নরসিংদীতে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা

২৭ আগস্ট ২০২০, ০১:১৩ এএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৩ পিএম


নরসিংদীতে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা
সাংসদ মো. নজরুল ইসলাম হিরু

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীতে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে নরসিংদী সদর ১ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম হিরুসহ দুইজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন এক ব্যক্তি। বুধবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে নরসিংদীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শহরের ভেলানগর এলাকার মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে মোহাম্মদ মোস্তাক আহাম্মদ বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিয়েছেন। এই মামলার অপর আসামি করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা এসএম কাইয়ুমকে।

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের উদ্যেগে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এক গণভোজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। গণভোজ উপলক্ষে ১৪ আগষ্ট দিবাগত রাতে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের চারতলা ভবনের নিচতলার সামনে তিনটি গরু ও দুটি খাসি জবাই করা হয়। গণভোজে মামলার বাদিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও সকল ধর্ম ও বর্ণের লোকজন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অংশ নেয়।

এ গণভোজকে কেন্দ্র করে গত ১৯ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে শহরের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা বীরপুর সিএনজি স্ট্যান্ডে এক সমাবেশ করে সদর আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু হিন্দু ধর্মের লোকজনকে উদ্দেশ্য করে উস্কানিমূলক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছেন।  

ওই সমাবেশে সাংসদ তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠন আয়োজিত ১৫ আগস্টের শোক দিবসের গণভোজের জন্য নরসিংদীর হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য ভঙ্গ করে হিন্দুদের মন্দিরের দরজার মধ্যে, দরজার কাছেই হিন্দু মন্দিরের পাশে গরু জবাই করা হয়েছে। যেটা হিন্দু ধর্মের যারা আছেন, তারা অত্যন্ত গর্হিতকর অন্যায় বলে মনে করে। মুসলমানদের জন্যে ঠিক আছে, কিন্তু কোন মুসলমান যদি হিন্দু মন্দিরের মধ্যে গরু নিয়ে জবাই করে সেটা আল্লাহ মাফ করেন না। এখানে যদি কোন আলেম থেকে থাকেন, আমি ভুল করে  থাকলে আমাকে চ্যালেঞ্জ করেন? আমাকে সংশোধন করেন। হিন্দু মন্দির বা অন্য কোন ধর্মের উপাসনা নিয়ে সেটার পবিত্রতা নষ্ট করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। কিন্তু শহর আওয়ামী লীগ এই কাজ করেছে।’

মামলার বাদি মোহাম্মদ মোস্তাক আহাম্মদ বলেন, আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা এসএম কাইয়ুমের প্ররোচনায় ও পরামর্শে সাংসদ মো. নজরুল ইসলাম হিরু মিথ্যা তথ্য দিয়ে যে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন এতে  আমাদের নরসিংদীর শত বছরের হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে। এক ধর্মের লোকজনের প্রতি অন্য ধর্মের লোকজনের ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। একজন সচেতন দায়িত্বশীল লোক হয়ে তিনি এধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। যা আওয়ামী লীগের অসাম্প্রায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। 

বাদি পক্ষের আইনজীবী ওবায়দুল হক জুয়েল বলেন, আমাদের মামলাটি বিজ্ঞ আদালত আমলে নিয়েছেন এবং নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসিকে আগামি ১২ অক্টোবরের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।