করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯): ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি: এডিবি

০৯ মার্চ ২০২০, ০২:২৯ পিএম | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০১ পিএম


করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯): ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি: এডিবি
ফাইল ছবি

অর্থনীতি ডেস্ক:

বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এসে গেছে বাংলাদেশেও। রোববার (৮ মার্চ) ৩ জনের দেহে এই ভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কভোড-ডি ভাইরাস খারাপ অবস্থায় গেলে ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। আগামী ১ বছরে কমে যেতে পারে দেশের প্রায় ৯ লাখ কর্মসংস্থান। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)।

গত শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এডিবি বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি। সেই হিসাবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে খারাপ হলে বাংলাদেশে এক বছরে জিডিপির ১ শতাংশের বেশি ক্ষতি হবে। করোনাভাইরাসের কারণে এশিয়ার ২৩টি দেশে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, সেই হিসাব তুলে ধরা হয়েছে এডিবির ওই প্রতিবেদনে। সংস্থাটির ওই প্রতিবেদনে ৪ ধরনের সম্ভাবনার কথ বলা হয়েছে। পরিস্থিতি সবচেয়ে ভালো থাকলে, সীমিত আকারে ছড়ালে, খারাপভাবে ছড়ালে এবং পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হলে—দেশগুলোর অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখিত ২৩টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও। এডিবি বলছে, করোনাভাইরাস সীমিত আকারে ছড়ালে বাংলাদেশের জিডিপির দশমিক ০১ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে ওই ২৩ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চীন, হারিয়ে যাবে দেশটির জিডিপির আড়াই শতাংশ।

প্রতিবেদনে দেয়া তথ্যানুযায়ী করোনা বাংলাদেশের পাঁচটি খাতে প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবা খাত দুটি। সব মিলিয়ে ১১৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এই দুটি খাতে। এ ছাড়া কৃষি খাতে ৬৩ কোটি ডলার, হোটেল-রেস্তোরা খাতে প্রায় ৫১ কোটি ডলার, উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে ৪০ কোটি ডলার এবং পরিবহন খাতে সাড়ে ৩৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতি হতে পারে। ফলে আগামী এক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৩০২ কোটি ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা করছে এডিবি।

এ সম্পর্কে এডিবি প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুউকি সয়াডা বলেছেন, কভিড-১৯ নিয়ে অর্থনৈতিক প্রভাবসহ অনেক দিক দিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ক্ষতির স্পষ্ট চিত্রের জন্য নানা দিক দেখতে হবে। আমরা আশা করছি, এই পর্যালোচনা সরকারগুলোকে প্রাদুর্ভাবের মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের শেষ নাগাদ চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহান নগরী থেকে দেশ জুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। চীনের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের ১০০টি দেশে হানা দিয়েছে এই ভয়াবহ ভাইরাস। রোববার পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮২৮ জন। আর আক্রান্ত হয়েছে আরও ১১০৪৮ জন। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৬২ হাজার ২৭৬ জন।

মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ। কিন্তু এরপরও এই ভাইরাসকে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। এখনও এই ভাইরাসের কোনও প্রতিষেধক বা ওষুধ আবিষ্কৃত না হওয়ায় উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।

ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসকে বিশ্ববাসীর জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থার মহাপরিচালক ইথিওপিয়ার টেডরস আধানম গেব্রিয়াসেস বলেছেন, এ ভাইরাসটি ‘যেকোনো সন্ত্রাসবাদী পদক্ষেপের চেয়েও শক্তিশালী’ হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি।


বিভাগ : অর্থনীতি


এই বিভাগের আরও