নরসিংদীতে কতিপয় শিক্ষকের নৈতিক স্খলনে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ

০৪ আগস্ট ২০১৯, ১১:০১ এএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৩ এএম


নরসিংদীতে কতিপয় শিক্ষকের নৈতিক স্খলনে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নরসিংদীর চরাঞ্চলসহ জেলার একাধিক বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এমন একাধিক ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়াসহ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। এতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশে নষ্ট হওয়া ও সামাজিক মর্যাদাহানির কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল, সচেতন সমাজ ও অন্যান্য স্বনামধন্য শিক্ষকবৃন্দ।

একাধিক এসব ঘটনায় সরাসরি বা লিখিত কোন অভিযোগ না থাকায় প্রশাসনও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এতে এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা অনেকটা বহাল তবিয়তে অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হয়ে আরও বেপরোয়া হচ্ছেন।
স্থানীয় শিক্ষানুরাগী, শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে এমন একাধিক ঘটনার সরেজমিন অনুসন্ধান করেছেন নরসিংদী টাইমস এর এই প্রতিবেদক।


সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে স্থানীয় বাসিন্দা, বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের পরিবারের সদস্যদের কথা বলে সত্যতা মিলেছে এসব অভিযোগের। এমনকি হাতে এসেছে ভাইরাল হওয়া শিক্ষক-কর্মচারীর অনৈতিক কাজের ভিডিও। এসব নৈতিক স্খলনের ঘটনা সবার জানা থাকলেও ব্যক্তিগত ঘটনা হিসেবে দেখে কেউ এসবের প্রতিবাদ করছেন না। অনেকে আবার এসব ঘটনাকে শিক্ষার পরিবেশকে কলুষিত করছে দাবী করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সম্প্রতি নরসিংদী জেলার একাধিক বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক-কর্মচারী কর্তৃক ঘটা এসব নৈতিক স্খলনজনিত ঘটনার উল্লেখযোগ্য হলো, অবৈধ শারীরিক মেলামেশা, শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টা, ছাত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন, সাবেক শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষকের প্রেম-বিয়ে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থীকে বিয়ে করা, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কর্তৃক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানী। এসব ঘটনার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।

শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানান, জেলার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেশীর ভাগই রাজনৈতিক পছন্দে নিয়োগপ্রাপ্ত। এসব কর্মচারীরা তাদের খেয়াল খুশিমত চলার কারণে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবের কারণে এসব কর্মচারীরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আদেশ নির্দেশও মানতে চায় না। প্রতিবাদ করলে শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ করছে তারা। কোথাও কোথাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা নিজে দায়িত্ব পালন করার পরিবতর্তে কম টাকায় বদলী কর্মচারী দিয়ে চাকুরির বেতন উত্তোলন করছে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও প্রধান শিক্ষক এসবের প্রতিবাদ করলে তারা অসদাচরণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মচারীদের কেউ কেউ শিশু শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির মত ঘটনাও ঘটাচ্ছে।
আবার কোন কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাতের আধারে সন্ত্রাসীদের নিয়ে মাদক সেবন ও অসামাজিক আড্ডা জমানো হচ্ছে। অতিসম্প্রতি নরসিংদী সদরের ভেলানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রিসোর্স সেন্টার থেকে ইয়াবা ও দেশীয় অস্ত্রসহ তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরমধ্যে ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জড়িত হওয়ায় তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।


সুধীজনদের মন্তব্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে যদি নৈতিক স্খলন দেখা দেয় সেখানে শিক্ষার পরিবেশ কতটুকু সুস্থ, শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী বিয়ে করা, শিক্ষকতায় কর্মরত থেকে স্বামী ত্যাগ করে পরকীয়া করা, অপ্রাপ্ত বয়সী ছাত্রীকে বিয়ে করা, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সাথে অবৈধ মেলামেশাসহ অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটলেও এসব যেন কোন অপরাধ-ই নয়। দিন দিন বিভিন্ন বিদ্যালয়ে এসব অনৈতিক ঘটনা বেড়েই চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব অনৈতিক ঘটনার পুণরাবৃত্তি বন্ধ না হলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতেই থাকবে। এসব অনৈতিক ঘটনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে অবসরপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম শাহজাহান বলেন, শিক্ষা হচ্ছে একটি পূণ্যময় কাজ। শিক্ষাদানে যারা জড়িত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকা-ে যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই নৈতিক শিক্ষায় উন্নততর হতে হবে। এখানে যদি কোনরূপ ফাঁকফোকর, অনৈতিক কর্মকা- ঘটে থাকে, তবে সংশ্লিষ্টদেরকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। অন্যথায় আজকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেভাবে অনৈতিক কর্মকা-ের প্রভাব বিস্তার হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে তথা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। সেজন্যে আজকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় যারা নিয়োজিত, শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ সকলকেই নৈতিক শিক্ষার মান উন্নত থেকে উন্নততর করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।



এই বিভাগের আরও