ভ্যাকসিন হিরো পুরস্কার: প্রধানমন্ত্রীকে স্বাস্থ্য সহকারীদের অভিনন্দন

১১ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:২৮ পিএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম


ভ্যাকসিন হিরো পুরস্কার: প্রধানমন্ত্রীকে স্বাস্থ্য সহকারীদের অভিনন্দন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনেশন এন্ড ইমুনাইজেশন (গ্যাভি) কর্তৃক “ভ্যাকসিন হিরো” পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বেলা ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে, হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল ওয়ারেশ পাশা পলাশ, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক ফাহিম সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর নবী, বিসার মহাসচিব হাফিজুর রহমানসহ দেশের বিভিন্ন জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি এনায়েত রাব্বি লিটন বলেন, আমাদের তৃণমূল স্বাস্থ্য সহকারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন, জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি স্বরূপ "ভ্যাকসিন হিরো" সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এর জন্য আমরা আজ গর্বিত ও আনন্দিত। শুধু তাই নয় আমাদের কাজের বিনিময়ে এর আগেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন এমডিজি-৪ পুরষ্কার, সাউথ সাউথ পুরস্কার, গ্যাভি কর্তৃক শ্রেষ্ঠ টিকাদানকারী দেশের স্বীকৃতি অর্জন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার টিকাদানে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন, ধনুষ্টংকার মুক্তকরণ এবং পোলিওমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পুরস্কার প্রাপ্তির আন্তজার্তিক স্বীকৃতি। একমাত্র স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের সফলতায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
এ ছাড়াও জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের যে বড় বড় সফলতা এসেছে তা তৃণমূলের স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে।

রাব্বি লিটন বলেন, আমরা স্বাস্থ্য সহকারীরা বেতন স্কেলসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য সহাকারীদের এক মহাসমাবেশে তৎকালীন ও বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দাবি সমূহ মেনে নিয়েছিলেন এবং তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু অতীব
দুঃখের সহিত জানাচ্ছি যে, এসব দাবি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা আমাদের প্রধান দাবি বেতন স্কেলসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা বাস্তবায়ন চাই।


তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীরা আজ বাংলাদেশ সরকারের মুখ উজ্জ্বল করেছেন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে গর্বিত করছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য সহকারীরাই সরকারের সকল কর্মচারী থেকে বেশি অবহেলিত ও নানান বঞ্চনার শিকার। প্রজাতন্ত্রের পদোন্নতি বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী ৩ থেকে ৭ বছর পর পর পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। কিন্তু একজন স্বাস্থ্য সহকারী ২৫ বছরেও পদোন্নতি পেয়ে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে পারেন না। এরপর স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে আরও কমপক্ষে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে এমন সময় পদোন্নতি পান, যখন চাকরির বয়স বাকী থাকে মাত্র ৬/৭ মাস। তাছাড়া পদোন্নতি হলেও বেতন বাড়ে না এক পয়সাও। উপরন্তু বদলি করা হয় অন্য জেলা, উপজেলায়।

তিনি আরও বলেন, আমরা স্বাস্থ্য সহকারীরা সরকারি ছুটি ব্যতীত সপ্তাহে ৬ দিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ, ঝুঁকিপূর্ণ রোগী শনাক্তকরণ, দেশে থেকে মরণব্যাধি গুটিবসন্ত দূরীকরণ, ম্যালেরিয়ার মহামারি দূরীকরণ, ডাইরিয়া নিয়ন্ত্রণ, ডিপথেরিয়া পার্টোসিস ও ধনুষ্টংকার নিয়ন্ত্রণ, শিশুদের যক্ষা নিয়ন্ত্রণ, হাম-রুবেলা নিয়ন্ত্রণ, হেপাটাইসিস-বি নিয়ন্ত্রণ, গর্ভবতী, প্রসব-পূর্ব এবং প্রসব পরবর্তী সেবা, নবজাতকের সেবা, কমিউনিটি ক্লিনিকে সপ্তাহে ৩দিন বিভিন্ন প্রকার রোগ শনাক্ত করে রোগীদের মধ্যে সরকার প্রদত্ত ২৮ ধরনের ওষুধ বিতরণ, জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, স্কুলে কৃমিনাশন ট্যাবলেট বিতরণ করাসহ পোলিও মুক্ত দেশ গঠনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছি।


এ ছাড়াও স্বাস্থ্য সহকারীরা কফ পরীক্ষার জন্য কফ কেন্দ্রে রোগী প্রেরণ ও ডটস পদ্ধতিতে যক্ষ্মা রোগের ওষুধ খাওয়ানো, নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, স্যানিটেশনসহ ১৫-৪৯ বছর বয়সের সব নারীর পাঁচ ডোজ টিটি টিকা এবং ০ থেকে ১৮ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রাপ্যতা অনুযায়ী ১০টি প্রতিষেধক টিকা দিয়ে থাকেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সচেতন করেন। স্বাস্থ্য সহকারীদেও এসব কাজের ফলেই দেশ থেকে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে।

পরে রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয় থেকে একটি আনন্দ র‌্যালী বের করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা “আপনার শিশুকে টিকা দিন” লেখা সম্বলিত মণি পতাকা নিয়ে আনন্দ র‌্যালীতে অংশ নেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যাপক সফলতার জন্য ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘ইমিউনাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বীকৃতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।’


প্রধানমন্ত্রীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার পূর্বে অনুষ্ঠানে প্রশংসাপত্র পাঠ করেন নাইজেরিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী গ্যাভি বোর্ডের সভাপতি ড.এনগোজি অকোনজো ইবিলা। পত্রে তিনি বলেন, এই পুরষ্কার তাদের জন্য যারা শিশুদের জীবন রক্ষার জন্য জরুরী টিকাদানে উদ্যোগী হয়েছেন এবং কোন শিশু যাতে বাদ না পড়ে, তা নিশ্চিত করে কাজ করেছেন।


এসময় পুরস্কার গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা দেশবাসীকে উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, ‘ভ্যাক্সিনেশনের জন্য বাংলাদেশের কঠোর পরিশ্রম আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা নিয়ে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার অধীনে ইমুনাইজেশনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

 


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও