স্ক্রিপ্ট এক পাগলা ঘোড়া

১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৫:২০ এএম | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৩ এএম


স্ক্রিপ্ট এক পাগলা ঘোড়া
ফাহিম ইবনে সারওয়ার এর লাগাম টেনে রাখা খুব মুশকিল। শুধুমাত্র দক্ষ ও অভিজ্ঞ ঘোড়সওয়ারি হলেই এই পাগলা ঘোড়া বাগে আসে। প্রথমত স্ক্রিপ্ট রাইটার একটা গল্প ভাবেন। সেটাকে সংক্ষিপ্তভাবে লিখে রাখেন, যাকে বলে কাহিনী সংক্ষেপ বা সিনোপসিস। সিনোপসিসকে বলা যায় প্রজেক্ট প্রপোজাল। রাইটার এটা নিয়েই মাঠে নামেন, ডিরেক্টরের সাথে শেয়ার করেন। ফিডব্যাক নেন, কারেকশন করেন। সেকেন্ড ড্রাফট তৈরি করেন। সিনোপসিস পছন্দ হলে এটা নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু করেন ডিরেক্টর। গল্পটা মাথায় নিয়ে প্রডিউসার বা চ্যানেল খোঁজা শুরু করেন, কাস্টিং ভাবতে থাকেন। প্রডিউসার বা চ্যানেল ঠিকঠাক হওয়ার ফাঁকে রাইটার পুরো স্ক্রিপ্টটা লিখে ফেলেন। দৃশ্য, চরিত্র, লোকেশন, সংলাপ, ইনডোর/আউটডোর, দিন/রাত। রাইটারকেই একটা বাজেট মাথায় নিয়ে গল্পটা সাজাতে হয়। এখন সিঙ্গেল নাটকে ব্যতিক্রম বাদে দুই দিনেই শুটিং শেষ করার পরিকল্পনা থাকে। দুইদিনে যাতে শুটিং করে শেষ করা যায় সেভাবেই গল্পটাকে সাজিয়ে ফেলেন রাইটার। এরপর ফার্স্ট ড্রাফট নিয়ে ডিরেক্টর-প্রডিউসার/চ্যানেল এর মিটিং। প্রডিউসার বা চ্যানেলের সাথে মিটিংয়ের মাধ্যমেই কাস্টিং আর বাজেট এর রাফ আইডিয়া তৈরি হয়। তখন আবার রাইটারকে স্ক্রিপ্টে হাত দিতে হয়। কারণ কোন ক্যারেক্টারের স্ক্রিন প্রেজেন্স বাড়াতে হবে, কোথাও লোকেশন চেঞ্জ করতে হবে, কোথায় ডায়লগ কমবেশি করতে হবে। স্ক্রিপ্টের সেকেন্ড ড্রাফট হতে হতে ডিরেক্টর সম্ভাব্য কাস্টিং মাথায় রেখে আর্টিস্টদের শিডিউল বুকিং দিতে থাকেন, শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। স্ক্রিপ্টের সেকেন্ড ড্রাফট হাতে পেয়ে মোটামুটি শুটিং ডেট ফিক্সড করা হয়। এরপর আর্টিস্ট বা ডিরেক্টর মাইনর কোন কারেকশন দিতে পারেন অথবা অন লোকেশনে স্ক্রিপ্টে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু এই ফরম্যাটে ফেলতে গিয়ে অনেক সময়ই রাইটার প্রথমে যে গল্পটা ভেবে রেখেছিলেন সেটা আর থাকে না। গল্পের সারাংশ ঠিকই থাকে কিন্তু চরিত্র বদলায়, ঘটনা বদলায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বদলটা ভালোর জন্যই হয়। কারণ তখন রাইটার-ডিরেক্টর-আর্টিস্ট মিলে গল্পটাকে সাজিয়ে ফেলেন। মেদভুড়ি, বাড়তি চর্বি, অলংকার ছাড়িয়ে স্ক্রিপ্ট তখন একদিম ফিট! শুটিংয়ের পর পোস্ট প্রোডাকশন। এডিট, মিউজিক, কালার কারেকশন করে ফার্স্ট ড্রাফট। রাইটার তখন দেখেন তার মগজে থাকা চরিত্রগুলো বাস্তব হয়ে উঠেছে, তিনি যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবে সংলাপ বলে যাচ্ছে, তখন আর্টিস্ট আর স্টার থাকেন না, হয়ে ওঠেন তারই সৃষ্ট ‘ক্যারেক্টার’।