বেলাবতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে স্লুইচ গেইট ও খাল বন্ধ, পানির নীচে তিন হাজার একর ফসলি জমি

২৫ আগস্ট ২০১৯, ০৪:১৯ পিএম | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৫, ০২:২০ পিএম


বেলাবতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে স্লুইচ গেইট ও খাল বন্ধ, পানির নীচে তিন হাজার একর ফসলি জমি
শেখ আব্দুল জলিল ॥
নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নে আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভরাট হয়ে গেছে খাল, বন্ধ হয়েছে স্লুইচ গেইট। ইউনিয়নের ৫টি গ্রামজুড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ব্যবসার কারণে পানি নিষ্কাষন বন্ধ হওয়ায় এরই মধ্যে শত শত কৃষকের প্রায় তিন হাজার একর ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে জলাবদ্ধ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা নতুন করে রোপা আমন সহ অন্যান্য ফসল আবাদ করতে পারার আশংকা করছেন।

স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, সরকারী উদ্যোগে আড়িয়াল খাঁ নদের খনন কাজ চলমান। এ খনন কাজে উত্তোলন করা বালু মাটি ফেলা হচ্ছে নদের তীরে। আর এসব বালু অবৈধভাবে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার জন্য উত্তোলন করছে স্থানীয় একাধিক চক্র ও জমির মালিক। 
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের বেড়িবাধ বেষ্টিত গ্রাম চর ছায়েট, চর কাশিমনগর, চর লতিফপুর, রেজাই লতিফপুর, রাজা রামপুর এলাকার প্রভাবশালী একাধিক চক্র ও কিছু জমির মালিক অবৈধভাবে আড়িয়াল খাঁ নদ খননের এসব বালু উত্তোলন করছেন। উত্তোলন করা এসব বালু বিক্রিও জন্য অপরিকল্পিতভাবে রাখায় ভরাট হয়ে গেছে পানি নিস্কাষনের খাল ও চর ছায়েট দক্ষিণ পাড়া স্লুইচ গেইট। ফলে আড়িয়াল খাঁ নদ ও বৃষ্টির পানি নিস্কাষন না হওয়ায় এলাকার শত শত কৃষকের প্রায় তিন হাজার একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে  জমির ধান, কলা, আঁখ, কাকরুলসহ বিভিন্ন ফসলাদী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া পানি নিস্কাষন না হতে পেরে কৃষকদের ফসলী জমির পাশাপাশি বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তায় পানি ঢুকে পড়ায় জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পানি নিস্কাষন না হয়ে জমাটবদ্ধ হওয়ার কারণে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু কিশোরসহ নানা বয়সের মানুষ। পানি নিস্কাষন সংক্রান্ত এ সমস্যা সমাধানের দাবিতে সম্প্রতি এলাকাবাসী পানিতেই নেমে মানববন্ধন করেছেন। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার পানি নিষ্কাষন সমস্যা সমাধানের জন্য যোগাযোগ করা হলে মৌখিক আশ্বাস দিয়েও তারা তা সমাধান করছেন না। পানি নিস্কাষনের স্লুইচ গেইট ও খাল হতে অবৈধভাবে রাখা এসব বালু সরিয়ে নিলে পানি নিস্কাষন চালু হবে। এতে জলাবদ্ধতামুক্ত হলে রক্ষা হবে শত শত একর ফসলী জমি।


বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম মোস্তুফা গোলাপ বলেন, কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী আড়িয়াল খাঁ নদ হতে বালু তুলে স্লুইচ গেইট ও খাল বন্ধ করে দেয়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এই চরাঞ্চলের কয়েক হাজার একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ হাজারো কৃষক নতুন ফসল আবাদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। এলাকার কৃষকদের বাঁচাতে আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বালু ব্যবসায়ী ও জমির মালিক বরজু মিয়া, খালেক মিয়া, আফতাব উদ্দীন বলেন, স্লুইচ গেটের সামনে আমার নিজস্ব জমি। আমি আমার সেই নিজের জমিতে বালু ভরাট করেছি, এখানে সরকারী কোন জায়গা নেই। এ কারণে স্লুইচ গেইট দিয়ে পানি না গেলে আমি কী করবো?  তারা সরকারী জায়গা দিয়ে খাল খনন করে পানি নিস্কাষন করুক। আমার জায়গা দিয়ে আমি দিবো না।

চর ছায়েট গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন আসাদ এবং শামসুল হক বলেন, এ জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা বেলাব উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে অবহিত করি। তারা দুইতিন দিনের মধ্যে পানি নিস্কাষনের উদ্যোগ নেবেন বলে আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। 

যোগাযোগ করা হলে বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা শরমিন বলেন, একটি কমিটি গঠন করে সরেজমিনে ঐ এলাকায় গিয়ে পানি নিস্কাষনের উদ্যোগ নেয়া হবে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যদি কেউ বালু দিয়ে পানি নিস্কাষনের রাস্তা ভরাট করে থাকেন তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।