ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব চিন্তার ফসল: প্রধানমন্ত্রী

২৬ আগস্ট ২০২০, ০৮:১৩ পিএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৮ পিএম


ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব চিন্তার ফসল: প্রধানমন্ত্রী
ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছয় দফা প্রণয়নটা অনেকে অনেকভাবে বলতে চায়- এর পরামর্শ ওর পরামর্শ। কিন্তু আমি নিজে জানি, এটা সম্পূর্ণ তার (বঙ্গবন্ধুর) নিজের চিন্তার ফসল। বুধবার (২৬ আগস্ট) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক আয়োজিত ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাকে যখন গ্রেপ্তার করা হলো, আটান্ন (১৯৫৮) সালে, তিনি ঊনষাট সালের ১৭ ডিসেম্বর মুক্তি পান। সে সময় রাজনীতি নিষিদ্ধ। ঢাকার বাইরে যেতে পারতেন না, সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তখন তিনি চাকরি নিলেন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে। তাজউদ্দীন সাহেব মুক্তি পেয়ে একটা চাকরি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিজে গিয়ে তাজউদ্দীন সাহেবকে নিয়ে আসলেন এবং তার ইন্স্যুরেন্সে চাকরি দিলেন। মোহাম্মদ হানিফ, তাকেও কিন্তু আলফা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি দিলেন তার পিএ (ব্যক্তিগত সহকারী) হিসেবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় নিজে বসে বসে চিন্তা করতেন, নিজেই লিখতেন এবং হানিফকে দিয়ে এটা টাইপ করাতেন। এখানে শুধু হানিফ জানত, সেই টাইপ করেছিল। এছাড়া কিন্তু আর কারো জানার ছিল না। কাজেই এটা (ছয় দফা) সম্পূর্ণ তার নিজের চিন্তা থেকে করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যখন লাহোরে যান, লাহোরে গিয়ে এটা পেশ করার চেষ্টা করেন, সেখানে প্রচণ্ড বাধা আসে। বাধা পাওয়ার পর তিনি ওখানেই একটা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের কাছে এটা তুলে ধরেন। তারপর ওরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তার বিভিন্ন উদ্যোগের একটি পর্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যে আজকে স্বাধীন দেশ, স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি, আমাদের আত্মপরিচয়ের সুযোগ হয়েছে, আত্মমর্যাদার সুযোগ হয়েছে, এ সুযোগটা যিনি এনে দিয়েছিলেন এবং কীভাবে তিনি দিয়েছিলেন তারই একটি পর্যায় হচ্ছে এই ছয় দফা।

করোনার কারণে সশরীরে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে না পেরে আক্ষেপ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য এটুকু যে যেখানে নিজে উপস্থিত থেকে পুরস্কারটা হাতে তুলে দেয়া যেত… আরও খুশি হতে পারতাম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজকে করোনাভাইরাস নামে এমন একটা ভাইরাস শুধু বাংলাদেশ না, সারাবিশ্বে দেখা গেছে। আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অনেকটা অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে কারও জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা আমরা চাইনি।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে স্বাধীন হলো, এই স্বাধীনতার চিন্তাটা জাতির পিতা কখন নিয়েছিলেন? কেন নিয়েছিলেন? পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্র তৈরি হয়েছিল সেখানে পূর্ব পাকিস্তান বা আমাদের পূর্ব বাংলা ছিল তার একটা অঙ্গরাষ্ট্র। পাকিস্তানের যে আন্দোলন সেই আন্দোলনটাও কিন্তু হয়েছিল আমাদের এই ভূখণ্ডে। এখানে কিন্তু পশ্চিমাদের অবদান খুব একটা ছিল বলে আমরা দেখি না। সেই সময়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, তার সঙ্গে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।

শেখ হাসিনা বলেন, লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে কয়েকটি আলাদা আলাদা রাষ্ট্র হবে। কিন্তু সেটাকেও পরিবর্তন করা হয়েছিল। পাকিস্তান হলো এবং আমাদের এই ভূখণ্ডকে তার একটা অঙ্গরাজ্য করা হলো। দুর্ভাগ্য হলো পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে বঞ্চনার শিকার হতে হলো আমাদের অর্থাৎ বাঙালিদের। রাজধানী নিয়ে গেল করাচিতে যেখানে মরুভূমি। আমাদের মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নিল। বাংলায় কথা বলতে দেবে না, উর্দু শিখতে হবে। এরই প্রতিবাদ শুরু হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি উদ্যোগ নিলেন। তারই প্রস্তাবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার একটা কমিটি গঠন হলো এবং সেখান থেকে আন্দোলন শুরু। রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, আমাদের দেশের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী অধিকার আন্দোলন- এসব আন্দোলন নিয়েই কিন্তু আবার নতুন করে যে সংগ্রাম শুরু, এই সংগ্রাম পথ বেয়েই কিন্তু আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আটান্ন সালে যখন তিনি (বঙ্গবন্ধু) গ্রেপ্তার হন সেই সময় থেকেই তিনি প্রস্তুতি নিলেন কীভাবে এই ভূখণ্ডের মানুষকে স্বাধিকার এনে দেবেন। বাষট্টি সালে তার একটা উদ্যোগ ছিল পুরো বাংলাদেশ প্রত্যেকটা এলাকায় নিউক্লিয়াস ফর্ম করে এদেশের মানুষকে সচেতন করা। এরই একটা পর্যায়ে তিনি আবার গ্রেপ্তার হলেন। ১৯৬৫ সালে যখন ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হলো তখন আমরা একেবারেই অরক্ষিত ছিলাম। তখনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিদ্ধান্ত নিলেন এবং তিনি এই ছয় দফা প্রণয়ন করেন।


বিভাগ : বাংলাদেশ