শিবপুরে সবজির চারা বিক্রিতে ভাগ্য ঘুরছে কৃষকদের

১২ অক্টোবর ২০২০, ০৪:৩৩ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৯ এএম


শিবপুরে সবজির চারা বিক্রিতে ভাগ্য ঘুরছে কৃষকদের


শেখ মানিক:
নরসিংদীর শিবপুরে শীতকালীন সবজির চারা বিক্রয় করে বদলে গেছে বহু কৃষকের ভাগ্য। সবজির চারা উৎপাদন ও বিক্রি করে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের কুন্দারপাড়া এলাকা।


শিবপুর তথা নরসিংদীর স্থানীয় কৃষকরা একসময় মুন্সীগঞ্জ থেকে সবজির চারা ক্রয় করে সবজি চাষ করতেন। ২০ বছর পূর্বে নিজেদের প্রয়োজনে চারা উৎপাদন শুরু করেন এখানকার কৃষকরা। এখন প্রায় ৩০ বিঘার জমির উপরে চারা উৎপাদন করা হয়। যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। এই চারা বিক্রয় করে কেউ কেউ লাখপতি হয়েছেন। চলতি মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে শুরু হওয়া অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি চলে আশ্বিন মাসজুড়ে। এ চার মাস সময়কালে একই পলিথিনে মোড়ানো সেড করে ৪/৫বার পর্যন্ত বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারবেন।


কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে বীজতলা প্রস্তুত করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, মরিচ ও টমেটোর বীজ বপন করা হয়। ওই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা গজালে তা পরিচর্যা করে এক মাস বয়সে তুলে অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়। ভাল মানের প্রতিটি ফুলকপির চারা ৮০ পয়সা থেকে ১ টাকা এবং বাঁধাকপির চারা মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ পয়সা বিক্রি হচ্ছে। নরসিংদী জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে কৃষকরা এসে এসব চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন এখানে নরসিংদী জেলা সহ কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, বি-বাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, নেত্রকোনা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল এলাকার কৃষকরা সবজি চারার ক্রয় করতে আসেন। চারা ক্রেতারা জানান এখান থেকে চারা নিয়ে রোপন করে ভালো ফলন পেয়েছেন তাই তারা দূর থেকে আসেন চারা নিতে।  


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুর উপজেলার কুন্দারপাড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার মাঠজুড়ে পলিথিনে মোড়ানো বীজতলা। বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসছেন চারা কেনার জন্য। অনেক চাষি চারা তুলছেন বিক্রয়ের জন্য। কেউ কেউ বীজতলার উপরের পলিথিন খুলে উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন। আবার কেউ আগাছা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।


শওকত আলী নার্সারির মালিক শওকত আলী জানান, আমি বিগত ১৪ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছি। চারা বিক্রি করে ভালো আছি। আমি দেড় বিঘা জমিতে অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন এবং বিক্রি করে প্রতি বছর লাখ দুয়েক টাকা জমা করতে পারছি। আমাদের এখানে এখন ৩০ বিঘার জমির উপরে প্রায় ১৫০জন কৃষক চারা উৎপাদন করে। এখান থেকে বছরে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার চারা বেচা কেনা হয়।


কুন্দারপাড়া গ্রামের ফজলুল হক জানান, আমরা মুন্সীগঞ্জ থেকে চারা এনে সবজি চাষ করতাম। সেখান থেকে দেখে চারা উৎপাদন শুরু করি। প্রতিবিঘা জমিতে ফুলকপির বীজ বপন করে চারা উৎপাদন পর্যন্ত (এক মাস) অন্তত এক লাখ টাকা ব্যয় হয়। তবে এতে তিন লক্ষাধিক চারা উৎপাদন করে আনুষঙ্গিক খরচ বাদেও কমপক্ষে দুই লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয়। পরবর্তীতে ওই চারা অন্য কৃষকরা কিনে অন্তত তিন মাস পরিচর্যা করে বিক্রি উপযোগী করে তোলে। আমাদেরকে উপজেলার কৃষি অফিস বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।


শিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন সাদেক জানান, উপজেলার কুন্দারপাড়া এলাকায় ৮ হেক্টর জমিতে সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। সবজির নার্সারি লাভজনক ব্যবসা। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও চারার গুনগত মান বজায় রাখতে পরামর্শ দিয়ে থাকি। নতুন নতুন জাত ও আগাম সবজির চারা উৎপাদনে পরামর্শ দিয়ে থাকি।



এই বিভাগের আরও