লিখতে লিখতে লিখে ফেলা গল্প

১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৫:৩৮ এএম | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৮ পিএম


লিখতে লিখতে লিখে ফেলা গল্প
ফাহিম ইবনে সারওয়ার একবার কি হয়েছিল কেউ বলতে পারে না। একদিনে অনেকগুলো ছোট ছোট ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। হ্যাঁ হ্যাঁ, শহর মানে এই ঢাকায়, রাজধানীতে। কি হলো সকালবেলার ঝুম বৃষ্টি দেখে নিপাট ভদ্রলোক কর্মজীবি মানুষটার মাথা খারাপ হয়ে গেল। লিখছিল একটা অফিসিয়াল ফরোয়ার্ডিং লেটার। লেখা শেষে দেখা গেল সেটা হয়ে গেছে রিজাইন লেটার। অথচ ঘরে তার দুটো ছোট বাচ্চা, একটা স্কুলে যায়। বউ ডিগ্রি পাশ গৃহিনী। চাকরিটা ছেড়ে দিলে ঢাকা শহরে থাকার ওই একটুখানি ভাড়াটে জায়গাটাও থাকবে না। তবু সে রিজাইন লেটারটা প্রিন্ট দিলো। এমন কিছু অফিসে ঘটেনি। কেউ কিছু বলেনি। এ বছর বেতনটাও ঠিকমত বেড়েছে। মাসের প্রথম সপ্তাহে নিয়মিত বেতন হয়, বছরে দুটো বোনাস। তবুও লোকটা, যার সাদা শার্টের কলারে ঘামের কালো দাগ, রিজাইন লেটারটা নিয়ে সোজা চলে গেল এইচআর ডিপার্টমেন্টে। অথচ পাশেই কিন্তু তার মত আরো একজন ছাপোষা কর্মচারী ছিল যে তাকে সাহস দিতে পারতো, বলতে পারতো,‘কত লাথি গুতা খেয়ে মানুষ চাকরি করে, আমরা তো সেই হিসেবে সুখেই আছি’। লোকটার রিজাইন লেটার দেখে এইচআর হেডও বিস্মিত! অনেকদিন পর কোন রিজাইন লেটার পেলেন কিনা! অফিসটা ভালো, সহজে কেউ চাকরি ছাড়ে না। ৫-১০-১৫ বছর ধরে কাজ করে চলছেন অনেকেই। তবে তিনি আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। কেন কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না সেটাও আরেক বিস্ময়। হয়তো তার মাথায় তখন ছোট ছেলেটাকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়াতে কত টাকা লাগবে সেই হিসাব চলছিল। ওই যে ওই লোকটা যে প্রতিদিন ১২ টাকা লেগুনা ভাড়া দিয়ে অফিসে আসে সে কিন্তু রিজাইন দিয়েই দিল। বাসায় ফিরে আসলো সুস্থিরভাবে। বৃষ্টি কিন্তু আর নেই। লোকটার মাথা ঠিক হলো না। বাড়িওয়ালাকে গিয়ে বলে আসলেন, বাসাটা পরের মাসে ছেড়ে দেবেন। বাড়িওয়ালা জানতে চাইলেন,‘কেন? কোন সমস্যা?’ এরকম নির্ঝঞ্জাট ভাড়াটিয়া তো সহজে মেলে না তাই বাড়িওয়ালা তাকে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লোকটা তো থাকবেন না। তার অনেক সমস্যা। আর সব সমস্যা এই ঢাকা শহরটাকে নিয়ে। তিনি এখানে আর থাকবেন না। ছেলেপুলে দুটোকে ঢাকার নামি স্কুলে আর পড়াবেন না। ওদেরকে নিয়ে চলে যাবেন বাড়িতে। তিনি তো সেখানেই বড় হয়েছেন। জিলা স্কুলে পড়েছেন, মাঠে খেলেছেন, তাহলে তার ছেলেদের সেখানে পড়াতে সমস্যা কোথায়? ভদ্রলোক স্ত্রীকে সব জানালেন, তার স্ত্রীও খুশি। কারণ তাদের সব আত্মীয় স্বজন তো সেখানেই সেই মফস্বলের পাড়ায়। বাচ্চারাও খুশি। এই স্কুলের এত পড়া আর পরীক্ষা তাদের ভালো লাগে না। এর চেয়ে বরং বাড়ি গেলে আরো ভাইবোনদের সাথে খেলতে খেলতে পড়ারও একটা বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। সবাই যখন এত খুশি তখন আর গল্পটা টেনে লাভ কি। একজন মানুষ যেতে চাইছে যাক। একটা পরিবার শহর ছাড়তে চাইছে, ছাড়ুক না। একটা ভাড়াটিয়া কমে গেলে কি আর হবে? ঢাকায় কি আর ভাড়াটিয়ার অভাব? তবে হলো কি, সেদিনই আবার পরিবহণ ধর্মঘট। দূরপাল্লার কোন বাস ছাড়বে না ঢাকা থেকে। এই কারণে ওই লোকটা যার মাসিক বেতন সর্বসাকুল্যে ২৫ হাজার ৭০০ টাকা আরো কিছুদিন অপেক্ষা করলেন। ঢাকাতে তিনি আর থাকবেন না, শুধু ধর্মঘটটা ছুটলেই হলো।  


এই বিভাগের আরও