হিরুর লোকেরা পলাইবার জায়গা পাবে না: আ’লীগ নেতার এমন বক্তব্যে ক্ষোভ

০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫২ পিএম


হিরুর লোকেরা পলাইবার জায়গা পাবে না: আ’লীগ নেতার এমন বক্তব্যে ক্ষোভ
ভিডিও থেকে নেয়া ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘নৌকা বলি না আমরা হিরুর নৌকা বলি, হিরু, হিরু। হিরুর (নৌকার প্রার্থী) লোকেরা পলাইবার জায়গা পাবে না। ৭ তারিখ যে জাগরণ সৃষ্টি হবে এই নরসিংদীতে এই জাগরণের পরিণতিতে কামরুল ভাই (আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী) বিপুল ভোটে জয়ী হবে।’

বুধবার বিকালে নরসিংদীর মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজের দেওয়া এমন বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

বক্তব্যে শোনা যায় "মাধবদীর মেয়র মোশারফ সাব বক্তব্য দেয়ার পরে দক্ষিণ এলাকার ৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় গণজাগরণ তৈরি হবে ইনশাল্লাহ। এই গণজাগরণে কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। আপনারা যখন জানবেন মাধবদীর মেয়র মোশারফ হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের জন্য নামছেন, তখন কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। কাল থেকে হিরোর নৌকার লোক পলানোর জন্য জায়গা পাবে না। নৌকার লোক পালানোর সুযোগ পাবে না।"

সভায় উপস্থিত থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কিছুটা হাসাহাসি করলে নিজেই বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, হিরোর নৌকার লোক পালানোর সুযোগ পাবে না।

তিনি আরও বলেন, "আমরা কাল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের হয়ে মাঠে নামবো। কোনো বাঁধা বিপত্তি নেই। যতই প্রোপাগান্ডা  করুক, গণজাগরণ ফেরাতে পারবে না। মোশারফ ভাই যেভাবে বলবেন, কাল থেকে সেভাবে কাজ করবেন।"

বুধবার ( ৬ ডিসেম্বর) দুপুরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী সদর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) কামরুজ্জামান কামরুলকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় এমন বক্তব্য দেন মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পদক মাহমুদুল কবীর সাহীদ এবং মাধবদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোশারফ হোসেন মানিক মঞ্চে বসে হাসছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আমার চাচা আছে মোশাররফ (মাধবদী পৌর মেয়র) সাহেব। তার নেতৃত্বে পাঁচটা ইউনিয়ন ও মাধবদী পৌরসভা চলবে। তার নেতৃত্বের বাইরে, তার অর্ডারের বাইরে কেউ পা দিতে পারবে না।

মাধবদী পৌর পরিষদের উদ্যোগে মাধবদী পৌরসভা হলরুমে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন মাধবদী পৌরসভার মেয়র ও মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক।

এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নৌকার প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা। নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক শিক্ষা  বিষয়ক সম্পাদক এস এম কাইয়ুম বলেন, "তার বক্তব্য নিরেট নির্বাচনী আচরণ ভঙ্গ করেছে। কাউকে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়ার এখতিয়ার রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। তিনি একজন আওয়ামীলীগ নেতা হয়ে, নৌকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনার অর্থ হচ্ছে দলের সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করার সামিল। আমি ওনার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং নৌকার সমর্থকদের প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ায় তার বিচারের দাবি করছি।

আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (হিরু) বলেন, সে আওয়ামীলীগের পদধারী নেতা। অন্যায় হলে সে ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে পারে, তার স্বাধীনতা আছে কিন্তু আওয়ামীলীগের নেতা হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না, একজন  সন্ত্রাসীর পক্ষ নিয়ে কথা বলতে পারেন না। সে নির্বাচনী আচরণ ভঙ্গ করেছে, তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করছি।"

এ ব্যাপারে জানতে মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি নৌকার বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য দেইনি। এ বিষয়ে আমি অবগত নই।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হয়ে এমন বক্তব্য খুবই ধিক্কারজনক। ইতোমধ্যে আমি তার বক্তব্যের ভিডিও দলীয় হাইকমান্ডের কাছে পাঠিয়েছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে রাতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলমের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, নরসিংদী-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল।

 



এই বিভাগের আরও