নরসিংদীতে স্বতন্ত্রের চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার প্রার্থীরা

০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৫৮ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪২ পিএম


নরসিংদীতে স্বতন্ত্রের চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার প্রার্থীরা
আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদীর ৫টি আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাপটের কারণে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন নৌকার প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর দল থেকে কেউ স্বতন্ত্র ভোটে অংশগ্রহণ করলে দলীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করবেন।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়পত্র দাখিলের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) পর্যন্ত জেলার ৫টি আসনে মোট ৪২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে ১২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা রয়েছেন।

আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংদী জেলার ৫টি আসনে দলীয় একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। এসব প্রার্থীরা নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন, মনোনয়ন না পাওয়ায় তারা স্বতন্ত্র লড়বেন। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর নৌকার প্রার্থীরা ফুরফুরে মেজাজে দিন কাটাতে পারছেন না। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাপটের কারণে অতীতে দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন, এলাকার সার্বিক উন্নয়ন কাজ, করোনাকালে মাঠে থাকা না থাকা, নিজস্ব ভোট ব্যাংকসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিতে হচ্ছে প্রার্থীদের। এসব দিক বিবেচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছেন। বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ না করলেও স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করার কারণে সবকটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হবে বলে ধারনা করছেন স্থানীয়রা। দল থেকে মনোনয়ন না পেলেও ভোটের হিসাব নিকাশে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা প্রমাণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

নরসিংদী-১ (সদর) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (হিরু)। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র কামরুজ্জামান। দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ভোট হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন আলতামাশ কবির। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আলতামাশ কবির খ্যাতিমান রাজনীতিক, নরসিংদী ২ আসনে তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং দৈনিক সংবাদের সাবেক প্রধান সম্পাদক প্রয়াত আহমদুল কবিরের বড় ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি।

নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে এবার নৌকার মনোনয়ন পাননি বর্তমান সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহন ও সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। এই দুই ব্যবসায়ী সংসদ সদস্য মনোনয়ন না পাওয়ায় মনোনয়ন পেয়েছেন সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাবেক সংসদ সদস্য রবিউল আউয়াল খান কিরণের ছেলে ও একইভাবে নিহত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ খানের ভাতিজা ফজলে রাব্বি খান। রাজনৈতিক পরিবারে এবার নৌকার মনোনয়ন গেলেও সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্বতন্ত্র ভোটে অংশ নেবেন। এতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন বয়সে তরুণ প্রার্থী ফজলে রাব্বি খান। এমন হিসেব নিকেশ করছেন স্থানীয়রা।

নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনে এবারও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী এডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে মন্ত্রীর সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া, পাশাপাশি রয়েছে দলীয় কোন্দল। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন মনোনয়ন বঞ্চিত মনোহরদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু। উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বতন্ত্র প্রার্থীতা ঘোষণায় অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনও।

একই দশা হতে পারে নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনেও। এখানে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন ৫ বারের এমপি, সাবেক মন্ত্রী প্রবীণ রাজনীতিবিদ রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। রায়পুরার উন্নয়নে রাজুর অবদান অনস্বীকার্য হলেও দলীয় কোন্দল, চরাঞ্চলের সংঘাতসহ নানা কারণে কিছুটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারেন তিনি।

এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধূরী। চরাঞ্চলে মিজানুরের কিছুটা নিজস্ব ভোট ব্যাংকসহ কোন্দলের জেরে রাজু বিরোধী দলটির একটি অংশ ও মনোনয়ন বঞ্চিত অন্যরা একজোট হলে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে পারেন নৌকার প্রার্থী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু।



এই বিভাগের আরও