এবারের ঈদেও লোকসানে বাবুরহাটের কাপড় ব্যবসায়ীরা

০৪ মে ২০২১, ০৭:৫৪ পিএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৭ পিএম


এবারের ঈদেও লোকসানে বাবুরহাটের কাপড় ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা পরিস্থিতিতে দুই বছর ধরে লোকসানের মুখে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর ঈদকে ঘিরে এই হাটের মূল বেচাকেনা জমে উঠলেও দুই বছর ধরে লকডাউনের কারণে বেচাকেনা না থাকায় লোকসানে পড়েছেন তারা। এবছর ঈদকে ঘিরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকান খুলে দেয়া হলেও খুচরা বাজারে দোকান বন্ধ থাকা ও দূরপাল্লার যানবাহন না পেয়ে পাইকারী ক্রেতা না আসায় জমেনি বেচাকেনা। এতে কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়া, ব্যাংক ঋণের সুদসহ অন্যান্য খরচ পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।


শেখেরচর-বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরা জানান, দেশীয় বস্ত্রের প্রায় ৭০ ভাগ কাপড়ের চাহিদা পূরণ করে থাকে দেশের অন্যতম পাইকারী কাপড়ের বাজার শেখেরচর-বাবুরহাট। মূলত প্রতি বছর ঈদকে ঘিরে এই হাটের ছোট বড় ৫ হাজার দোকানে নতুন করে পসরা সাজানো হয় শাড়ি, লুঙ্গি, গজ কাপড়, পাঞ্জাবির কাপড়, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, থ্রিপিসসহ সব ধরনের দেশিয় কাপড়ের।


দেশে কাপড় উৎপাদনকারী প্রায় সব বস্ত্রপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একাধিক শো-রুম রয়েছে এখানে। এসব বস্ত্র কোম্পানীর বেশিরভাগ কারখানাও গড়ে উঠেছে নরসিংদী কেন্দ্রিক। দেশের অন্যান্য স্থানে প্রস্তুতকৃত যাবতীয় কাপড়ও পাওয়া যায় এখানে। প্রতি বছর রোজার এক সপ্তাহ আগে থেকেই ঐতিহ্যবাহি এই কাপড়ের বাজারটিতে বেচাকেনা শুরু হলেও গত দুই বছর ধরে পাল্টে গেছে এই চিত্র। করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে লকডাউন থাকায় দেশের সকল দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পাইকারী ক্রেতা না আসায় নেই কাঙ্খিত বেচাকেনা।


প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে পাইকারদের ভিড়ে সরগরম থাকতো যে বাজার এখন সেখানে ক্রেতাশূন্য। প্রায় বেশিরভাগ কাপড়ের দোকানে বেশিরভাগ সময় ঝুলছে তালা। যারা দোকান খুলেছেন তারাও বসে বসে অলস সময় পার করছেন। ২/৩ ভাগ ব্যবসায়ী খুচরা বেচাকেনা করতে পারলেও পুরোপুরি লোকসানের মুখে বাজারের বেশিরভাগ বিক্রেতা।


বিক্রেতারা আরও জানান, গত বছর লকডাউন থাকলেও দেশের সবখানেই কমবেশি শপিংমল ও কাপড়ের দোকানপাট খোলা ছিল এবং খুচরা বিক্রেতারা বেচাকেনা শেষে কাপড় নিতে বাবুরহাটে এসেছিলেন। এবছর সারাদেশেই প্রশাসনের কঠোরতার কারণে শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় সারাদেশেই বেচাকেনা নেই এবং গণপরিবহনও বন্ধ ছিল। পণ্য পরিবহন চালু থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকেই পাইকারী কেনাকাটা করতে আসেননি। দেশজুড়ে খুচরা দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধ রেখে পাইকারী কাপড়ের বাজার খোলা রেখেও কোন লাভ হয়নি। বেচাকেনার যে মন্দাভাব সেটিই থেকে গেছে।


আরটেক্স শাড়ী ঘরের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ রুমন বলেন, মূলত বছরের দুই ঈদকে ঘিরেই এই হাটের বেচাকেনা বেশি হয়। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে দেশের যাকাতের কাপড় হিসেবে শাড়ী ও লুঙ্গির একটি বড় অংশ বেচাকেনা হয়। এজন্য দোকানগুলোতে কাপড়ের আমদানি বেশি করা হয়। কিন্তু দুই বছর ধরে বেচাকেনা না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।


গজ কাপড় বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, ঈদের প্রায় এক মাস আগে থেকে শার্ট পিস, প্যান্ট পিসসহ গজ কাপড় বেচাকেনা শুরু হয়। সারাদেশের খুচরা বিক্রেতারা এক মাস আগে থেকেই এসব কাপড় কিনতে আসেন। গত বছর ঈদে কিছুটা বেচাকেনা হয়ে থাকলেও এবার লকডাউনে গণপরিবহন ও খুচরা দোকানপাট বন্ধ থাকাসহ পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে বাবুরহাট।


শাড়ি কাপড় বিক্রেতা আল আমিন বলেন, নানান সমস্যার মধ্যেও মানুষের দেশিয় বস্ত্রের চাহিদা কমবেশি থাকে। সারাদেশে বেচাকেনা থাকলে শেখেরচর-বাবুরহাটেও থাকে। কিন্তু এ বছরের মতো বেচাকেনায় এমন ধস আর কখনও দেখেননি ব্যবসায়ীরা। ঈদকে ঘিরে বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করে কাপড়ের পসরা সাজানো হলেও ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়া, ব্যাংক সুদ ঠিকই পরিশোধ করতে হবে।


থ্রিপিস বিক্রেতা আব্দুল বাছেদ বলেন, স্থানীয়ভাবে কেউ কেউ খুচরা কাপড় কিনতে আসছেন, কিন্তু পাইকারী ক্রেতার দেখা নেই। বাবুরহাটে বেচাকেনার এমন দশা অতীতে হয়নি।


নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির বলেন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত পরিসরে বাবুরহাটের দোকানগুলো খোলা হলেও পাইকারী ক্রেতা না থাকায় বেচাকেনা সন্তোষজনক নয়। তবে অনলাইনের পাশাপাশি কিছুটা হলেও পাইকারী ও খুচরা বেচাকেনা হওয়ায় শ্রমিক বিলসহ প্রাথমিক খরচটা মেটানো সম্ভব হবে।