বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:৫৭ পিএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৩ পিএম


বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্বাধীনতার সূর্য সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ এর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৫ সেপ্টেম্বর। জীবনের শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত সৈনিক জীবনের কঠিন দায়িত্ববোধ থেকে বিচ্যুত না হয়ে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। নিজে এগিয়ে গেছেন সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে। তার সে চেষ্টা সার্থক হওয়ায় নিরাপদে ফিরতে পেরেছিলেন সহযোদ্ধারা। শুধু ফিরে আসেননি নূর মোহাম্মদ। শত্রুপক্ষের একটি মর্টারের গোলা কেড়ে নেয় তার জীবন। পরে জঙ্গলের মধ্যে পাওয়া যায় এই বীরের নিস্তেজ দেহ। পাকিস্তানিরা তার দুটি চোখ উপড়ে ফেলে দেহকে ছিন্নভিন্ন করেছিল বেয়নেটের খোঁচায়।


বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের মহেশখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আমানত শেখ, মা জেনাতুননেছা। নূর মোহাম্মদ ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ছোট বেলায় বাবা-মাকে হারানোয় অভাবের কারণে লেখাপাড়া বেশি দূর আগায়নি তাঁর। ১৯৬৯ সালে ভর্তি হন তৎকালীন ইপিআরে (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি)। ট্রেনিংয়ের পর তার পোস্টিং হয় দিনাজপুর। সেখানে ছিলেন ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। তার পর আসেন যশোর হেড কোয়ার্টারে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে নূর মোহাম্মাদের সৈনিক মনে নাড়া দেয় স্বাধীনতা, আর স্বদেশ প্রেম। নিজের সচেতন বিবেকবোধ তাকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্ধুদ্ধ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ৮নং সেক্টরের অধীনে যশোরে। প্রতিষ্ঠানিক সামরিক প্রশিক্ষণ থাকায় তাকে একটি কোম্পানির প্রধান নিযুক্ত করে যশোরের সীমান্তবর্তী গোয়ালহাটি টহলের দায়িত্ব দেয়া হয়।


৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, এদিন নূর মোহাম্মদকে দায়িত্ব দেয়া হয় পাক বাহিনীর অবস্থানের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখার। তার সঙ্গে ছিলেন সিপাহী নান্নু মিয়া ও সিপাহী মোস্তফা। কিন্তু বিকেলে পাক বাহিনীর নজরে পড়ে যান তারা। চারপাশে অবস্থান নেয় শত্রুসেনারা। শুরু হয় অবিরাম গুলিবর্ষণ। নান্নুর কাছে থাকা হালকা মেশিনগানটিই ছিল তাদের প্রধান অস্ত্র। গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ফিরতে থাকেন তারা তিনজন। এমন সময় হঠাৎ একটি বুলেট এসে সিপাহী নান্নুর বুকে ঢুকে বেরিয়ে যায়। মাটিতে পড়ে যান নান্নু মিয়া। এলএমজি হাতে তুলে নেন নুর মোহাম্মাদ। এক হাতে নান্নু মিয়াকে নিয়ে আর অন্য হাতে অবিরাম গুলি করতে থাকেন। এ সময় ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করেছিলেন তিনি। যাতে শত্রু সেনারা বুঝতে না পারে কোন দিক থেকে, কতজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের সঙ্গে লড়ছে। ঠিক তখন মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে নূর মোহাম্মাদের ডান পায়ে। শেষ পরিণতির কথা বুঝতে পেরেও দমে যাননি তিনি। সহযোদ্ধদের বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেন। মোস্তফার এক হাতে ছিল এলএমজি। আদেশ দিলেন অবস্থান পাল্টে শত্রুর দিকে গুলি ছুঁড়তে। সেই সঙ্গে আহত নান্নুকে নিয়ে পেছনে ফিরতে। তারপর আবার নিজ হাতে এলএমজি তুলে নিয়ে শক্রদের ঠেকাতে থাকেন। যাতে নান্নুকে নিয়ে মোস্তফা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারে। কিন্তু সহযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে ফেরাতে পারলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নিস্তেজ হয়ে পড়েন নূর মোহাম্মাদ। পরে নিকটবর্তী একটি ঝোপের পাশে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ পাওয়া যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার তাকে মরণোত্তর 'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করে। মহান এই বীরের সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছা গত বছরের (২০১৮) ২১ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে একমাত্র ছেলে গোলাম মোস্তফা ও তিনকন্যা জীবিত রয়েছেন।


পরে তাকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় যশোরের শার্শা উপজেলার উত্তর সীমান্তবর্তী কাশিপুর গ্রামে দাফন করা হয়।
এদিকে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার কাশিপুরে নূর মোহাম্মাদ স্মৃতি সৌধে বিজিবি, উপজেলা প্রশাসন, সরকারি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মাদ কলেজ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচির মধ্যে আছে বীরের সম্মানে গার্ড অব অনার, স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধাঞ্জালি অর্পণ, রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা ইত্যাদি।


বিভাগ : বাংলাদেশ