শিবপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তিন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদকে মিথ্যা দাবী

৩১ আগস্ট ২০১৯, ১০:০৯ পিএম | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৩ এএম


শিবপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তিন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদকে মিথ্যা দাবী

মোমেন খান:
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের শহীদ জয়নাল আবেদীন সরকার স্মৃতি সংসদ এর সভাপতি ও তরুন লীগ নেতা জাহিদ সরকারের বিরুদ্ধে সম্প্রতি তিনটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদকে মিথ্যা দাবী করা হয়েছে।
৩১ আগষ্ট (শনিবার) সকালে উপজেলার কুন্দারপাড়া জয়নাল আবেদীন সরকার স্মৃতি সংসদ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জাহিদ সরকার লিখিত বক্তব্যে নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল সাংবাদিকদের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে। আমি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। “মিলন হত্যা মামলার সাক্ষীকে হত্যার হুমকি” শিরোনামে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পুর্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে জাহিদ বলেন, আপনারা এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানতে পারবেন আমি সবসময় সততার সঙ্গে খুব স্বাভাবিক জীবন যাপন করে আসছি। এলাকার সার্বিক উন্নয়নে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করে আসছি। পত্রিকায় প্রকাশিত আব্দুল জলিল(৫০) নামক এক ব্যক্তিকে হত্যা ও তার ছেলেকে তুলে নেয়া প্রসঙ্গটিও মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ১৯৯১ সালে সংঘটিত ১০ লক্ষ টাকার ব্যাংক ডাকাতি মামলা আমার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ আমার জানামতে আমাদের এলাকায় জনতা ব্যংকের কোনো শাখা ছিলো না, এখনো নেই।
গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার এজেন্ট মিলন হত্যাকাণ্ডের সাথে আমাকে জড়িয়ে সংবাদটিতে যে তথ্য প্রকাশ করেছে তা কাল্পনিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। নৌকার এজেন্ট মিলন হত্যাকাণ্ডের সময় আমি ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলাম না। এলাকার হাজারো জনতা তার সাক্ষী। পরবর্তীতে আমি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কাছে হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, যা সত্য উদঘাটনে সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তাছাড়া আমি মিলন হত্যার আসামী কিংবা সাক্ষী নই। বিএনপি কর্মী ফিরোজ হত্যা মামলার বিষয়ে জাহিদ সরকার বলেন, ফিরোজ ছিলো জামায়াত বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী। আমি ও আমার ভাই তৎকালীন বাঘাব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন সরকার আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক এই মামলায় আমাকে জড়ানো হয়। পরবর্তীতে আমি এই মামলা থেকে অব্যাহতি পাই।
সংবাদে প্রকাশিত ইউসুফ হত্যার বিষয়ে জাহিদ সরকার বলেন, ইউসুফ ছিলো সর্বহারা বাহিনীর পাহাড়ি এলাকার প্রধান। শিবপুরের সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ রবিউল আউয়াল খান কিরণ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী ছিলো ইউসুফ। এই মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলো আমার বাবা মরহুম কালা মিয়া সরকার ও আমার ভাই শহীদ জয়নাল আবেদীন সরকার। কিরণ খানের হত্যার একবছর পরে ওই মামলার সাক্ষী আমার বাবা ও চাচাতো ভাই আহামেদ সরকার কে খড়কমারা সিএন্ডবি বাজারে গুলি করে হত্যা করে ইউসুফ। ওই মামলায় ইউসুফের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়। ১৭ বছর কারাভোগের পর বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় এলে সাধারণ ক্ষমায় সে মুক্তি পায়। মুক্তি পেয়ে এলাকায় এসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এবং তৎকালীন বাঘাব ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন সরকার তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে ইউসুফ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী জয়নাল আবেদীন সরকারকে গুলি করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
পরবর্তীতে চুরি ডাকতি ও চাঁদাবাজির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে তার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড জসিমের সাথে বিরোধের জের ধরে ইউসুফ খুন হয়। এই হত্যা মামলায় আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামী করা হয়। পরবর্তীতে ইউসুফ হত্যার জেরে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে ইউসুফের অনুসারীরা জসিমকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডেরও মামলায় আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের আসামী করা হয়। বিএনপি জামাত জোট সরকারের প্রভাবশালী নেতার তদবিরে ওই মামলায় আমার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হয়। পরে উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে এই মিথ্যা মামলা থেকে আমি বেকসুর খালাস পাই।
জাহিদ সরকার আরও বলেন, আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান, আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে গিয়ে জীবনে অনেক নির্যাতন নিপীড়ন সইতে হয়েছে। হারাতে হয়েছে পরিবারের প্রিয়জনদের, তবুও আমি আওয়ামী আদর্শ থেকে চুল পরিমাণ বিচ্যুত হইনি। আমার বড় ভাই বাঘাব ইউনিয়নের নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ছিলেন। ভাইজানের অসমাপ্ত স্বপ্নগুলো পূরণের লক্ষ্যে বাঘাব ইউনিয়নবাসীর উন্নয়নে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এলাকায় গড়ে তুলেছি শহীদ জয়নাল আবেদীন সরকার স্মৃতি সংসদ। এই স্মৃতি সংসদের মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি।
আসন্ন বাঘাব ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলনে আমি সভাপতি প্রার্থীতার নাম ঘোষণা করেছি ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি সম্ভাব্য প্রার্থী। এতে স্থানীয় আওয়ামী নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যার ফলে একটি বিশেষ কুচক্রী মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার ও মিথ্যা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। অনুগ্রহপূর্বক সত্য প্রকাশ করে এসব অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের হাত থেকে আমাকে এবং আমার পরিবারকে রক্ষা করুন।

উল্লেখ্য, ২৫ জুন দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায়, ৮ জুলাই দৈনিক প্রথম আলো ও ২৪ আগস্ট দৈনিক যুগান্তরে তরুন লীগ নেতা জাহিদ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশিত হয়।