ছিনতাই আতঙ্কের শহর ভৈরব ৬ মাসে ৩শ ছিনতাই

২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৭ পিএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম


ছিনতাই আতঙ্কের শহর ভৈরব ৬ মাসে ৩শ ছিনতাই

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রতিদিনই কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের কোনো না কোনো স্থানে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে শারিরিক, আর্থিক ও মানষিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কেউ না কেউ। আইনজীবী, পুলিশ, ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক থেকে শুরু করে কোনো শ্রেণিপেশার মানুষই রেহাই পাচ্ছেন না ছিনতাইকারীদের কবল থেকে। গত ছয় মাসে কমপক্ষে তিনশ ছিনতাইয়ের ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

গত কয়েক বছরে ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণও হারিয়েছেন পুলিশ, আইনজীবীসহ বেশ কয়েকজন। সব মিলিয়ে এখন ছিনতাই আতঙ্কের শহরে পরিণত হয়েছে ভৈরব।


স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোরালো কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই উৎপাত বেড়েছে ছিনতাইকারীদের। তবে পুলিশ বলছে, গত ছয় মাসে দুই শতাধিক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া জনগণের নিরাপত্তায় পুলিশ সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছে।


মেঘনা-ব্রহ্মপুত্রের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা বাণিজ্য নগরী হিসেবে পরিচিত ভৈরব। এই শহরের নাটাল মোড়, পাওয়ার হাউজ, মনামরা ব্রিজ, বঙ্গবন্ধু সরণি, রেল স্টেশন, হাজি আসমত কলেজ রোড ও নিউ টাউনসহ বেশ কয়েকটি স্পট পরিণত হয়েছে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে। প্রতিদিনই পথচারী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে মোবাইল, টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা।


স্থানীয়রা বলছেন, গত একসপ্তাহেই এসব স্পটে অন্তত ৫০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আর ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন একশ মানুষ। পুলিশের তথ্যও বলছে, গত ছয় মাসে প্রায় তিনশ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ভৈরবে। সম্প্রতি এর প্রবণতা বেড়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী উঠতি কিশোরদের আট থেকে ১০টি গ্রুপ এসব ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। এদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত। মাদকের বা নেশার টাকা জোগাড় করার জন্যই তারা ছিনতাইয়ের আশ্রয় নিচ্ছে।


পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত কয়েক বছরে ছিনতাইকারীদের হাতে পুলিশ কনস্টেবল মামুন, পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান, আইনজীবী পলাশ ও প্রাণ কোম্পানির এসআরসহ বেশ কয়েক জন খুন হন।
চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই ভৈরবে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা আলোচিত হয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ে স্কুলের পেছনের এলাকায় ১০ থেকে ১২ জন ছিনতাইকারীর হামলায় আহত হয়েছিলেন তাজুল ইসলাম এবং তার চাচাত ভাই আলমগীর হোসেন ও ভাবি খাদিজা বেগম।


তারা জানান, বাস স্ট্যান্ড থেকে মেঘনা নদীর ত্রি-সেতু এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার পথে ওই স্কুলের পেছনে পৌঁছালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের এলোপাতাড়ি আঘাত করে ছিনতাইকারীরা। তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ও খাদিজা বেগমের গায়ে থাকা সোনার অলংকার তারা কেড়ে নেয়। এ সময় টোল প্লাজায় পুলিশ ডিউটিতে থাকলেও তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ তাজুলের।


এদিকে, কমলপুর গাছতলা ঘাটের জনৈক ব্যবসায়ীকে ভোরে র‌্যাব ক্যাম্পের সামনে কুপিয়ে আহত করে ছিনতাইকারীরা। আহত অবস্থায় ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার বাম হাতের চারটি রগ কেটে গেছে, হাড়ের কিছু ফেঁটে গেছে। এছাড়াও রেলওয়ে স্টেশন সড়কে কবরস্থান ও পলাশ সিনেমা হলের মোড়ে ঘোড়া কান্দা গ্রামের বিকাশ ব্যবসায়ী ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীসহ বেশ কয়েকজনকে কুপিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় । এছাড়া ভৈরব হাজি আসমত কলেজ ও শহীদ আইভি রহমান পৌর স্টেডিয়ামের সামনেও প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।


জানতে চাইলে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জানান, আমরা প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের শিকার আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছি। এদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর, তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি। গত কয়েকমাসে যে পরিমাণ ছিনতাইয়ের রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন, এমন আগে কখনো দেখেননি বলেও জানান তিনি।


এ বিষয়ে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, প্রতিদিনই কোনো না কোনো ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত ৬ মাসে অভিযান চালিয়ে অন্তত দুইশ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও