মাধবদীতে দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি মামলায় জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কারাগারে 

২৪ জুন ২০২১, ০৮:২৭ পিএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৮ পিএম


মাধবদীতে দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি মামলায় জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কারাগারে 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর মাধবদীতে আওয়ামীলীগের সভা শেষে দুপক্ষের সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করেছিলেন। অপর পক্ষের করা মামলার আসামী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে যান। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দুপুরে নরসিংদীর মাধবদীর আমলী আদালত তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার নরসিংদীর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে এসেছিলেন মোজাম্মেল মিয়ার করা মামলার ৭ আসামীর মধ্যে ৬ জন। তারা হলেন, মো. আনোয়ার হোসেন, মাসুদ রানা, মো. দেলোয়ার, শরীফ হোসেন, সুমন মিয়া ও মো. মাসুদ। আত্মসমর্পণ করে জামিন চাওয়া ৬ জনের মধ্যে মো. আনোয়ার হোসেন বাদে বাকী পাঁচজনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। এই মামলার প্রধান আসামী গুলিবিদ্ধ মো. জাকারিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের জন্য আসতে পারেননি। 


গত ১৬ জুন বুধবার রাত ৮টার দিকে মাধবদী পৌরসভা মোড়ে আওয়ামী লীগের সভা শেষে বের হওয়ার সময় একপক্ষের হামলায় অপরপক্ষের দুজন গুলিবিদ্ধ হন। এই ঘটনার ৩৪ ঘণ্টা পর ১৮ জুন শুক্রবার ভোরে মাধবদী থানায় উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করেন। তবে ঘটনার ৮ দিন পেরিয়ে গেলেও উভয় মামলার কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।


এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন মাধবদী পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও সদর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো.জাকারিয়া (৩৯) ও মাধবদীর নূরালাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্যসচিব আবুল কালাম (৩০)। গুলিবিদ্ধ দুজনই মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধানের বিরোধীপক্ষের বলে পরিচিত।


মাধবদী থানা পুলিশ জানায়, দুইজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিককে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন গুলিবিদ্ধ জাকারিয়ার বড় ভাই নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন।

এ মামলার অপর আসামিরা হলেন আবদুল আহাদ (২৫), মোজাম্মেল (৩৮), মাসুদ রানা ওরফে জুনিয়র মাসুদ (২৬), শাহিন মিয়া (২৮), আতাউর ভূঁইয়া (২৮), আকরাম হোসেন (২৮), সাকিব (২৪), নুর মোহাম্মদ (৩০), সেন্টু শীল (২৫) ও মনিরুজ্জামান(৪০)। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ জনকে আসামী করা হয়।

অন্যদিকে মেয়র গ্রুপের কর্মী ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোজাম্মেল মিয়া বাদী হয়ে গুলিবিদ্ধ জাকারিয়াকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের নামে আরও একটি মামলা করেন। এতে জাকারিয়ার বড় ভাই নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেনকেও আসামী করা হয়। ওই মামলার এজাহারে মোজাম্মেল মিয়াকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া এবং তার এক আত্মীয়কে গালে ছুরি দিয়ে আঘাত করার অভিযোগ আনা হয়।


জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব হোসেন জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন দুপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে গিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মো. আনোয়ার হোসেন গুলিবিদ্ধ জাকারিয়ার বড়ভাই এবং এই ঘটনায় করা মামলার বাদী।


মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান জানান, মো. আনোয়ার হোসেন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে গিয়েছিলেন। আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। পাল্টাপাল্টি দুই মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ওই দুই মামলা সম্পর্কিত প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, দলের আসন্ন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে ওই দিন বিকেলে মাধবদী শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে নবগঠিত থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জি এম তালেব হোসেন ও সদস্যসচিব মোহাম্মদ আলী। সভা চলাকালে মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান দলবল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় তাঁকে কেন এই সভায় আমন্ত্রণ করা হয়নি, তা নিয়ে তিনি হইচই করেন। একপর্যায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পৌরসভা মোড়ে তিনি তাঁর পক্ষের লোকজন নিয়ে অবস্থান নেন। পরে এ হামলার ঘটনার ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী নেতাকর্মীরা জানান, বুধবার রাত পৌনে আটটার দিকে সভা শেষে নেতা–কর্মীরা ফিরে যাওয়ার সময় মাধবদী পৌরসভা মোড়ে পাঁচদোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহর ওপর হামলা চালিয়ে তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় আসামি শাহিন মিয়া তাঁকে গুলি করলে, তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিনি গাড়ি থেকে বের হয়ে কোনোরকম পালিয়ে বাঁচেন। পরে জাকারিয়া ও আবুল কালাম পৌরসভার মোড় দিয়ে যাওয়ার পথে মেয়রের নির্দেশে তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয় এবং মেয়র তাঁর পিস্তল দিয়ে জাকারিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েকটি গুলি চালান। এ সময় জাকারিয়ার ডান পায়ে গুলি লাগে। একই সময় মেয়রপক্ষের আবদুল আহাদ আবুল কালামকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তাঁর পায়ে গুলি লাগে।



এই বিভাগের আরও