বিভাগীয় পর্যায়ে হেরিটেজ মিউজিয়াম স্থাপনের দাবি উদ্যোক্তাদের

২৭ অক্টোবর ২০১৯, ১২:৫১ পিএম | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম


বিভাগীয় পর্যায়ে হেরিটেজ মিউজিয়াম স্থাপনের দাবি উদ্যোক্তাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁত, বস্ত্র, হস্ত, চারু ও কারু পণ্যের সংরক্ষণে প্রত্যেক বিভাগে হেরিটেজ মিউজিয়াম স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তাঁত ও বস্ত্রশিল্প উদ্যোক্তারা। তারা বিদেশি পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হস্তশিল্প কর্ণার স্থাপন ও তাঁতিদের জন্য ওয়েব-বেজড প্লাটফর্ম তৈরির দাবি জানান। একই সাথে তারা এসব পণ্যের পরিচিতি বৃদ্ধি ও বাজার প্রসারে বছরে একদিন জাতীয় হ্যান্ডলুম দিবস ও সাত দিনব্যাপী হ্যান্ডলুম সপ্তাহ উদ্যাপনের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।


শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত একটি হোটেলে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হেরিটেজ হ্যান্ডলুম ফেস্টিভাল ২০১৯ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে হস্ত ও কারু শিল্প উদ্যোক্তারা এ দাবি জানান। এসএমই ফাউন্ডেশন এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্যাশন ডিজাইনার্স অব বাংলাদেশ (এএফডিবি) যৌথভাবে এ উৎসবের আয়োজন করে।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্যাশন ডিজাইনার্স অব বাংলাদেশ (এএফডিবি) এর প্রেসিডেন্ট মানতাশা আহমেদ। এতে শিল্পসচিব মোঃ আবদুল হালিম, সংস্কৃতি সচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি, তথ্য কমিশনার সুরাইয়া বেগম বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি হস্ত ও কারু পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও রপ্তানির সুযোগ এখনও পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। এ সুযোগ কাজে লাগাতে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসে হস্ত ও কারু পণ্যের স্থায়ী প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। একই সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরেও হস্তশিল্প কর্ণার চালু করা হবে। বছরব্যাপী জামদানি, তাঁত, বস্ত্র, হস্ত ও কারুপণ্যের প্রদর্শনীর জন্য রাজধানীতে একটি স্থায়ী ডিসপ্লে সেন্টার স্থাপন করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

হুমায়ূন আরও বলেন, শিল্পায়নের মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে শিল্প মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তা গড়ে তোলার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। তিনি অর্থায়ন ও পণ্যের বিপণনকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য জামানতবিহীন ঋণ ও বাজার সুবিধা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সাথে আলোচনা করে শিল্প মন্ত্রণালয় কার্যকর উদ্যোগ নেবে। তিনি হস্ত ও কারু শিল্প উদ্যোক্তাদের উত্থাপিত দাবিগুলো যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন এবং এর বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, বাঙালি সংস্কৃতির শেঁকড় ও জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতি গভীর অনুরাগ থেকেই চার দিনব্যাপী এ উৎসব আয়োজন করা হয়। এতে ৪৫টি স্টলে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের তাঁত, বস্ত্র, চারু ও কারুপণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী জামদানি, মিরপুরের বেনারসি শাড়ি, টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি, সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি ও তাঁত বস্ত্র, নকশি কাঁথা, কুমিল্লার খাদি, রাজশাহীর সিল্ক, মণিপুরী তাঁত এবং রাঙ্গামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির তাঁত পণ্য, বাঁশ-বেত, চামড়া ও পাটজাত পণ্য, শতরঞ্জি, পটচিত্র ইত্যাদি ছিল উল্লেখ করার মত।

উৎসবে সরাসরি তাঁত ও বস্ত্রের বুনন প্রক্রিয়া প্রদর্শন করা হয়। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় চিত্রশিল্পী ও ডিজাইনারদের তৈরি আকর্ষণীয় পণ্যও প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হয়েছে। এর দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তা ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উৎসবের আয়োজন ও প্রদর্শনী ঘুরে দেখেছেন। এর ফলে বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী শিল্পপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার সংযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

 


বিভাগ : অর্থনীতি


এই বিভাগের আরও