বুয়েটে নিষিদ্ধ হলো ছাত্র রাজনীতি, ১৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

১১ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:২৪ পিএম | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৭ এএম


বুয়েটে নিষিদ্ধ হলো ছাত্র রাজনীতি, ১৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
বৈঠকের শুরুতে আবরারের জন্য পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হলো ছাত্র রাজনীতি। এছাড়া আবরার হত্যার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি ১৯ শিক্ষার্থীকে বুয়েট থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকালে বুয়েটের ভিসি ড. সাইফুল ইসলাম এই ঘোষণা দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি ১০ দফা দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণাও দেন। 

এসময় উপাচার্য বলেন, বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি আর থাকবে না। আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে এবং মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেয়া হবে এবং বুয়েটে র‌্যাগিং বন্ধ হবে।

এর আগে শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি মানার জন্য শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। পরে বিকালে ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভিসি।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে টানা ৫ দিন ধরে উত্তাল বুয়েট। এ প্রেক্ষিতে বিকালে ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। বিকাল সাড়ে ৫টায় কানায় কানায় পূর্ণ বুয়েট অডিটোরিয়ামে এ বৈঠক শুরু হয়। শুরুতেই আবরারের জন্য পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা।

সভা পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান। মঞ্চে উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ছিলেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ এবং কয়েকজন ডিন।

আগের ঘোষণা অনুযায়ী, বুয়েটের মেইন গেইট থেকে দুই দফা পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে শিক্ষার্থীদের অডিটরিয়ামের বৈঠক স্থলে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। বিকাল ৩টার পর থেকেই লাইন ধরে আইডি কার্ড দেখিয়ে অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা।

বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গত রোববার (৬ অক্টৈাবর) রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। তারপর থেকেই আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবী তুলে ধরেন। এই দশ দফা দাবীর মধ্যে ছিল-আবরারের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার, আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বুয়েট থেকে বহন করা, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্বল্পতম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি, অবিলম্বে অভিযোগপত্র প্রকাশ, বিভিন্ন সময়ে নিরর্যাতনে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিল এবং বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।

ছাত্রলীগের কর্মীদের মারধরে আবরার নিহতের পর ‘দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য’ সমালোচনার মুখে আছেন উপাচার্য। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের সামনে এসে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। ওই দিন তাকে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রেখেছিল শিক্ষার্থীরা। পরদিন কুষ্টিয়ায় আবরারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে অধ্যাপক সাইফুলকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়।

উপাচার্য গত মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) শিক্ষার্থীদের দাবি নীতিগতভাবে মেনে নেওয়ার কথা বললেও শিক্ষার্থীরা সুনির্দিষ্ট ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে বুয়েট শহীদ মিনারের অবস্থান কর্মসূচি থেকে ভিসিকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল, বলা হয়েছিল- শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বেলা ২টার মধ্যে তাকে শিক্ষার্থীদের সামনে এসে কথা বলতে হবে। এই সময়ের মধ্যে উপাচার্যের দেখা পাওয়া না গেলে বুয়েটের সব ভবনে তালা মেরে দেওয়ার হুমকি ছিল শিক্ষার্থীদের।

তাদের ওই ১০ দফার প্রতি সংহতি জানিয়ে আলাদাভাবে ৭ দফা দাবি জানিয়েছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। দায়িত্বে ‘ব্যর্থতার’ অভিযোগে উপাচার্যের পদত্যাগও চাইছে তারা।

 


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও