নরসিংদীতে ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তারকৃত আসামীর জবানবন্দি

২২ আগস্ট ২০২০, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৭ পিএম


নরসিংদীতে ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তারকৃত আসামীর জবানবন্দি
নিহত অপু দাস

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর হাজীপুরে অপু দাস (৩৪) নামের এক ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে নিহতের ছোট ভাই শিবু দাস বাদী হয়ে চারজনকে আসামী করে নরসিংদী মডেল থানায় মামলাটি করেন। নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার দত্ত চৌধুরী এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) দুপুর পৌনে একটার দিকে হাজীপুর ইউনিয়নের দাসপাড়া এলাকায় দিনেদুপুরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত অপু দাস ওই এলাকার মৃত অনিল দাসের ছেলে। হাজীপুর ব্রিজ–সংলগ্ন একটি ভিডিও এডিটিংয়ের দোকান ছিল তাঁর। স্ত্রী ও চার বছরের এক কন্যা সন্তান আছে তাঁর।

মামলায় আসামী করা হয়েছে, নরসিংদী শহরের দত্তপাড়া এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে নুরুল ইসলাম (২৫), মৃত মো. নবীর ছেলে মো. ইসু (২৫), মানিক মিয়ার ছেলে মো. সাদ্দাম (৩০) ও ফজলুল হকের ছেলে মো. সাজন (২৬)। তাদের মধ্যে নুরুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনার পরপরই আটক করে পুলিশ। 

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, অপুদের বাড়ির অদূরে একটি সাউন্ডবক্সের দোকানের সামনে এর মালিক মানিক দাসের সঙ্গে ওই চার আসামীর কথা কাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে স্থানীয় কাঠমিস্ত্রিদের দোকান থেকে নকশা কাটার বাটাল ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র নিয়ে তারা মানিককে ধাওয়া দেয়। ধাওয়া খেয়ে অপু দাসের বাড়িতে ঢুকে পড়েন মানিক এবং তাঁদের বাড়ির ছাদে আশ্রয় নেন। ওই সময় তারাও ছাদে উঠতে চাইলে তাদের বাধা দেন অপুর ছোট ভাই শিবু দাস। এ সময় তাঁর বাম পায়ে বাটাল দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়।

এমন ঘটনায় হতভম্ব হয়ে অপু দাসের স্ত্রী মুঠোফোনে কল করে অপুকে বাড়িতে আসতে বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে ফিরে অপু দাস ‘কী হয়েছে জানতে চাইলে’দুর্বৃত্তদের সঙ্গে তাঁরও কথা–কাটাকাটি হয়। এরপরই নুরুল ইসলাম তার হাতে থাকা ওই বাটাল দিয়ে অপুর বুকের বাঁ পাশে রক্তাক্ত জখম করে। ওই সময় ২ নম্বর আসামী তার হাতে থাকা চাকু দিয়ে অপুর ডান হাতের কবজিতে আঘাত করে। আর অন্য দুই আসামী তাকে এলোপাতারি কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এ সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে স্থানীয় একটি বেকারির মালিক আল আমিন (৪৫) এবং দিবাকর দাস (৪০) নামের দুইজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক অপু দাসকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, শুক্রবার দুপুরে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহত অপু দাসের একমাত্র কন্যা চার বছরের আনিকা অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলা করছে। ঘটনার কোন রেশ তার চোখে-মুখে নেই। অন্যদিকে শোকার্ত অপুর মা  ও স্ত্রী বিথী দাস আগত প্রতিবেশী নারীদের সঙ্গে আহাজারি করছেন। কোন শান্ত্বনাই তাদের চোখের জল থামাতে পারছে না।

নিহতের মা সবিতা রানী দাস জানান, ঘটনার দিন দুপুরে তারা চারজন আমাদের বাড়িতে ঢুকেই জানতে চায় মানিক কোথায়? মানিককে তো আমরা দেখিনি তাই বলতেও পারছিলাম না। তারা আমাদের সামনেই ছোট ছেলে শিবুকে আঘাত করতে শুরু করে। এরই মধ্যে মানিক আমাদের ছাদ থেকে অন্য ছাদে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। আমি এত করে তাদের বললাম, আমার সাথে আসো, আমি তোমাদেরকে মানিকের বাড়িতে নিয়ে যাই। কিন্তু তারা সবাই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল, আমার কথা শুনলো না। তারা আমার অপুকে মেরেই ফেললো। এখন আমার ছেলে বউ আর তাদের ছোট মেয়েটির কি হবে? আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

ওই সাউন্ডবক্সের দোকানের সাইনবোর্ড থেকে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে মানিক দাসের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, ওই চার আসামীর সঙ্গে আমার কোনরকম লেনদেনের সম্পর্ক ছিল না। সাউন্ডবক্সের ওই দোকান তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করার জন্য আমি ডিম কিনতে আমার দোকান সংলগ্ন মুদির দোকানে গিয়েছিলাম। ওই সময় দেখি একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা থামিয়ে আমার দোকানের সাটারে ঠেসে ধরে একজনকে মারধর করা হচ্ছে। আমি এগিয়ে গিয়ে ঘটনা জানতে চাই। এতে তারা আমার ওপরও ক্ষিপ্ত হয়ে পার্শ্ববর্তী একটি কাঠমিস্ত্রির দোকান থেকে বাটাল নিয়ে আমাকে ধাওয়া দেয়। ধাওয়া খেয়ে অপুদের বাসার ছাদে আশ্রয় নিই। পরে অন্য ছাদে লাফ দিয়ে কোনরকমে পালিয়ে আসি। পরে জানতে পারি, তারা অপু দাসকে মেরে ফেলেছে। ঘটনার সময় তারা সবাই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল। আমি আসামীদের কাউকে চিনি না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নরসিংদী মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. মেহেদী হাসান জানান, চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির প্রধান আসামী নুরুল ইসলাম হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে নরসিংদীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদীর আদালতে তিনি এই জবানবন্দি দেন। এ সময় নুরুল ইসলাম আদালতে অপু দাস হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার দত্ত চৌধুরী জানান, এই ঘটনায় চারজনকে আসামী করে মামলা করেছেন নিহতের ছোটভাই শিবু দাস। মামলা হওয়ার পর নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্য তিন আসামী পলাতক, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।



এই বিভাগের আরও