নরসিংদীর এক প্রবাসীর নাম ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট করিয়ে নিলো এক রোহিঙ্গা!

২১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১০:০৫ এএম | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৮ পিএম


নরসিংদীর এক প্রবাসীর নাম ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট করিয়ে নিলো এক রোহিঙ্গা!
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রমজান মিয়া নামে নরসিংদীর এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর নাম ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট করিয়ে নিয়েছেন সমীর খান নামের এক রোহিঙ্গা। প্রবাসী রমজান মিয়া নরসিংদী সদর উপজেলার নন্দলালপুর (আমিরাবাদ) গ্রামের আবু কালামের ছেলে। প্রবাসী রমজান মিয়া সম্প্রতি মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানালে তার নামে রোহিঙ্গা নাগরিকের পাসপোর্ট ইস্যু করিয়ে নেয়ার ঘটনাটি ধরা পড়ে। টেলিফোনে প্রবাসী রমজান, নরসিংদীর বাড়ীতে গিয়ে তার স্ত্রী মর্জিনা বেগম ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্মসংস্থানের আশায় তিন বছর আগে জাহাজে ভেসে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দেয় রিকশাচালক রমজান মিয়া। সেখানে যাওয়ার পর প্রতিবেশী জয়নাল আবেদীনের আত্মীয় মালয়েশিয়া প্রবাসী মোহাম্মদ আলী ওরফে মফিজ রমজান মিয়াকে সমীর খান (৫ বছর ধরে মালয়েশিয়ায়) নামে তার পূর্বপরিচিত এক রোহিঙ্গার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দেন। কিছুদিন কাজ করার পর মালয়েশিয়াস্থ হাইকমিশনের মাধ্যমে বৈধভাবে পাসপোর্ট করে দেয়ার নাম করে রমজানের নিকট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ছবি, জন্মসনদসহ ৪০ হাজার টাকা নেয় মোহাম্মদ আলী। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও পাসপোর্ট করে না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে আলী। এক পর্যায়ে আলী আত্মগোপনে অন্য কোথাও কাজ নিয়ে লুকিয়ে থেকে রমজানের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সম্প্রতি রমজান তার নামে পাসপোর্ট করিয়ে দেয়ার জন্য তার কর্মস্থলের মালিকের নিকট অনুরোধ জানান। মালিকের সহযোগিতায় রমজান মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। পরে হাইকমিশন কর্তৃক দেয়া জমা স্লীপ নিয়ে পাসপোর্ট ইস্যুর তারিখ অনুযায়ী পাসপোর্ট আনতে যান রমজান মিয়া। এসময় তাকে জানানো হয় তার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে অন্য একজন পাসপোর্ট করিয়ে নিয়েছেন। খোঁজ করে রমজান জানতে পারেন তাঁর সাবেক সহকর্মী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক সমীর খানের নামে (রমজান নামে) পাসপোর্টটি ইস্যু করা হয়েছে। রমজানের দেয়া নকল ও আসল জমা রসিদ (স্লীপ) পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উভয় রসিদে রমজান মিয়া, পিতা আবু কালাম, মাতা শেফালি বেগম, গ্রাম, নন্দলালপুর, নরসিংদী সদর, নরসিংদী লেখা। কিন্তু একটি রসিদে (রোহিঙ্গার) গ্রামের নাম নন্দলালপুর এর স্থলে লেখা আমিরাবাজ। স্থানীয়রা জানান, কাগজেপত্রে গ্রামটির নাম-নন্দলালপুর, ডাকনাম আমিরাবাদ/আমিরাবাজ। রসিদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী রমজানের নং ১৯৮৫৬৮১৬০২৫০০০০১৬ কিন্তু অপরজনের স্লীপে (রোহিঙ্গার নামে ইস্যু পাসপোর্টের তথ্যমতে) এনআইডি নং ১৯৮৫৬৮১৬০২৫১০৩১৪৩ লেখা রয়েছে। নরসিংদীর নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে পাসপোর্ট ইস্যু করা এনআইডি নম্বরের অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া যায়নি। সরেজমিন গিয়ে ইস্যুকৃত পাসপোর্টধারীর ছবি দেখালে গ্রামের কোন বাসিন্দা চিনতে পারেননি। ঠিকানামতে সবাই চেনেন প্রবাসী রমজানকে। প্রবাসী রমজান মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হলে বাড়ীতে গিয়ে পুলিশ তদন্তও করেছে। কিন্তু তদন্তের পর কীভাবে একজনের ঠিকানায় অন্যজনের পাসপোর্ট হয়? তাও আবার ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করে? এসব জালিয়াতির সঙ্গে প্রবাসী মোহাম্মদ আলী ওরফে মফিজ জড়িত থাকতে পারে। পুলিশী গাফিলতি বা অসৎ উদ্দেশ্যও ছিল অবশ্যই। রমজানের স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, বাড়ীতে এক (রমজান নামে) পুলিশ সদস্য এসে নাম ঠিকানা যাচাই করে বলেছিল এই পাসপোর্টের জন্য ঢাকায় গিয়ে কাজ করতে হলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাগবে। এসময় পুলিশ ৫ হাজার টাকা দাবী করেন এবং দুটো কাগজে আমার মায়ের স্বাক্ষর নেন। পরে আমরা গরীব বলে নরসিংদী স্টেশন বটতলা গিয়ে দেখা করে ওই পুলিশ সদস্যকে ২ হাজার টাকা দেই এবং অনুরোধ করি। রমজানের পাসপোর্ট বিষয়ে পুলিশ কর্তৃক সরেজমিন তদন্তে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন ও আশাব উদ্দিন ভুঁইয়া। নরসিংদীর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জেবুন্নাহার পারভীন বলেন, আমি নরসিংদীর কর্মস্থলে নতুন। তাছাড়া যতটুকু জানতে পেরেছি পাসপোর্টটি কুয়ালালামপুর দূতাবাসে হয়েছে। এরবেশি আমি কিছুই বলতে পারছি না। নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, পাসপোর্টের জন্য পুলিশ যথাযথ তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়ে থাকে। প্রবাসী রমজানের ক্ষেত্রেও তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। সেই রিপোর্ট দেয়ার পর কার পাসপোর্ট কাকে দিলো, না দিলো সেটা পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বিষয়।


এই বিভাগের আরও