ইমাম গাজ্জালী (রহ.)-এর বর্জনীয় দুটি উপদেশ

০৬ নভেম্বর ২০২২, ০৪:৫৯ পিএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ এএম


ইমাম গাজ্জালী (রহ.)-এর বর্জনীয় দুটি উপদেশ

টাইমস ডেস্ক:

প্রথম: যথা সম্ভব কারো সঙ্গে কোনো বিষয়ে তর্কে না জড়ানো। কারণ এতে কল্যাণ অপেক্ষা ক্ষতির দিকটাই বেশি। লাভের তুলনায় তর্কের ক্ষতি, খুবই ‘খতরনাক’ ও বিপদজনক। সাধারণ কোনো বিষয় নিয়েও বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে, মানুষের ভেতরে থাকা মন্দ স্বভাবগুলো প্রকাশ পেয়ে যায়। যেমন- আত্মম্ভরিতা ও দাম্ভিকতা, হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা, ঘৃণা ও পরনিন্দা ইত্যাদি। তবে কোনো বিষয়ে তোমার সাথে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির বিরোধ সৃষ্টি হয়। আর তুমি শুধু সেই সমস্যার মূল সত্যটা প্রকাশ করতে চাও, অন্যকিছু তোমার উদ্দেশ্য না হয়, তাহলে তাদের সঙ্গে যুক্তিতর্কে যাওয়া তোমার জন্য ঠিক আছে। যেতে পারো, কিন্তু তোমার উদ্দেশ্য থাকবে শুধু সত্য বিষয়টি প্রকাশ করা অন্যকিছু নয়-এটা বুঝার দুটি আলামত রয়েছে। ১) ঘটনার সত্যতা তোমার নিজের দ্বারা প্রকাশ পাক বা অন্য কারো মাধ্যমে সত্য প্রকাশ পাওয়াতে তোমার কোনো আপত্তি না থাকা। ২) মুনাযারা বা তর্কবিতর্ক জনসম্মুখে হওয়ার চেয়ে নিজেদের মাঝে ঘরোয়া পরিবেশে হলে তোমার কোনো আপত্তি থাকতে পারবে না। বৎস! এখানে তোমাকে আমি গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলতে চাই। হৃদয়ের কান দিয়ে শোন। মনের সমস্যার সমাধান জানতে চাওয়ার অর্থ হলো অন্তরের চিকিৎকের কাছে অন্তরের ব্যধির কথা জানানো। আর সমস্যার সমাধান দেয়ার অর্থ হলো রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করা।

আর শোন! জাহেলরা হলো অন্তর-ব্যধিতে আক্রান্ত। আর আলেমগণ হলেন অন্তর-ব্যধির চিকিৎসক। কিন্তু সাধারণ যে কোনো আলেম সুচিকিৎক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। আবার কামেল আলেমগণ সব রোগের চিকিৎসাও করেন না। বরং যার মাঝে চিকিৎসা গ্রহণের যোগ্যতা এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পান- তার চিকিৎসাই করেন। শারীরিক রোগের চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এজন্যই শারীরিক অসুস্থতার কারণ যদি হয় বার্ধক্য বা বন্ধ্যাত্ব তাহলে বিচক্ষণ ডাক্তার বলে দেন, ‘চিকিৎসায় রোগীর কোনো উন্নতি হবে না।’ অহেতুক ঔষধ সেবনে রোগীকে কষ্ট না দেয়াই ভালো।

বৎস! মুর্খতাজনিত ব্যধি চার প্রকার। এক প্রকার শুধু চিকিৎসার দ্বারা ভালো হয়। বাকি তিন প্রকরের বেলায় চিকিৎসা কোনো কাজে আসে না। (ক) মুর্খতাজনিত যে ব্যধিগুলোতে চিকিৎসা কোনো কাজে আসে না তার একটি হলো হিংসা-বিদ্বেষ। যদি কোনো ব্যাক্ত হিংসা-বিদ্বেষের কারণে কোনো প্রশ্ন তুলে বা আপত্তি করে তাহলে যত বিশুদ্ধভাবে যুক্তিপূর্ণ ও অলংকারপূর্ণ ভাষায়ই তুমি উত্তর দাও না কেন সে বোঝার চেষ্টাও করবে না। মানবে তো দূরের কথা। তোমার উত্তর শুধু তার বিদ্বেষ ও ক্ষোভ বৃদ্ধি করবে। এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো হলো উত্তর না দেওয়া। তাই কবি বলেন, সব ধরণের শত্রুতা শেষ হয়ে যাবে, শেষ হয় না শুধু হিংসার শত্রুতা। সুতরাং তোমার উচিত হলো হিংসুকদের থেকে দূরে থাকা। তাকে নিজের অবস্থায় ছেড়ে দেয়া। তার মত, পথ ও বিশ্বাস নিয়েই পড়ে থাকুক। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-‘আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকে আপনি তাকে এড়িয়ে চলুন। সেতো শুধু পার্থিব জীবনই কামনা করে।’ (নাজম : ২৯) হিংসুকের প্রতিটি আচরণ ও উচ্চারণ তার ইলমের ফসলকে জ্বালিয়ে দেয়। হাদিস শরিফে আছে-হিংসা নেক আমলসমূহকে এমনভাবে ভস্মীভূত করে দেয় যেমনিভাবে আগুন জ্বালানী কাঠকে ভস্মীভূত করে দেয়। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯০৩)

(খ) মুর্র্খতাজনিত দ্বিতীয় ব্যধিটি হলো নির্বুদ্ধিতা। এই ব্যধিটিও চিকিৎসায় ভালো হয় না। হযরত ঈসা (আ.) উল্লেখ করেছেন- ‘আল্লাহর অনুগ্রহে আমি মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু নির্বোধের চিকিৎসায় আমি অক্ষম হয়ে গেছি।’ নির্বুদ্ধিতার একটি উদাহরণ । এক ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণে কিছু সময় ব্যয় করেছে। ফলে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শরীয়তের সামান্য কিছু বিষয় সে জানতে পেরেছে। এই ব্যক্তি একদিন কোনো বিষয়ে প্রশ্ন তুললো। তখন এমন একজন বিজ্ঞ আলেম এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন যার সারাটা জীবন ব্যয় হয়েছে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শরিয়তের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা অধ্যয়ন ও গবেষণা করে। কিন্তু এই নির্বোধ নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণে ই’তিরায বা ভুল আপত্তি উত্থাপন করে বসলো। কারণ সে তো কিছুই জানে না। তাই সে ধারণা করে আমার কাছে যে বিষটি দুর্বোধ্য বিজ্ঞ আলেমদের কাছেও তা দুর্বোধ্য হতে হবে। তাই সে কিছুই মানতে চায় না। এখন এই সাধারণ বিষয়টি যার বোধগম্য নয় তার প্রশ্ন উত্থাপন তো নির্বুদ্ধিতা ছাড়া অন্য কিছু হবে না। সুতরাং এ ধরণের নির্বোধের উত্তর না দেওয়াই সমীচীন।


বিভাগ : ধর্ম


এই বিভাগের আরও