মাধবদীতে সালিশে বিবাহ বিচ্ছেদের রায় শুনে গৃহবধূর আত্মহত্যা

২৬ আগস্ট ২০২০, ১১:৪২ এএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০২ এএম


মাধবদীতে সালিশে বিবাহ বিচ্ছেদের রায় শুনে গৃহবধূর আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর মাধবদীতে গ্রাম্য সালিশ বৈঠকে মাতবরদের দেওয়া বিবাহ বিচ্ছেদের রায় শুনে এক গৃহবধূর আত্মহত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় মাধবদীর পাইকারচর ইউনিয়নের সাগরদী গ্রামে নিজ বাড়িতে চালে দেওয়ার ওষুধ খেয়ে ওই নারী আত্মহত্যা করেন। তবে এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে মাধবদী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছে পুলিশ।

নিহত ওই গৃহবধূর নাম পারভিন বেগম (৪০)। তিনি মাধবদীর পাইকারচর ইউনিয়নের সাগরদী গ্রামের সাঈদ মিয়ার মেয়ে এবং একই এলাকার মো. জাহাঙ্গীরের দ্বিতীয় স্ত্রী। নিহত পারভিন স্থানীয় একটি টেক্সটাইল মিলে নারী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিনমাস আগে পরকীয়া প্রেমের জের ধরে পারভিনের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের দেড় লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে হয়। এদের দুজনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে। এই বিয়ের আগেই পারভিনের চার সন্তান ও জাহাঙ্গীরের তিন সন্তান রয়েছে।

নিহত গৃহবধূর স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, জাহাঙ্গীরের প্রথম স্ত্রী লিপি বেগম তার স্বামীর পুনরায় বিয়ের বিষয়টি মানতে পারেননি। তিনি গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ে সালিশ বৈঠক ডাকেন। ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দেন মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাইকারচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন, স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি অহিদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মিয়াসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তবে এই সালিশ বৈঠকে পারভিন উপস্থিত না থাকলেও একদিনের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর ও কাবিনের পরিবর্তে ২০ হাজার টাকা জরিমানার রায় ঘোষণা করা হয়। কাজ শেষে বিকেলে বাড়িতে ফেরার পর পারভিনকে সালিশ বৈঠকের রায় শুনানো হয়। পরে তিনি নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে চালে দেওয়ার ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। ঘটনার পরপরই পরিবারের সদস্যরা তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ওই গৃহবধূর স্বামী মো. জাহাঙ্গীরসহ ওই পরিবারের সকল সদস্য বর্তমানে পলাতক। একই সঙ্গে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানা সঙ্গে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। প্রতিবারই তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

নিহত ওই নারীর ছোটভাই মো. কাউসার জানান, ওই সালিশ বৈঠকে রায় দেওয়া হয়েছিল, জাহাঙ্গীর আর পারভিনের কাছে যেতে পারবে না। ওইদিনই সন্ধ্যার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের সব কার্যক্রম শেষ করতে হবে আর বুধবারের মধ্যে পারভিনের হাতে ২০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দিতে হবে। পরে বিকেলে জাহাঙ্গীর এসে পারভিনকে বলেন, আমি তোমাকে তালাক দিতে চাই না কিন্তু সবাই মিলে আমাকে বাধ্য করছে তোমাকে তালাক দিতে। জাহাঙ্গীর চলে যাওয়ার পরেই পারভিন আত্মহত্যা করে। এই ঘটনায় আমরা মামলা করবো।

নিহত পারভিনের বাবা সাঈদ মিয়া বলেন, আমার মেয়ে তো শুধু শুধু আত্মহত্যা করে নাই। কাদের জন্য সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হল তাদের সবার বিচার করতে হবে। এক ঘটনায় বাবা-মা হারিয়ে চারটা নাতি আমার এতিম হয়ে গেল আজ। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

পাইকারচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমরা সালিশে বসেছিলাম তবে পারভিন ওই বৈঠকে উপস্থিত না থাকায় পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়। কিন্তু ওই বিকেলেই পারভিনের সঙ্গে তার স্বামীর কথাবার্তা হয় এবং এরপরেই সে আত্মহত্যা করে। মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানার নেতৃত্বে ওই সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান জানান, পাইকারচরের সাগরদী গ্রাম থেকে আত্মহত্যা করা এক নারীর লাশ ময়না তদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ আমরা পাইনি তবে অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।