টোকাই থেকে যেভাবে শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে উঠে বরগুনার নয়ন বন্ড

০২ জুলাই ২০১৯, ০১:১৫ পিএম | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৯ এএম


টোকাই থেকে যেভাবে শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে উঠে বরগুনার নয়ন বন্ড

বরগুনা প্রতিনিধি:

বরগুনায় একের পর এক অন্যায় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়েও বিচার না হওয়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এক সময়ের টোকাই সাব্বির আহমেদ নয়ন  ওরফে নয়ন বন্ড। দীর্ঘদিন ধরেই ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে তার।

আইন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের দায়ের করা এফআইআর বা চার্জশিটের ফাঁক ফোকরকে কাজে লাগিয়ে অপরাধ করেও জেলের বাইরে থেকেছে নয়ন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি,  মঙ্গলবার (২ জুলাই) ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে নয়ন বন্ড।

বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি নয়ন এর আগেও ৮টি মামলায় অভিযুক্ত আসামি। মামলাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৫ ও ২০১৬ সাল পর্যন্ত মামলাগুলোতে নয়ন শুধু চাঁদাবাজ বা ছিনতাইকারী হিসেবে অভিযুক্ত ছিল।

বরগুনা পৌর শহরের ডিকেপি রোড এলাকার মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড)। শহরের কলেজ রোড, ডিকেপি সড়ক, কেজি স্কুল ও ধানসিঁড়ি সড়কে মূলত নয়নের বিচরণ ছিল। ছিনতাই, ছাত্রদের মোবাইল ফোন জিম্মি করে টাকা আদায়, ছোটখাটো মারধর থেকে তার অপরাধপ্রবণতা শুরু হলেও ২০১৭ সালে পুলিশি অভিযানে নয়নের কলেজ রোডের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ তাকে আটক করে পুলিশ। এরপরই নয়ন নামটি লাইমলাইটে চলে আসে। ওই মামলায় জামিনে আসার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠে নয়ন। এরপর সে নিয়মিত মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যায় এবং রিফাত ফরাজীকে সঙ্গে নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরি করে। ওই গ্রুপে নয়নের সহযোগী হিসেবে বরগুনা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধানসিঁড়ি সড়কের দুলাল ফরাজীর দুই ছেলে রিফাত ফরাজী ও তার ছোটভাই রিশান ফরাজী কাজ করতো।

২০১৭ সালের মামলাগুলোতে নয়ন অভিযুক্ত হয় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ৪৫০ পিচ ইয়াবা, ১০০ গ্রাম হেরোইন ও ১২ বোতল ফেন্সিডিলসহ গ্রেপ্তার হয়। মামলার চার্জশিটে যার মূল্য ধরা হয় প্রায় ১২ লাখ টাকা। তার বিরুদ্ধে এ মামলাটি ছিল সবচেয়ে গুরুতর। তবে এ মামলাটিতেও মাত্র এক মাসের মধ্যেই জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে নয়ন।

 

এদিকে এলাকাবাসী বলছে, বছরের পর বছর কেটে গেলেও সাজা না হওয়ায় জামিনে বেরিয়ে এসে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠত নয়ন। প্রতিবার বেরিয়ে আসার পর আরও আগ্রাসী হয়ে উঠত সে। এভাবে জামিনে বেরিয়ে এসেই আবার অপরাধে জড়িয়ে যেত সে।

আইন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের দায়ের করা এফআইআর বা চার্জশিটের ত্রুটিকে কাজে লাগিয়েই সহজে জামিনে মুক্তি পেয়ে যেতো এই অপরাধী।

বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট সঞ্জিব কুমার দাস বলেন, মামলার চার্জশিটে কোনো ত্রুটি থাকলে সেই সুবিধা আসামি পক্ষ পায়।

সহজে জামিন পাওয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র পুলিশের এফআইআর বা চার্জশিটের উপর নির্ভর করে না দাবি করে মামলাগুলো পর্যালোচনায় এনে সহজে জামিন লাভের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।

তিনি বলেন, কোথাও কোনো ঘাটতি থেকে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২০১৫ সালে অপরাধ জগতে প্রথম পা রাখে। এরপর একটি মামলাতেও সাজা হয়নি তার।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও