নরসিংদীতে অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই বিজ্ঞানাগার

২৩ অক্টোবর ২০১৯, ০১:১৯ পিএম | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৭ এএম


নরসিংদীতে অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই বিজ্ঞানাগার

শরীফ ইকবাল রাসেল:
নরসিংদী জেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নেই বিজ্ঞানাগার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেয়া হয় না ব্যবহারিক বিষয়ের পাঠদানও। এতে ব্যবহারিক বিষয় সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে বিজ্ঞান শিক্ষায় কলেজ পর্যায়ে গিয়ে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

নরসিংদী জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, জেলার ৬টি উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় ২১৪টি, স্কুল এন্ড কলেজ ৭টি এবং দাখিল মাদ্রাসা ৫৫টি, আলিম মাদ্রাসা ১৪টি ও ফাজিলা মাদ্রাসা ১৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগেই নেই বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য আলাদা কোন ভবন বা আলাদা কক্ষও। বিজ্ঞানাগার ও ব্যবহারিক পরীক্ষা-নিরিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে বিজ্ঞান বিষয়ক ব্যবহারিক শিক্ষা। দেয়া হয় না বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পাঠদান। ফলে হাতে কলমে বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে কলেজ পর্যায়ে গিয়ে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।


শিবপুর উপজেলার কারারচর মৌলভী তোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মানার বিনতে মোরশেদ জানায়, বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথমেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবহারিক পাঠদান। এছাড়া নেই আধুনিক মানের ল্যাব ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের (ব্যবহারিক) আলাদা শিক্ষক। যুগোপযোগী বিজ্ঞান শিক্ষা নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত বিজ্ঞানাগার স্থাপন, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় ও শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের দাবী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

একই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক মো: উমরাদ সরকার ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান ডিজিটালাইজেশনের যুগে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। আমাদের মাধ্যমিক লেভেলে বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি তথা ল্যাবরেটরি না থাকায় বিজ্ঞান শিক্ষায় পিছিয়ে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের।

পলাশ উপজেলার গয়েশপুর পদ্মলোচন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিজ্ঞানাগারের অভাবে নিয়মিত ব্যবহারিক পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় ব্যবহারিক বিষয়ে আশাতীত জ্ঞান তৈরি হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। এতে উচ্চতর শ্রেণিগুলোতে গিয়ে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের। বিজ্ঞানাগার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব দূর হলে ব্যবহারিক শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব।

নরসিংদী স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষক সমিতি (নকশিস) এর সভাপতি ও নরসিংদী ইন্ডিপেন্ডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা নরসিংদী টাইমসকে বলেন, বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ, আইসিটির যুগ। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিবিহীন প্রতিষ্ঠান অনেকটাই অসম্পূর্ণ। আমরা লক্ষ্য করছি যে, অধিকাংশ হাইস্কুল ও কোথাও কোথাও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানাগার নেই, আইসিটি ল্যাব নেই, সরঞ্জাম নেই, প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেই, হাতে কলমে তাদের শিখানো হচ্ছে না। কিন্তু চুড়ান্ত পরীক্ষায় তারা ভালো ফলাফল পাচ্ছে। এটা শুভঙ্করের ফাঁকি বলে আমি মনে করি।

নরসিংদী সরকারী বিশ^বিদ্যালয় কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদা আক্তার বলেন, আমরা বিজ্ঞান শিক্ষায় কলেজ পর্যায়ে যাদের পাই তাদের শ্রেণিকক্ষের পাঠদানের জ্ঞান খুব ভালো কিন্তু ব্যবহারিক পাঠদান না করে থাকলে কলেজের ল্যাবে আসলে বিভিন্ন উপকরণের নাম বলতে পারে না ও চিনেও না। এছাড়া সাবধানতাও অবলম্বন করতে হয়। স্কুল থেকে শিখে না আসলে আমাদের চিনিয়ে নিতে হয়। তাই স্কুল পর্যায়ে শিখে আসলে ভালো হয়।

বিজ্ঞানাগার সংকটের কথা স্বীকার করে নরসিংদী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: সৈয়দ উদ্দিন নরসিংদী টাইমসকে বলেন, কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নামেমাত্র বিজ্ঞানাগার থাকলেও নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। কোথাও কোথাও মাঝেমধ্যে শ্রেণিকক্ষেই দেয়া হয় ব্যবহারিক পাঠদান। পাঠদান না হলেও ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলোতে পাস দেখানো হয় শতভাগ শিক্ষার্থীকে। এতে প্রকৃতভাবে ব্যবহারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আমরা চেষ্টা করতেছি যেন প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ল্যাব ও ব্যবহারিক ক্লাস চালু করা যায়।



এই বিভাগের আরও