শিবপুরে বালু ফেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতে তরুণের মৃত্যু

২৭ মার্চ ২০২১, ০৮:১৩ পিএম | আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০০ এএম


শিবপুরে বালু ফেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতে তরুণের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীর শিবপুরে একটি ইলেকট্রনিক পার্ক প্রকল্পের মাঠ ভরাটের বালু ফেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে মো. জসিম মিয়া (২৪) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৭ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে সকাল ৯টার দিকে শিবপুরের আইয়ুবপুর ইউনিয়নের ঘাসিরদিয়ার শাষপুর এলাকায় ওই প্রকল্পে হামলার সময় এই ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।


ছুরিকাঘাতে নিহত মো. জসিম মিয়া ওই প্রকল্পটিতে বালু ভরাটের টেন্ডার পাওয়া মো. কাবিল মিয়ার ছেলে।

এই ঘটনায় শনিবার দুপুরে চারজনের নাম উল্লেখসহ মোট ৮ জনকে আসামী করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেছেন নিহতের চাচা রমজান মিয়া। চার আসামী হলেন, শিবপুরের কোদালিয়া গ্রামের ফজলু মিয়ার ছেলে ওসমান মিয়া (৪৫) ও কামাল মিয়া (৩৬), ওসমান মিয়ার ছেলে দৌলত মিয়া (২০) এবং তাজুল ইসলামের ছেলে মাইন উদ্দিন (১৯)। মামলার পরই প্রধান আসামী ওসমান মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।


পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ করেই কয়েকজন নারীসহ ৮ জন ব্যক্তি প্রকল্প এলাকায় ঢুকে পড়েন। ওই সময় ভেতরে প্রবেশ করা ১০/১২টি বালুভর্তি ড্রামট্রাকের কাঁচ ভাঙচুর করতে থাকেন তারা। এ সময় বালু ফেলার শ্রমিকরা ছাড়াও ঠিকাদার পক্ষের কয়েকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনা কি জানতে সেখানে এগিয়ে গেলে ঠিকাদার পক্ষের রমজান মিয়া ও জসিম মিয়ার সঙ্গে বালু ফেলা নিয়ে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা জসিমকে টেনে হিঁচড়ে ওই প্রকল্প এলাকার বাইরে নিয়ে যায়। পরে তাঁর পেট ও হাতের তিন জায়গায় ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান তারা।

মামলার বাদী ও নিহতের চাচা রমজান মিয়া জানান, এক পর্যায়ে বাইরে গিয়ে দেখি, জসিমের পেটের দুই জায়গায় ও হাতে ছুরিকাঘাত করছেন ওসমান মিয়া। পরে তারা পালিয়ে গেলে আমরা কয়েকজন মিলে তাকে একটি গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠাই। প্রথমে তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে তাদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। থানায় বসে আমরা যখন মামলা লিখছিলাম তখনই জসিমের মৃত্যুর খবর পাই আমরা। এর আগেও বিভিন্ন সময় বালু ফেলা বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা লেগেছিল।


এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শিবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মেজবাহ উদ্দিন, শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান ও আইয়ুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান সরকার প্রমুখ।

  
ওই প্রকল্পটির ইনচার্জ মো. নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সাল থেকে শিবপুরের আইয়ুবপুর ইউনিয়নের ঘাসিরদিয়ার শাষপুর এলাকায় একটি শিল্প গ্রুপের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। তখন থেকেই এই প্রকল্পে বালু ফেলে মাঠ ভরাটের কাজ করতে চেয়েছিলেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন ঠিকাদার। তাদের মধ্যে কাবিল মিয়া নামের একজন ঠিকাদারকে বালু ফেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই থেকেই বালু ফেলার কাজ চেয়ে না পাওয়া অন্য ঠিকাদাররা তার সঙ্গে নানাভাবে ঝামেলা করে আসছিল। এসব ঝামেলা সামলেই কাবিল মিয়া ২০১৩ সাল থেকে এই প্রকল্পে বালু ফেলে আসছেন। এরই মধ্যে প্রকল্পটিতে মোট ৮০ বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ৬০ বিঘা জমিতে বালুভরাট করা হয়ে গেছে। এসবের জের ধরেই আজ সকালে এই হামলা ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে।


শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, একটি প্রকল্পের মাঠ ভরাটের বালু ফেলা নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই এই হামলা ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। মামলা হওয়ার পরপরই অভিযুক্ত প্রধান আসামী ওসমান মিয়াকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি আমরা। অন্য আসামীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।  

 



এই বিভাগের আরও