ইবাদতের ধারাবাহিকতা আল্লাহর পছন্দ

১৩ আগস্ট ২০২০, ১১:৫৭ পিএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:১০ পিএম


ইবাদতের ধারাবাহিকতা আল্লাহর পছন্দ
ফাইল ছবি

জীবনযাপন ডেস্ক:

আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মুসলমানরা ইবাদত ও নেক আমল করে। ফরজ ওয়াজিব আমলগুলোর বাইরে মর্যাদাপূর্ণ বেশ কিছু নফল ও মুস্তাহাব আমল রয়েছে, যা পালন করা আবশ্যকীয় বিধান নয়। তবু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সেসব আমলের ধারাবাহিকতার কোনো বিকল্প নেই। তবে রমজান, শাওয়াল, জিলহজ ও শবেকদরসহ কিছু বিশেষ ফজিলতপূর্ণ সময়ে সাধারণ মুসলমানরাও নফল আমলে অধিক তৎপর হয়। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায়, অলসতা ও অবহেলায় আমলগুলো ধারাবাহিক চালিয়ে নেওয়া যায় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সে (নির্বোধ) নারীর মতো হয়ো না, যে তার পাকানো সুতা শক্ত করে পাকিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯২)

অর্থাৎ কোনো কাজ করার পর তা ছেড়ে দেওয়া ওই নির্বোধ মহিলার সুতা ছিঁড়ে ফেলার মতোই। আমল কম হলেও যদি তাতে ধারাবাহিকতা থাকে, তাহলে আল্লাহ তাআলা সে আমল পছন্দ করেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বলেন, ধারাবাহিক আমল, যদিও তা অল্প হয়।’ (বায়হাকি, হাদিস : ৪২৪০)

নবীজির আমলের ধারাবাহিকতা: রাসুল (সা.) ধারাবাহিক আমলে খুবই যত্নশীল ছিলেন। এ জন্য কখনো কখনো তাহাজ্জুদ নামাজেরও কাজা পড়েছেন। সুন্নত নামাজও ছুটে গেলে পরে আদায় করে নিয়েছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যদি অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে কোনো রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তখন তিনি পরের দিন ১২ রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৮১)

উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুল (সা.) আসরের পর আমার গৃহে আগমন করেছেন। তারপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এটি কোন নামাজ? এর আগে তো কখনোই আপনি এ সময়ে নামাজ আদায় করেননি!’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘জোহরের পর বনি তামিম গোত্রের একদল প্রতিনিধি আগমন করেছিল, ফলে আমি জোহরের পরের দুই রাকাত (সুন্নত) নামাজ আদায় করতে পারিনি। (তাই আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য আসরের পর তা আদায় করলাম)।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস : ১২৭৭)

ধারাবাহিক আমলের উপকারিতা:
আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন : ধারাবাহিক আমলে আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি একজন মুমিনের পরম পাওয়া। হাদিসে কুদসিতে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ‘আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। একপর্যায়ে আমি তাকে এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

আমলের অপারগতায়ও সওয়াব: ধারাবাহিক আমলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফায়দা হচ্ছে বিশেষ অপারগতায় ও অসুস্থতায়ও আমলের সওয়াব লেখা হতে থাকে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন বান্দা অসুস্থ হয় কিংবা সফরে থাকে, তখন তার জন্য তা-ই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় আমল করত।’ (বুখারি, হাদিস : ২৯৯৬)

ধারাবাহিক আমলের ওপর স্থির থাকার উপায়
নেককার বান্দাদের সান্নিধ্য গ্রহণ করা : আল্লাহর প্রিয় বান্দারা হলেন কল্যাণের চাবিকাঠি। তাদের সান্নিধ্য ও পরামর্শ নিয়ে আমল করতে পারলে আমলের অলসতা থেকে কিছুটা বাঁচা যায়। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় কিছু লোক আছে, যারা কল্যাণের চাবিকাঠি এবং অকল্যাণের দ্বার রুদ্ধকারী। পক্ষান্তরে এমন কিছু লোক আছে, যারা অকল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী এবং কল্যাণের পথ রুদ্ধকারী।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৭)

ভারসাম্যপূর্ণ আমল করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে মানুষ, যত আমল তোমরা স্থায়ীভাবে করতে সক্ষম তত আমল করবে। কেননা আল্লাহ তাআলা তোমাদের ইবাদতের সওয়াব দিতে ক্লান্ত হবেন না; বরং তোমরাই ইবাদত বন্দেগি করতে করতে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়বে। আর অল্প হলেও আল্লাহর কাছে স্থায়ী আমলই সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়। (বর্ণনাকারী বলেন) মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারী ও বংশধররা যে আমল করতেন তা ধারাবাহিকভাবে সর্বদাই করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৭১২)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। (লেখক: মুফতি আবদুল্লাহ আল ফুআদ)


বিভাগ : জীবনযাপন


এই বিভাগের আরও