আজ নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর

০১ নভেম্বর ২০২০, ০১:১০ এএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৪ এএম


আজ নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আজ ১ নভেম্বর। নরসিংদীর পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর। ২০১১ সালের এই দিনে দলীয় কার্যালয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর ২০১৯ সালের শুরুর দিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার অভিযোগপত্রের উপর মামলার বাদি কামরুজ্জামানের দায়ের করা নারাজি আবেদন আদালত গ্রহণ করায় পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। আদালত পুনঃতদন্তে শুধুমাত্র বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে তদন্ত শেষ করেন। এঘটনায় রিভিশন চেয়ে মামলার বাদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন। বর্তমানে তা শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে।

মামলার বাদি ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১ নভেম্বর পৌর মেয়র লোকমান হোসেনকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ হত্যার ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বর্তমান মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান কামরুল বাদী হয়ে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মন্ডল প্রায় দীর্ঘ ৮ মাস তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাহউদ্দিনসহ এজাহারভুক্ত ১১ আসামীকে বাদ দিয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এতে মামলার এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন, এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবদুল মতিন সরকার, তাঁর ছোট ভাই শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সরকারসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এদিকে অভিযোগপত্র দাখিলের আগেই মোবারক হোসেন মোবা ছাড়া সবাই আদালতের মাধ্যমে জামিনে মুক্ত হয়ে যান। দীর্ঘ ৭ বছর পর গত ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর মোবারক হোসেন মোবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনিও বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

এদিকে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদি মো. কামরুজ্জামান কামরুল। আদালত ২৫ জুলাই নারাজি আবেদন খারিজ করে অভিযোগপত্র বহাল রাখেন। পরবর্তীতে ২৮ আগস্ট নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদি। আদালত ২ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ফের নারাজি আবেদন খারিজ করেন। এরপর উচ্চ আদালতে যান বাদি।

তিনি ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। আদালত বাদির আবেদনটি আমলে নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত করে দেন। এ ঘটনায় জামিনে বের হয়ে আসামিরা সুপ্রীম কোর্টের আপিল ডিভিশনে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। এরই ধারাবিকতায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শুনানীর অপেক্ষায় থাকার পর আদালত ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি আসামিদের করা রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তি করে বাদির নারাজি আবেদন গ্রহণ করতে এবং বাদি ও স্বাক্ষীগণের জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জুন দুপুরে নরসিংদী জজ আদালতের মূখ্য বিচারিক হাকিম মো. রকিবুল ইসলাম শুধুমাত্র বাদী কামরুজ্জামানের জবানবন্দি গ্রহণ করে তদন্ত শেষ করেন। এ ঘটনায় বাদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন। বর্তমানে তা শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে।

লোকমান হত্যা মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আসাদ আলী বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে অভিযোগপত্রের উপর বাদির দায়ের করা নারাজি আবেদন আদালত গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আদালত শুধুমাত্র বাদির জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলার পুনঃতদন্ত শেষ করে দেন। তাই আমরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেছি। বর্তমানে তা শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে।

মামলার বাদি ও নরসিংদী পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি সঠিক ছিল না। সেখানে অভিযুক্ত ১৪ আসামির মধ্যে ১১ আসামিকেই বাদ দেওয়া হয়েছিল। যতদিন পর্যন্ত প্রকৃত আসামীদেরকে বিচারের আওতায় না আনা হবে, ততদিন আমরা আইনী লড়াই চালিয়ে যাব।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূইয়া বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের মতবিরোধের সুযোগ নিয়ে লোকমান হত্যার আসামীরা স্থানীয় সাংসদের কাঁধে ভর করে আছে। এতে বিচার কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তাই আমরা সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কায় আছি।

এদিকে লোকমান হোসেনের ৯তম মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা করেছে জনবন্ধু শহীদ লোকমান পরিষদ। তাঁরা প্রয়াত লোকমান হোসেনের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া মাহফিল, গণভোজ, স্মরণসভা, বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

 



এই বিভাগের আরও