময় ওই কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। রোববার রাতে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে সোমবার সকালে নরসিংদীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সাহায্য চান। পরে সোমবার দুপুরে অভিযুক্ত দুই ধর্ষককে আটকের পর রাতে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন ওই কিশোরীর বাবা। 

এই ঘটনায় গ্রেপ্তার দুইজন হলেন, সদর উপজেলার শীলমান্দির দক্ষিন শীলমান্দি এলাকার মো. আমীর হোসেনের ছেলে মো. জামান মিয়া (৩০) এবং আব্দুল মান্নান ভূইয়ার ছেলে উসমান ভূইয়া (৩২)। সোমবার দুপুরে পিবিআই এর পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মনিরুজ্জামান শীলমান্দি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের দুজনকেই গ্রেপ্তার করেন। 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৭ অক্টোবর রাত পৌণে ১০টার দিকে রাতের শিফটে কাজ করতে টেক্সটাইল মিলে যাওয়ার জন্য রওনা হন ওই কিশোরী। পাঁচমিনিট হাঁটার পর জামান মিয়া ও উসমান ভূইয়া ওই কিশোরীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে অন্য একটি টেক্সটাইল মিলের ফাঁকা জায়গায় বাঁশবাগানের ভেতর পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় অজ্ঞাতনামা আরও একজন আসামী তাদের পাহারা দিচ্ছিলো। ধর্ষণের পর আসামীরা চলে যাওয়ার সময় এই বলে হুমকি দেয়, ঘটনা জানাজানি হলে ওই কিশোরীকে হত্যা এবং তার বড় বোনকেও ধর্ষণ করা হবে। পরে ওই কিশোরী আর ডিউটিতে না গিয়ে বাসায় চলে যায় এবং কান্নাকাটি শুরু করে। এ সময় পরিবারের সদস্যরা তার পরনের কাপড় ছেড়া কেন জানতে চাইলে সে ভয়ে আরও কান্নাকাটি করে কিন্তু আসামীদের নাম প্রকাশ করেনি। তবে পরদিন তার ফুপু ও এক বান্ধবীর কাছে ধর্ষনের ঘটনাটি জানায় এবং আসামীদের নাম প্রকাশ করে।

মামলার বাদী ও ওই কিশোরীর বাবা জানান, ১৮ তারিখ রাত ১১টার পরে আমার বড় ছেলের স্ত্রী আমাকে ফোন করে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় এবং তাড়াতাড়ি বাড়ি আসতে বলে। দ্রুত বাড়ি আসার পর এ ঘটনা আমাকে জানানো হয়। পরদিন প্রতিবেশী মো. মোর্শেদ নামের এক ব্যক্তিকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি আসামী উসমান ভূইয়াকে ডেকে আনেন। এসময় জানতে চাইলে আসামী উসমান কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনাটি স্বীকার করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি নরসিংদীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) জানানো হলে তাদের একটি দল এসে উসমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে প্রধান অভিযুক্ত মো. জামান মিয়াকে আটক করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে নরসিংদীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ধর্ষণের ওই ঘটনাটি গত শনিবারের হলেও আমরা খবর পেয়েছি সোমবার সকালে। সোমবার দুপুরেই অভিযুক্ত জামান মিয়া ও উসমান ভূইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। 

এ নিয়ে গত ১০ দিনে নরসিংদী জেলায় মোট ৫টি ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এসব অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, শহরের চৌয়ালায় একটি স্পিনিং মিলে কাজ করা চৌদ্দ বছরের এক কিশোরী শ্রমিককে চারজন মিলে গণধর্ষণ, শহরের নাগরিয়াকান্দিতে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে তিনজন মিলে ধর্ষণ ও তা ভিডিও ধারণ, মাধবদীতে তিরিশ বছর বয়সী এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে ধর্ষণ এবং পলাশে সতের বছর বয়সী এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ। এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে মোট ১২ জনকে এবং পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ জন।



এই বিভাগের আরও