ঈদকে ঘিরে বাড়ছে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা

০৪ আগস্ট ২০১৯, ০২:৪৩ পিএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২২ পিএম


ঈদকে ঘিরে বাড়ছে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা

টাইমস ডেস্ক:  

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। পশুর হাটগুলোকে ঘিরে মাঠে নেমেছে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির সদস্যরা। তারা গরু ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে মাঠে নেমে অপতৎপরতা শুরু করেছে।

সম্প্রতি অজ্ঞান ও মলম পার্টির ৬২ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে চক্রের আরো শতাধিক সদস্য। অধরা প্রতারক চক্র বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলো এবং গরুর ব্যাপারীদের টার্গেট করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর ৫০ থানা এলাকা ছাড়াও আশেপাশের এলাকা যেমন সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরা, টঙ্গী, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ সাভারেও বিস্তৃত সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের নেটওয়ার্ক।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, কোরবানির পশুর হাটকেন্দ্রিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে নগর গোয়েন্দা পুলিশ কাজ শুরু করেছে। অপরাধীরা যতই কৌশল অবলম্বন করুক না কেন পুলিশ তাদের পিছু ছাড়ছে না। সুতরাং উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত এক মাসে অজ্ঞান পার্টির শতাধিক সদস্য ধরা পড়েছে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। কিন্তু এসব চক্রের পলাতক সদস্যরা কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে রাজধানীতে জেঁকে বসেছে। এরা বাস-ট্রেন ও লঞ্চযাত্রীদের নানা কৌশলে অজ্ঞান করে সঙ্গে থাকা অর্থসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়ার অপতৎপরতায় মেতে উঠেছে।

সম্প্রতি বেশ কয়েকজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। রাজধানীতে কী পরিমাণ সংঘবদ্ধ অজ্ঞান ও মলম পার্টি সক্রিয় আছে তার সঠিক হিসাব পুলিশের কাছেও নেই। তবে পুলিশের ধারণা, একশরও বেশি সদস্য রয়েছে এসব চক্রের। এসব চক্রের অপতৎপরতা প্রতি বছরই ঈদের আগে বেড়ে যায়। ব্যস্ততম মাকের্টগুলোতেও থাকে তাদের পদচারণা। এ ক্ষেত্রে অপরিচিত লোকের দেওয়া কোনো কিছু না-খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি, উত্তর) মশিউর রহমান। পাশাপাশি তিনি জনসচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়,  প্রতিবছর ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব ঘিরে এসব অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। সেই ধারণা থেকে এবার কোরবানির ঈদকে ঘিরে অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের সক্রিয় গ্রুপের তালিকা সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দারা। ধূর্ত এসব অপরাধী একেক সময় একেক এলাকায় অবস্থান করে অপরাধ শেষে আবার দ্রুত অন্যত্র চলে যায়। রাজধানীতে একাধিক গ্রুপের সক্রিয় হওয়ার তথ্য রয়েছে। এসব চক্র কোরবানির হাটের পশুর পাইকারি বিক্রেতাদের টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে।

এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরবে হাজারো মানুষ। এর মধ্যে যারা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, ব্যবসায়ী, এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ভাগ হয়ে কাজ করছে। গাজীপুর, নরসিংদী, চট্টগ্রাম রোড, সিলেট রোড, কুমিল্লা যশোর, সাতক্ষীরা নারায়ণগঞ্জ, সাভারসহ ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে টার্গেট করা ব্যক্তিকে অজ্ঞান করে সবকিছু নিয়ে যায়। এ ছাড়া সায়দাবাদ, গাবতলী, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, কমলাপুর রেলস্টেশন সদরঘাটসহ রাজধানীর বেশকিছু এলাকায়ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের তৎপরতা রয়েছে।

সূত্র জানায়, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ফুটপাত, লঞ্চঘাট, রেল বা বাসস্টেশন, বিভিন্ন মার্কেটের সামনে হকারের ছদ্মবেশে অবস্থান নিয়ে ডাবের পানি, জুস, চা, কফি, পান, খেজুর, ঝালমুড়ি, শক্তিবর্ধক হালুয়া, ক্রিমজাতীয় বিস্কুট, চকোলেট, রঙিন পানীয় ইত্যাদি বিক্রি করে থাকে। আবার কখনও এরা যাত্রীবেশে লঞ্চ, বাস বা ট্রেনে উঠে সরাসরি কারো সঙ্গে সখ্য তৈরি করে অজ্ঞানকারী খাদ্যদ্রব্য খাইয়ে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, কোমল পানীয় কিংবা বোতলজাত খাওয়ার পানির সঙ্গে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহূত ইনসুলিন মিশিয়ে তৈরি করা হয় অজ্ঞান করার রেসিপি। আবার গণপরিবহনে সিটের কাছে ক্লোরোফোম জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ লাগিয়েও অজ্ঞান করার কাজ করা হয়। ঈদ সামনে রেখে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা এলাকা ভাগ করে তাদের অপকর্ম পরিচালনা করছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত ঈদুল ফিতরের আগেই ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ছিনতাইকারী চক্রের একাধিক গ্রুপকে গ্রেপ্তার করে তাৎক্ষণিক সাজা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছিল। এ কারণে গত ঈদে এদের তৎপরতা খুব একটা ছিল না। এর মধ্যে অনেকেই জামিনে বা সাজা ভোগ করে বেরিয়ে এসেছে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এসব চক্রের সদস্যরা ফের একই পেশায় নেমে পড়েছে। বারবার জেলে গেলেও এসব অপরাধী পেশার কোনো পরিবর্তন করে না। এক গ্রুপ জেলে গেলে অন্য গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়। ফলে এসব চক্রের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও।

সূত্রের দাবি, ঈদের আগে অজ্ঞান পার্টির মূল টার্গেট থাকে গরু ব্যবসায়ীরা। সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা গরুর ব্যাপারীদের আগে থেকেই ফলো করে। গরু বিক্রি করে ফেরার পথে তারা শিকার ধরার মিশন নিয়ে মাঠে নামে। গ্রাম থেকে শহরে আসা সহজ-সরল মানুষদের এরা অনায়াসেই চিনতে পারে। তাদের নানা কৌশলে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও