সীমানা নির্ধারণ জটিলতা: বেলাবতে আড়িয়াল খাঁ নদের খনন কাজ বন্ধ

০২ আগস্ট ২০১৯, ০৬:০৬ পিএম | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪১ এএম


সীমানা নির্ধারণ জটিলতা: বেলাবতে আড়িয়াল খাঁ নদের খনন কাজ বন্ধ

শেখ আব্দুল জলিল, বেলাব থেকে ॥
নরসিংদীর বেলাবতে সীমানা নির্ধারণ জটিলতার কারণে ৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে আড়িয়াল খাঁ নদ এর খনন কাজ। নদের সীমানা নির্ধারণ পূর্বক খননের দাবি জানিয়ে নরসিংদীর জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্থানীয় জমি মালিকদের দেয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ খনন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন গেলে এলাকাবাসী ও জমির মালিক ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, উপজেলার ভাওয়ালের চর এলাকায় সিএস ও আরএস নকশা অনুযায়ী সরকারী খাস জমির উপর দিয়ে নদটি বহমান। কালের বিবর্তনে নদটিতে ভাঙ্গনের ফলে শত শত কৃষকের পৈতৃক কৃষিজমি নদীতে বিলীন হওয়ায় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ নদটির প্রকৃত গতিপথ অনুযায়ী খনন না করে স্থানীয় কৃষকদের পৈতৃক জমির ওপর দিয়ে খনন কাজ শুরুর চেষ্টা করে। এতে শত শত কৃষকের নামে রেকর্ডকৃত প্রায় তিনশ বিঘা জমি খননে পড়ে নদীর দখলে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক সীমানা জটিলতা নিরসন না করে অপরিকল্পিতভাবে নদটি খনন করলে গ্রাম রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ভাওয়ালেরচর গ্রামের অধিকাংশ ভূখন্ড নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে মনে করেন গ্রামবাসি।
সিএস, আরএস খতিয়ান ও নকশা অনুযায়ী নদটি জন্মলগ্ন থেকে যেদিক দিয়ে প্রবাহিত ছিল সেদিক দিয়ে নদ খনন করার দাবি জানান এলাকাবাসী।
জমি রক্ষায় এ সমস্যা সমাধানে এলাকাবাসী বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকল্প পরিচালক, নরসিংদীর জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নরসিংদী, বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী ভূমি কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

স্থানীয়রা আর জানান, আড়িয়াল খাঁ নদটি জন্মকাল থেকেই চরকৃঞ্চপুর গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত ছিল। বিভিন্ন কাগজপত্র ও নকশা মোতাবেক নদীর সঠিক সীমানা ভরাট হয়ে বর্তমানে আবাদী জমিতে রুপান্তরিত হয়েছে। কাল পরিক্রমায় মনোহরদী উপজেলার চরকৃঞ্চপুর গ্রামের আড়িয়াল নদের সীমানায় পলি পড়ে নদটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর প্রবাহ পরিবর্তন হয়ে বেলাব উপজেলার ভাওয়ালেরচর গ্রামের কৃষকদের ফসলী জমির উপর দিয়ে নদটি প্রবাহিত হয়েছে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে। বর্তমানে নদটির পূর্বের সীমানা চরকৃঞ্চপুর ভরাট হয়ে জেগে উঠেছে চর। যা বর্তমানে চরকৃঞ্চপুর গ্রামের লোকজন দখল করে চাষাবাদ করে জিবীকা নির্বাহ করে আসছেন। অন্যদিকে বাঁধের কারণে নদটির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে বেলাব উপজেলার ভাউয়ালেরচর মৌজার উপর দিয়ে গ্রামবাসির নিজস্ব জমির উপর দিয়ে নদটি প্রবাহমান।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ২৪ টি নৌপথ খনন শুরু হয়। ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথে ৮৩ লাখ ঘনমিটার খননের জন্য চুক্তি হয় খুলনা শিপইয়ার্ড লিঃ ও নবারুন ট্রেডার্স লিমিটেডের সঙ্গে। ১শত ১১ কোটি টাকার খননকাজের মধ্যে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পোড়াদিয়া এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদের প্রায় ৪০ কিলোমিটার খনন করা হবে। এর মধ্যে ২৯ কিলোমিটার খনন সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ভ্ওায়ালেরচর, নতুন বাজার, রাধাখালী এলাকার কিছু অংশে খনন বন্ধ রয়েছে। সিএস ও আরএস পর্চা সংক্রান্ত জটিলতাকে ইস্যু করে স্থানীয়রা খননকাজে বাঁধা দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, সীমানা জটিলতা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে জেলা প্রশাসক ও বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বাঁধার কারণে মূলতঃ ঐ এলাকায় নদ খনন বন্ধ রয়েছে। তবে বর্তমানে এ সমস্যা সমাধান হওয়ার পথে। বর্তমানে যেদিক দিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদ প্রবাহমান সেদিকের কিছু অংশ ও যেদিক দিয়ে চর জেগেছে এই দুইদিক দিয়েই নদ খনন করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে নির্দেশনা পেলেই নদটি পুণরায় খনন শুরু করা হবে আশা করছি।

এ ব্যাপারে বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা শরমিন বলেন, জেলা প্রশাসক কিংবা ইউএনও কার্যালয় থেকে বিআইডব্লিউটিএ কে নদ খননের জন্য কোনপ্রকার বাঁধা দেয়া হয়নি। বিআইডব্লিউটিএ ভুল পথে অগ্রসর হয়েছিল। আমরা শুধু বলেছি সীমানা নির্ধারণ করে যাতে নদ খনন করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন হিসেবে এলাকার মানুষ আমাদের কাছে আসেন, আমাদের আগে জনগণের স্বার্থটা দেখতে হবে। তবে বর্তমানে ঐ সমস্যা সমাধানের পথে।
তিনি বলেন, আমরা বেলাব ও মনোহরদী এই দুই উপজেলার লোকদের নিয়েই সীমানা নির্ধারণ কমিটি করে দেব। এই কমিটিই বসে আলোচনার মাধ্যমে সীমানা জটিলতা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করবেন। আশা করছি দু’ এক সপ্তাহের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদ খনন শুরু করতে পারবে।