নরসিংদীর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রানা হত্যা: আ’লীগ নেতাকে আসামী করার চেষ্টার অভিযোগ এমপির বিরুদ্ধে

২৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৪০ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৫ এএম


নরসিংদীর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রানা হত্যা: আ’লীগ নেতাকে আসামী করার চেষ্টার অভিযোগ এমপির  বিরুদ্ধে
নিহত রানা আকবর মোল্লা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রানা আকবর মোল্লা (৩৫) হত্যার প্রায় ৫০ ঘন্টা পর মামলা হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে নিহতের স্ত্রী লিজা আক্তারের করা মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক এরশাদ উল্ল্যাহ। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে এই হত্যা মামলায় রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নরসিংদী পৌরসভার সাবেক ২ বারের মেয়র, বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নরসিংদী ১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কামরুজ্জামান কামরুলকে প্রধান আসামী করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করেছেন কামরুজ্জামান কামরুল। বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরুর বিরুদ্ধে বাদীকে চাপ প্রয়োগ করে মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ করেন তিনি।


পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে শহরের কাউরিয়াপাড়া এলাকার পৌর ঈদগাহ মাঠে রানা আকবর মোল্লাকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত রানা আকবর মোল্লা কাউরিয়াপাড়া এলাকার মৃত আলী আকবর মোল্লার ছেলে। সে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের ৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি।

বর্তমানে তার কোন রাজনৈতিক পদবি না থাকলেও নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিল রানা। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, ডাকাতির প্রস্তুতি ও চাঁদাবাজির মোট ৪ টি মামলা রয়েছে। তবে পরিবারের দাবি স্ত্রী, সন্তানের জন্য রানা আকবর মোল্লা অনেক দিন ধরেই সঠিক পথে জীবনযাপন করছিলেন।


জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে নিহতের স্ত্রী লিজা আক্তার বাদি হয়ে প্রথমে আমাকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ নিয়ে সদর মডেল থানায় যান। ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তে আমার কোন সম্পৃক্ততা না থাকায় অভিযোগ সংশোধনের পরামর্শ দেয় থানা পুলিশ। পরবর্তীতে আমার নাম বাদ দিয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে বুধবার রাতে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী লিজা আক্তার।

কামরুল আরও বলেন, পরে লিজা আক্তারের সাথে কথা বলার পর জানতে পারি আমাকে আসামী করে লেখা অভিযোগটি রাজনৈতিক হীন স্বার্থে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলামের পরামর্শে তার অনুসারী আইনজীবীকে দিয়ে লেখার পর লিজাকে স্বাক্ষর করতে বলেন। উপজেলা ভূমি অফিসে বসে তিনি এই অভিযোগ লেখার জন্য আইনজীবীকে বলেন। নিহতের পরিবার আমার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় মামলায় আমাকে আসামী করতে রাজি হননি। জেলা পুলিশের সঠিক তদন্তের কারণে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়নি। তবে সংসদ সদস্য যে প্রভাব খাটিয়ে বাদীকে দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার চেষ্টা করেছেন তার সব তথ্য প্রমাণ হাতে পেয়েছি। এর আগেও সাংসদ হিরু দলের বহু নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছেন। এসব বিষয়ে দলীয় নেতাদের অবহিত করা হয়েছে। 

সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার আমি ভূমি অফিসে গেলে নিহত রানার মা ও স্ত্রী আমার কাছে গিয়ে ন্যায় বিচার দাবি করেন। তখন উপস্থিত দুই আইনজীবীকে সহযোগিতার জন্য বলেছিলাম। কামরুজ্জামান কামরুলকে আসামি করতে বলিনি। মামলায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তারা কামরুলের লোক। যদি তার সম্পৃক্ততা থাকে মামলার তদন্তে বের হয়ে আসবে।

মামলার বাদী লিজা আক্তার বলেন, হত্যার ঘটনার পর আমার মাথা কাজ করছিল না। প্রথমে আমরা ভুলবশত সন্দেহজনক হিসেবে সাবেক মেয়রকে আসামী করেছিলাম। পরে যখন বুঝতে পারি ঠিক কারা জড়িত ঠিক তাদের নাম দিয়ে মামলা করেছি। কারও চাপে পড়ে মামলায় আসামী করা বা বাদ দেয়া হয়নি।    

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক এরশাদ উল্ল্যাহ জানান, এ হত্যার ঘটনায়  নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি সাকিব, সেতু, রিপন ও হিরাসহ মোট ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 

 

 



এই বিভাগের আরও